হিংসার আবহে বাংলাদেশের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেলেও আওয়ামী লীগের বিপদ কাটেনি৷ বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছে বিরোধী বিএনপি ও তার শরিক দলগুলি৷ এ পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? কী বলছে পত্র-পত্রিকাগুলি?
বিজ্ঞাপন
গণতন্ত্রের শর্ত অনুযায়ী, বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনি ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ পাশাপাশি এটাও ঠিক যে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও অন্যান্য বিরোধী নেতা-নেত্রীদের আলোচনার টেবিলে আনতে পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে ভারতও চেষ্টার কসুর করেনি৷ কিন্তু সরকার ও বিরোধীপক্ষ নিজেদের অবস্থানে বরাবর অনড় থেকে গেছে৷ ফলে নির্বাচন হয়েছে একতরফা৷ পরিণাম – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ কোনো নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠায়নি৷ ভারত অবশ্য পাঠিয়েছে৷ বলেছে, বাংলাদেশের সংকট কাটাতে সর্বস্তরের জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খোঁজা উচিত ছিল৷ দরকার ছিল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন৷ ভারত বরাবরই এই অবস্থান নিয়ে এসেছে, আর এখনও তাই মনে করে৷
নির্বাচন পরবর্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কম হবে বলে মনে করে না দিল্লি৷ বরং সমস্যাপীড়িত নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল হবে৷ খতিয়ে দেখতে হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো পক্ষকেই সমর্থন করতে রাজি নয় ভারত৷ দিল্লি উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, বেশি দিন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে ভারতে অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে, যেটা একেবারেই কাম্য নয় দিল্লির৷ হাসিনা সরকারকে সেটা জানিয়েও দিয়েছে ভারত৷ ভারতের জাতীয় পত্র-পত্রিকার একাংশের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তদারকি, সরকারের অধীনে নির্বাচন না করানোর জেরে বিএনপি ও তার অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতা চলবে৷ যার শিকার হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সীমান্তপার থেকে বাড়তে পারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতাও৷
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
আওয়ামী লীগ চাইছে এক ধর্মনিরপেক্ষ উদার বাংলাদেশ৷ অন্যদিকে জামায়াতের বাঁচা-মরা নির্ভর করছে ইসলামিক পরিচয়ে৷ সেটাই হবে জামায়াতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংসাদপত্রের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, প্রাক-নির্বাচনকালে হাসিনা সরকারের সংকটমোচনে ভারত ব্যর্থ হয়েছে৷ এখন দিল্লির যেটা করণীয়, তা হলো এই কঠিন সময়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাসিনা সরকারের সমর্থনে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা৷ কারণ, এই মুহূর্তে অনেক দেশ নতুন নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে৷ সেটা খারিজ করলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ৷
বলা বাহুল্য, নতুন নির্বাচন মানে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি আর্থিক বোঝা৷ দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা৷ পাশাপাশি দিল্লি মনে করে, বিরোধী দলগুলির দিকে সদিচ্ছার হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করা, যাতে এক নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে৷ খালেদা জিয়াকেও নতুন করে চিন্তা করতে হবে জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানো কতটা কাঙ্খিত৷
ভারতের মতো অনেকেই এখন তাকিয়ে আছে নির্বাচন-পরবর্তীকালে হাসিনা সরকার কোন পথে এগোয়, তার দিকে৷