বাংলাদেশের তরুণদের নাসার অ্যাপস চ্যালেঞ্জ জয়ের গল্প
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯![Tastatur und Bildschirm mit Programmiercode und Binärcode](https://static.dw.com/image/46620082_800.webp)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ও জাপানের তিনটি দলকে হারিয়ে এই গৌরব অর্জন করে দলটি৷ ‘বেস্ট ইউজ অব ডাটা' ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা৷ এমন বিজয়ের স্বাদ এই প্রথম পেল বাংলাদেশ৷
এছাড়া ‘বেস্ট ইউজ অব হার্ডওয়ার' ক্যাটেগরিতে শীর্ষ দশ-এ জায়গা করে নিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘প্ল্যানেট কিট'৷ এর আগে সর্বোচ্চ অর্জন ছিল ‘পপুলার চয়েজ' ক্যাটেগরিতে শীর্ষ ১০-এ থাকা৷ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সেই সাফল্য পেয়েছিল৷
চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নাসায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ‘অলিক'এর চার সদস্য ও তাঁদের মেন্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী৷
সেরা হওয়ার গল্প
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজেদের সেরা হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন ‘অলিক'-এর ক্যাপ্টেন আবু সাবিক মাহাদী৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমবার ২০১৬ সালে আমরা দুইজন এটাতে অংশ নিয়েছিলাম৷ কিছু করতে পারিনি৷ ২০১৭ সালে অংশই নিইনি৷ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ২০১৮ সালের প্রতিযোগিতার জন্য৷ তবে এবার টিমে দুই জন নয়, ছিলাম চারজন৷ সবাই মিলেই এবার জিতেছি নাসার ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ'৷ আর আমাদের সঙ্গে মেন্টর হিসেবে ছিলেন বিশ্বপ্রিয় স্যার৷''
তিনি বলেন, তাঁদের প্রকল্পের নাম ছিলো ‘লুনার ভিআর' - যা একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ৷ নাসা প্রদত্ত বিভিন্ন ডাটা ব্যবহার করে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে৷ অ্যাপটির মাধ্যমে নাসা আপোলো ১১ মিশনের ল্যান্ডিং এরিয়া ভ্রমণ, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা এবং চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালভাবে আবর্তন করা যাবে, যেটা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কাজে আসবে৷
আবু সাবিক মাহাদী শাবিপ্রবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থী৷ দলের অন্য তিন সদস্য হলেন, একই বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী মঈনুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০১৫ -২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-২০১৪ সেশনের এস এম রাফি আদনান৷
মেন্টর শিক্ষক হিসেবে ছিলেন শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী৷
নওগাঁ জেলার কোমায়গাড়ির ছেলে আবু সাবিক মাহদী নটরডেম কলেজ, বগুড়া জেলার নেপালতলীর ছেলে কাজী মঈনুল ইসলাম বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সাতক্ষীরা জেলার কোমরপুরের ছেলে এস এম রাফি আদনান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও জামালপুর জেলার ভোকেশনাল মোড়ের ছেলে সাব্বির হাসান জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করে শাবিপ্রবিতে ভর্তি হন৷
অলিকের মেন্টর অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার খবর আমরা জানতাম৷ নাসার হয়ে বাংলাদেশে কাজ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস- বেসিস৷ আমাদের টিম সেখানে অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়৷ বেসিস শীর্ষ আটটি টিমকে সিলেক্ট করেছিল৷ তার মধ্যে আমরাও ছিলাম৷ সেখান থেকে নাসার মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই৷ এটা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলবে বলেই আমার বিশ্বাস৷''
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
টিমের পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে আবু সাবিক মাহাদী জানান, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, গেম এবং ভিস্যুয়াল ইন্টারএক্টিভ নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলে আমরাই তো নতুন৷ কিন্তু আমরা শুরু থেকেই অনেক বেশি জানার চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি কীভাবে আমরা আন্তর্জাতিক মানের অ্যাপস তৈরি করতে পারি৷ এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছি৷ নিজেরাই নিজেদের কাজকে সমালোচনা করেছি এবং অন্যদেরও সমালোচনার সুযোগ দিয়েছি৷ আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট গেম স্টুডিওর কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি৷ তরুণ যারা কাজ করতে চায় তাদের উচিত লেগে থাকা৷ তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারকে বলবো, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো৷ আমাদের উচিত, স্কুল পর্যায় থেকেই ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আগ্রহী করে তোলা, তাহলে ভালো ফল মিলবে৷''
সরকারের প্রতিক্রিয়া
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রী হওয়ার আগে আমি যখন বেসিসের সভাপতি ছিলাম তখন এই উদ্যোগটা নেই৷ এর আগেও ব্যক্তি পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া হতো৷ আমি নিজে নাসার সঙ্গে কথা বলে বেসিসকে সম্পৃক্ত করেছি৷ নাসায় একজন বাঙালি আছেন৷ তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেছেন৷ বাংলাদেশের তরুণরা যে ট্যালেন্টেড সেটা এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে৷ এটা প্রমাণ হওয়ার দরকার ছিল৷ এখন অন্য শিক্ষার্থীরাও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে৷ আমরা অভিভাবক হিসেবে যেটা পারি, সেটা হচ্ছে, তাদের পথটা তৈরি করে দিতে৷ সেই কাজটাই আমরা করেছি৷ তরুণরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছে৷''
নিজেদের আয়োজন আর বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ৭২টি দেশ থেকে দুই হাজার ৭৯৫টি দল অংশগ্রহণ করেছিল৷ শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে শতাধিক দল অংশগ্রহণ করে৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নসহ সেরা দশের খেতাব অর্জনে সক্ষম হয়েছে আমাদের সন্তানরা৷ এতে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের দেশে ট্যালেন্টের অভাব নেই৷ এর আগেও বাংলাদেশ থেকে অনেকবার নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে অনেকগুলো দল অংশগ্রহণ করেছিল৷ আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে এ অর্জন সত্যি বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এআর, ভিআর, ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে আমাদের সন্তানরা প্রস্তুত৷''