বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে আপত্তিকর সংলাপ, নেটফ্লিক্সকে চিঠি
১০ আগস্ট ২০২১
নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ফরাসি সিনেমায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে অবমাননাকর একটি সংলাপে আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাহার করতে বলেছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আন্তর্জাতিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থিওডোর অ্যান্থনি সারান্ডোসকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন৷
গত ৩০ জুলাই ডেভিড শ্যারন পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি' সিনেমাটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়৷ সিনেমার একটি সংলাপের ইংরেজি সাবটাইটেল ছিল এরকম, ‘ইয়েস, বুলেটপ্রুফ টাক্সেডো, মেইড ইন ফ্রান্স৷ আই উড বি ডেড ইফ ইট ওয়্যার বাংলাদেশ৷'বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়, "হ্যাঁ, এটা বুলেটপ্রুফ টাক্সেডো, ফ্রান্সে তৈরি৷ এটা বাংলাদেশে তৈরি হয়ে থাকলে আমি হয়ত মরেই যেতাম৷”
বিজিএমইএ সভাপতি নেটফ্লিক্সের কর্মকর্তাকে লেখা চিঠিতে বলেন, "এ ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশের ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রমের প্রতি অবমাননার শামিল৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে৷''
‘‘এ ধরনের মন্তব্য শুধু বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোর জন্যই অবমাননাকর নয়, বরং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার প্রতিও এক ধরনের অবজ্ঞা৷”
চিঠিতে আরো বলা হয়, "বিজিএমইএ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে৷ আমি এ বিষয়ে অতি দ্রুত আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং অবমাননাকর বক্তব্যগুলো সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি৷”
সংলাপটি সরিয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সিনেমাটির প্রচার বন্ধ রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে৷ চিঠির অনুলিপি নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি পরিচালক ডেভিড শ্যারন, ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও দেওয়া হয়েছে৷
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের কাছে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "যখন বাংলাদেশের পোশাক খাত এথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছেছে এবং পরিবেশবান্ধব ম্যানুফেকচারিংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য হতবাক এবং ব্যথিত করেছে আমাদের৷”
করোনার কারণে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের আয়ে ধস নামে৷ বিপর্যয় নেমে আসে শ্রমিকদের জীবনেও৷ তবে সেই ধাক্কা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চাকরির খোঁজে
কে এ ডাব্লিউ গার্মেন্টসে প্রধান ফটকের বাইরে ফারজানা আক্তার দাঁড়িয়ে কথা বলছেন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে৷ করোনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের খরচ সামলাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে এসেছেন তিনি চাকরির খোঁজে৷ কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে পরে আসতে বলে বিদায় দিলেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বেতন তুলতে পারেননি
আশিকুর রহমান পড়াশোনার পাশাপাশি রাজধানীর কচুক্ষেতের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন৷ লকডাউনের সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের একটি নির্দিষ্ট দিনে ৬০ ভাগ বেতন দেওয়া হয়েছিল৷ সেদিন উপস্থিত হতে পারেননি তিনি৷ পরে আর বেতনই পাননি৷ ‘‘নিজের ঘাম ঝরানো পারিশ্রমিক কেন দেওয়া হবে না’’, এমন প্রশ্ন তার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ওভারটাইম কমপক্ষে ৪০ ঘন্টা
মিরপুর ১৩ নম্বরের জকি গার্মেন্টস লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ জানান, প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানাতেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় কাজের ব্যবস্থা আছে৷ এক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই লাভবান হন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাবি আদায়ে আন্দোলন
এটি ২০২০ সালের জুনের ছবি৷ মিরপুর ১২-র ‘জয়েনটেক্স নিট ওয়্যারস লিমিটেড’ এ করোনাকালীন সময়ে প্রায় ৫০০ শ্রমিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং বেতন-বকেয়া আদায়ের দাবিতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা সেসময় আন্দোলন করেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চাকরি গেছে পরিচিতদের
ডায়নামিক্স সোয়েটার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে সুইং অপারেটর পদে কাজ করা মো. জসিম উদ্দিন জানান, লকডাউন চলাকালে তিনি নিজে চাকরিচ্যুত না হলেও পরিচিত বেশ কয়েকজনের চাকরি গেছে৷ তবে তার মতে কাজ জানা থাকলে এ শিল্পে বেশিদিন বেকার থাকতে হয় না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জমানো টাকা খরচ
লকডাউনের সময় পোশাকশ্রমিক রুবিনা আক্তার এবং তার স্বামী দুই মাস বেকার ছিলেন৷ প্রণোদনার ৬০% বেতন পেলেও তা দিয়ে ঢাকার ব্যয়বহুল জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় সমিতিতে জমানো টাকা খরচ করতে হয়েছে তাকে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পরিবারকে পাঠিয়েছেন গ্রামে
একাধিক পোশাকশ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার আগে পরিবারে আয়ের একাধিক সদস্য থাকলেও এখন আর তা নেই৷ পারিবারিক খরচ সামলাতে এখন যিনি কাজ করছেন, শুধু তিনি ছাড়া বাকি সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঋণ শোধের সময় বৃদ্ধি
করোনার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং পোশাকশ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য গত বছর উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছিল সরকার৷ সেটি পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে৷ অপরিশোধিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে আগামী মার্চ থেকে ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড পাবেন উদ্যোক্তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দুই মাস বেতন পাননি
এসনেহার আক্তার কাজ করেন মিরপুরের ভাই-বন্ধু ডিজাইন হাউজ নামের এক পোশাক কারখানাতে৷ তিনি জানান, লকডাউনের দুই মাস তাঁদের কোনো বেতন দেওয়া হয়নি, বরং বেতন চাইলে চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো হয়েছে৷ প্রতিবেশীদের সহযোগিতা না পেলে না খেয়ে মরতে হতো বলেও জানান তিনি৷