নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১ ডিসেম্বর ২০১৮
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বারোটি দল পাঠানোর এবং স্থানীয়দের অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর৷ বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল আশঙ্কা করছে যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিতে পারে৷ নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের ‘গায়েবি' মামলায় গ্রেপ্তার এবং হয়রানিরও অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলো৷ ফলে, নির্বাচনের সময় কিছুটা ‘নিরপেক্ষ পরিবেশ' পেতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যাতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে সেই দাবি করে আসছিল বিরোধী দলগুলো৷
নৌকা আর ধানের শীষে আস্থা
নিজের দলের চাইতে বাংলাদেশে বহু রাজনীতিকরই আস্থা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে৷ তাই বড় দুই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যেতে চান এসব দলের নেতারা৷ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতীকের কারবার দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
৩৯-এ ২০
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল৷ এর মধ্যে ২০টির সম্পর্ক আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জোটে৷ এদের অনেকেই দল দু’টির প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ কেউ কেউ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিজের প্রতীকেই নির্বাচন করতে চায়৷ আবার কোনো কোনো দলের নেতাদের একটি অংশ নিজের দলের প্রতীকে ও অন্য অংশ বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নৌকায় যারা
১৫ নভেম্বর ছিল কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়, তা নিশ্চিত করার শেষ দিন৷ সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা চিঠিতে মোট ১৫টি দলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা আটটি৷
ছবি: Mustafiz Mamun
থাকছে ইনু-মেননের দল
হাসানুল হক ইনু বর্তমান আওয়ামী লীগের জোটের সরকারের মন্ত্রী৷ আগেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন৷ এবারও তাঁর দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নৌকায় নির্বাচন করবে৷ একই কথা প্রযোজ্য আরেক বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রেও৷
ছবি: privat
আরো যারা
এছাড়া নৌকায় আরো যেসব দল নির্বাচন করবে তারা হলো, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির তরিকত ফেডারেশন, দীলিপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, আরশ আলীর গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি৷
ছবি: bdnews24
লাঙল ও কুলা
জাতীয় পার্টি নিজস্ব প্রতীক লাঙল নিয়ে নির্বাচনে করবে৷ বিকল্পধারা নিজস্ব প্রতীক কুলায় নির্বাচন করতে চায়৷ তবে তারা কিছু আসনে নৌকাও চায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ তাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টেরও মুক্তিজোট ও বিজেপি (মতিন) নামে দুটি নিবন্ধিত দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ (ফাইল ছবি)
ছবি: picture-alliance/dpa
অনিবন্ধিত দলগুলো
আওয়ামী লীগের প্রতীকে যেসব অনিবন্ধিত দলের নেতা নির্বাচন করবেন সেগুলো হলো, গণ আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি৷
ছবি: bdnews24.com
ধানের শীষে যারা
৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১১টি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে৷ ১৫ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঐক্যফ্রন্ট ধানের শীষে
ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে যে, তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে৷ ঐক্যফ্রন্টের নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের দল জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ৷ অনিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও অংশ নেবেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে৷ সম্প্রতি জোটে যোগ দিয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া৷
ছবি: bdnews24.com
বিশ দলীয় জোটও আছে
বিএনপির জোটের নিবন্ধিত দল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, বিজেপি, জাগপা ও মুসলিম লীগ ধানের শীষে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে৷ জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় তাদের নেতারাও তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে৷
ছবি: bdnews24.com
দ্বি-দলীয় রাজনীতি
নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ প্রায় অর্ধেক নিজের প্রতীকে অংশ নেবে নির্বাচনে৷ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘‘দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বাম দলগুলোর ব্যর্থতা৷ এছাড়া দুর্বৃত্ত ও কালো টাকার মালিকরা নির্বাচনে আসে দুই দলের হয়ে৷ তারাই জয়ী হয়৷ এখানে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই৷’’
ছবি: bdnews24.com
10 ছবি1 | 10
তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি দেশটিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে৷ তার বদলে দুই সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে তারা, যারা নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে৷ প্রতিবেশি দেশ ভারতও বাংলাদেশ সরকার না চাইলে কোন ধরনের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হয় সেদিকে নজর ছিল অনেকের৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যে বারোটি দল পাঠাচ্ছে, তাতে প্রতিটি দলে দু'জন করে সদস্য থাকবেন বলে জানা গেছে৷ তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা উইলিয়াম ম্যোলার৷
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে এটি একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়৷ আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অর্থায়ন করছি যারা সেরকম একটি নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা করছে৷''
সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় হয়রানি এবং ভয়ভীতি এবং হুমকি প্রদর্শনের কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম হয়েছে বলে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে সেসবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ম্যোলার বলেন, ‘‘আমরা তখনই সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি, এবং আশা করছি জাতীয় নির্বাচনের সময় সেরকম কিছু ঘটবে না৷''
‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’
00:44
মার্কিন দূতাবাসের এই রাজনৈতিক কর্মকর্তা আরো জানিয়েছে যে, ব্যাংককভিত্তিক ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস' প্রায় ত্রিশ সদস্যের একটি স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দল পাঠাচ্ছে৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগ এবং সুইস সরকার যৌথভাবে ১৫,০০০ বাংলাদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষককে অর্থায়ন করবে৷
তবে, ম্যোলার এটাও স্বীকার করেছেন, স্থানীয় এই পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও দেশটির সব ভোটকেন্দ্র হয়ত তাদের পক্ষে পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে না৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা দশকোটির বেশি৷ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চল্লিশহাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে৷