বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে ৫০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে জার্মান সরকার৷ এছাড়া তৈরি পোশাকের দাম বেশি দিতেও রাজি হয়েছেন তারা৷ আর চারটি পোশাক কারখানার উন্নয়নেও আলাদা চুক্তি সই হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং জার্মানির ‘ইকনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' মন্ত্রণালয়ের ‘পার্লামেন্টারিয়ান স্টেট সেক্রেটারি' এবং ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গভর্নর' হ্যান্স ইওয়াখিম ফুচটেল বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে ৫০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা) সহায়তা দেয়া সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷
পশ্চিমা বিশ্বের একদল পরিদর্শক বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে ভয়াবহ নিরপত্তা ঝুঁকি দেখতে পেয়েছেন৷ রানা প্লাজা বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তারা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
রানা প্লাজা বিধ্বস্তের পর...
২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের সাভারে রানা প্লাজা বিধ্বস্ত হলে নিহত হয় অন্তত ১,১০০ পোশাক শ্রমিক৷ এ ঘটনার পর পশ্চিমা যেসব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়, তারা পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়৷ সম্প্রতি বেশ কিছু নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছেন৷
ছবি: Reuters
নিরাপত্তা ঝুঁকি
পরিদর্শকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা এবং ভবনের কাঠামোর বিষয়ে অন্তত ৮০,০০০ নিরারপত্তা ইস্যু খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা৷
ছবি: Kamrul Hasan Khan/AFP/Getty Images
২,২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য
বাংলাদেশে পোশাক খাতে বাণিজ্যের পরিমাণটি বিশাল৷ অর্থের অঙ্কে প্রায় ২,২০০ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: DW/C. Meyer
পোশাক রপ্তানিতে মন্দা
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে গার্মেন্টসগুলো তাদের ক্রেতা হারাচ্ছে৷ ফলে পোশাক রপ্তানির হার হ্রাস হয়েছে৷
ছবি: Reuters
পোশাক কারখানা পরিদর্শন
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম এবং ইনডিটেক্সসহ ১৮০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি ও সদস্যরা অন্তত ১,১০৬টি কারখানা পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতিটি কারখানায় বৈদ্যুতিক ঝুঁকির পাশাপাশি, ভবনের কাঠামো ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাতে গাফিলতি খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা৷ এমনকি অনেক কারখানায় ফায়ার অ্যালার্ম ও ফায়ার এক্সিটও নেই৷
ছবি: DW/C. Meyer
অবিলম্বে খালি করার নির্দেশ
১৭টি কারখানা অবিলম্বে খালি করে বন্ধের নোটিস দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিদর্শকরা৷ কারণ ঐ ১৭টি কারখানা যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷ এছাড়া ১১০টি কারখানার ভবন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
নিরাপত্তা ইস্যু খতিয়ে দেখা
এর আগে নর্থ অ্যামেরিকান কোম্পানি ওয়ালমার্ট ও গ্যাপ-এর মতো বেশ কিছু কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ৫৮০টি কারখানা পরিদর্শন করেছেন৷ উদ্দেশ্য একই, নিরাপত্তা ইস্যু খতিয়ে দেখা৷ দেশের অন্তত ৩০০টি কারখানায় ওয়ালমার্ট ও গ্যাপ-এর পোশাক তৈরি হয়৷
ছবি: AP
আশঙ্কায় শ্রমিকরা
তবে যেসব কারখানা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে, সেসব শ্রমিকরা বেতন না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন৷ কেননা পরিদর্শকরা শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কথা বললেও মালিকরা এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি৷
ছবি: Imago/Xinhua
পরবর্তী পদক্ষেপ
পরিদর্শকরা বেশিরভাগ কারখানার মালিক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে আলোচনায় বসে কী কী ইস্যুতে পরিবর্তন আনা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে৷ এরপর আবারো তাঁরা পরিদর্শনে আসবেন নিজেদের নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়ন হলো, তা দেখার জন্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
এছাড়া আগামীতে প্রতি জোড়া জিন্স কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক ইউরো বাড়ানোর জন্য জার্মান ক্রেতাদের আহ্বান জানানোর কথাও জানান মন্ত্রী৷
ইওয়াখিম ফুচটেল বলেন, ‘‘জার্মানি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য জার্মানিতে একটি ওয়েবসাইট খুলবে৷ সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে উন্নয়ন, পোশাকের মান ইত্যাদির বিবরণ তুলে ধরবে৷''
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তৈরি পোশাক খাতের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে৷ জার্মানি এ অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷''
এদিকে এর দু'দিন আগে ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চারটি পোশাক কারখানার সঙ্গে পার্টনারশীপ চুক্তি সই করেন হ্যান্স ইওয়াখিম ফুচটেল৷ এগুলো হলো বিডিএল গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইল লি., শাহাম নিট কম্পেজিট লি. এবং জেএসএম হোল্ডিংস৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরে আয় ৫৮০ মিলিয়ন ইউরো এবং ৩৫,০০০ শ্রমিক কাজ করেন৷ তাদের সঙ্গে জিআইজেড এবং কেএফডাব্লিউ'র আগে থেকেই সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে৷ এই চারটি কারাখানার কাজের পরিবেশ উন্নয়নে জার্মানি ৬ মিলিয়ন ইউরো দেবে৷
রানা প্লাজায় আহতদের সহায়তায় জার্মানিতে প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসে আহত পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় জার্মানির বিলেফেল্ড শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ একটি গির্জায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হবে আহত শ্রমিকদের সহায়তায়৷
ছবি: DW/A. Islam
বিলেফেল্ডে প্রদর্শনী
জার্মানির বিলেফেল্ড শহরের একটি গির্জায় ২৬ জানুয়ারি প্রদর্শন করা হয় একদল পোশাক শ্রমিকের ছবি, যাঁরা রানা প্লাজা ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত৷ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য, ২০১৩ সালের ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এ সব মানুষ সম্পর্কে জার্মানদের জানানো৷ পাশাপাশি তাঁদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ৷
ছবি: DW/A. Islam
শুধু ছবি নয়
বিলেফেল্ডে গির্জার পাশের সম্মেলন কক্ষে পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন ছবির পাশেই শোভা পাচ্ছিল কিছু টি-শার্ট৷ সাদা এই টি-শার্টের উপরে লেখা রয়েছে ‘ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন’৷
ছবি: DW/A. Islam
উৎসুক দৃষ্টি
একটি ছবির ক্যাপশনের দিকে প্রদর্শনীতে আগত দর্শকদের উৎসুক দৃষ্টি৷
ছবি: DW/A. Islam
ছিলেন বাঙালিরাও
বিলেফেল্ডে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছবি প্রদশনীটি দেখতে গির্জায় হাজির হন৷ সাভারে পোশাক শ্রমিকদের করুণ পরিণতিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত তাঁরা৷
ছবি: DW/A. Islam
গির্জার ভেতরে
গির্জায় রবিবার প্রার্থনা সভা চলাকালে বাংলাদেশের এই ছবিটিসহ আরো কয়েকটি ছবি প্রদর্শন করা হয় প্রার্থনা কক্ষের ভেতরেই৷ বাংলাদেশ সম্পর্কে জার্মানির আমজনতাকে ধারণা দেওয়ার ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ স্থানীয় গণমাধ্যমেও সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
আয়োজকের কথা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে স্বেচ্ছাসেবী ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন৷ ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা জানতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এগারোশ’র বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন, যাঁদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক৷
ছবি: DW/A. Islam
অর্থ যাচ্ছে স্নেহা ফাউন্ডেশনে
ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন জানান, প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ স্নেহা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় খরচ করা হবে৷ ফাউন্ডেশনটি ৩০ জন নারী পোশাক শ্রমিকের দীর্ঘমেয়াদি পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়েছে, যাঁরা ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এবং মা৷
ছবি: DW/A. Islam
7 ছবি1 | 7
জার্মান এই প্রতিনিধি দল একটি সামিটে অংশ নিতে আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন৷
উল্লেখ্য জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ৷ গত নভেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ২১ কোটি ১০ লাখ ইউরো সহায়তার চুক্তি করে জার্মানি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় দুই হাজার ৫০ কোটি টাকা৷