1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তথ্যকল্যাণীদের বিশ্বজয়

আনে ল্য-তুজে শ্মিৎস/আরাফাতুল ইসলাম১৬ জুন ২০১৩

প্রত্যন্ত পল্লির নারীর কাছে বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দিতে সদা তৎপর তাঁরা৷ বাহন তাদের সাইকেল, আর সঙ্গে থাকে তথ্য-প্রযুক্তি, চিকিৎসা উপকরণ৷ নাম, তথ্যকল্যাণী৷ বাংলাদেশের এসব তথ্যকল্যাণীদের এবার সম্মানিত করেছে ডয়চে ভেলে৷

ছবি: D.net/Amirul Rajiv

মাহফুজা আক্তার হয়ত বিশ্ববিদ্যালয় যেতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু পরিবারের আর্থিক অক্ষমতা তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি৷ আবার উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে একজন মেয়ের পক্ষে নিজের এলাকায় কাজ পাওয়াটাও সহজ ছিল না৷ তবে মাহফুজার ভাগ্য ভালো৷ গাইবান্ধার এই মেয়ে ২০১০ সালে নিজের এলাকায় ‘তথ্যকল্যাণী' হিসেবে কাজ পেয়ে যান৷ বিশেষ এই কাজের জন্য প্রয়োজন একটি সাইকেল, কিছু তথ্য-প্রযুক্তি ও চিকিৎসা উপকরণ এবং সর্বোপরি সাংগঠনিক দক্ষতা৷

অন্যান্য সেবার মধ্যে রয়েছে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়াছবি: D.net/Amirul Rajiv

উষ্ণ অভ্যর্থনা

একটি ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত মোবাইল ফোন নিয়ে মাহফুজা নিজের এলাকায় কাজ করেন৷ সাইকেলে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন ২৫ বছর বয়সি এই যুবতী৷ মূলত তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন সেবা, যেমন তাঁর এলাকার কারো সঙ্গে স্কাইপ-এর মাধ্যমে বিদেশে বা অন্য শহরে বসবাসরত কারো যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া কিংবা কৃষককে তথ্য দিয়ে সহায়তা বা গ্রামের কোনো শিক্ষিত তরুণকে চাকুরির আবেদন লিখতে সহায়তা করার মতো কাজগুলো মাহফুজা নিয়মিতই করছেন৷ পাশাপাশি গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা নারীটিকে বিভিন্ন সাধারণ চিকিৎসা সহায়তাও করেন তিনি৷ গ্রামবাসীকে প্রয়োজনে আইনি সহায়তাও প্রদান করেন মাহফুজা আক্তার৷

গ্রামের মানুষ অনেক সময় আমাদের শিক্ষক বা চিকিৎসকদের চেয়েও বেশি মর্যাদা দেয়: মাহফুজা আক্তারছবি: privat

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাহফুজার মতো তথ্যকল্যাণীরা যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেন, সেসব অঞ্চলে চিকিৎসকরা তেমন একটা যান না বললেই চলে৷ ফলে এসব অঞ্চলের মানুষ আগে ছোটখাট শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা নিতে গিয়েও বিপাকে পড়তেন৷ তথ্যকল্যাণীরা এখন তাদের সহায়তা করছেন৷ আর তাঁদের পেছনে কল সেন্টারে রয়েছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দল৷ ফলে যে কোনো সময় কল সেন্টারে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে পারেন তথ্যকল্যাণীরা৷

মাহফুজার মতো তথ্যকল্যাণীরা এসব সেবা বিনা খরচায় দেননা৷ আবার নির্দিষ্ট কোনো ফিও তাদের নেই৷ মাহফুজা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ক্ষেত্র বিশেষে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্থও পেয়ে থাকি৷ অনেকসময় সেবাগ্রহীতা আমাদের দুপুরের খাবারের জন্যও আমন্ত্রণ করে৷''

মাহফুজা বলেন, ‘‘আমি সাধারণ মানুষকে সেসব কাজ করতে উৎসাহী করি, যা তারা স্বাভাবিকভাবে একরকম অসম্ভব মনে করে৷ ফলে গ্রামের মানুষ অনেক সময় আমাদের শিক্ষক বা চিকিৎসকদের চেয়েও বেশি মর্যাদা দেয়৷''

নারীর কাছে পৌঁছানো

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷ ইউরোপ বা পশ্চিমা বিশ্বের তুলনা করলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এই হার অত্যন্ত কম৷ মোটের উপর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের তথ্য সহায়তা প্রদানে সরকারি কিছু উদ্যোগ থাকলেও সেগুলো খুব একটা সাড়া ফেলতে পারছে না৷ তবে তথ্যকল্যাণীরা এক্ষেত্রে বেশ সফল৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডিনেট-এর উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘তথ্যকল্যাণীদের সহায়তায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা অনেকটা শহরের বাসিন্দাদের মতোই এখন বিভিন্ন তথ্য এবং অন্যান্য সেবা পাচ্ছেন৷''

২০১৭ সাল নাগাদ তথ্যকল্যাণীর সংখ্যা ১২,০০০ করতে চাচ্ছে ডিনেটছবি: pallitathya.org.bd/infolady

২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘তথ্যকল্যাণী' প্রকল্প চালু করে ডিনেট৷ বর্তমানে সারা দেশে ৭০ জন তথ্যকল্যাণী কাজ করছেন৷ মূলত নারী ও শিশু এবং প্রতিবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠরা তাঁদের সেবার আওতায় রয়েছেন৷

তথ্যকল্যাণীরা সবাই নারী৷ তবে এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়৷ মোশাররফ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘নারীদের নিজেদের মধ্যে সহায়তার পরিধি বাড়াতে এবং তাঁদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতেই এই প্রকল্প৷''

মাহফুজার পক্ষে তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ শুরু করাটা সহজ ছিল না৷ তাঁকে এজন্য রীতিমত পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে হয়েছে৷ বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক থেকে শুরু করে বেকার অবধি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে তিনি কতটা মানিয়ে চলতে পারবেন, সেটা মূল্যায়ন করা হয়েছে কঠোরভাবে৷ ডিনেটের আয়োজিত ৩০ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর মাহফুজা এই কাজের জন্য উপযুক্ত হয়েছেন৷

তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ করে সন্তুষ্ট মাহফুজা৷ এখনও তিনি মনে করতে পারেন সেদিনের কথা, যেদিন নিজের প্রথম উপার্জনের টাকা তুলে দিয়েছিলেন মায়ের হাতে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মা সেদিন কেঁদে ফেলেছিল৷''

বর্তমানে প্রতি মাসে মাহফুজা গড়ে দশ হাজার টাকার মতো আয় করেন৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলে জীবনযাপনের জন্য এই আয় সন্তোষজনক৷

‘একটি বিপ্লবী প্রকল্প'

বাংলাদেশের এই তথ্যকল্যাণী প্রকল্প ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড ২০১৩' জয় করেছে৷ ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম' বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করে এই প্রকল্প৷ দ্য বব্স-এর জুরি শহীদুল আলম এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এটা এক বিপ্লবী প্রকল্প যা সমাজ, সংস্কৃতি এবং ডিজিটাল যুগের মধ্যকার ব্যবধান দূর করতে ভূমিকা রাখছে৷ তথ্যকল্যাণীদের কারণে এখন অনেক মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন৷''

তথ্যকল্যাণী প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতারাও এই প্রকল্প সম্পর্কে দারুণ আশাবাদী৷ মোশাররফের কথায়, ‘‘এই প্রকল্প আর্থিক এবং সামাজিক – উভয় দিক বিবেচনাতেই টেকসই৷'' বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তথ্যকল্যাণী প্রকল্পকে অনন্য এবং টেকসই হিসেবে আখ্যা দিয়েছে৷ ফলে তথ্যকল্যাণীরা সহজ শর্তে ব্যাংকঋণও নিতে পারছেন৷

উল্লেখ্য, ডিনেট ২০১৭ সাল নাগাদ তথ্যকল্যাণীদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২,০০০ করতে চাচ্ছে৷ বাংলাদেশের পাশাপাশি কঙ্গো, রুয়ান্ডা এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশেও এই প্রকল্পকে ছড়িয়ে দিতে চায় তাঁরা৷ এই লক্ষ্যে কাজ চলছে এখন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ