কার্বন নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ুর কথা বিবেচনায় রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে গত এপ্রিলে একটি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছে নায়ায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন৷ দ্বিতীয় শহর হিসেবে রাজশাহীও এমন একটি প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
আড়াই হাজারের বেশি স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারের নেটওয়ার্ক ‘লোকাল গভর্নমেন্টস ফর সাস্টেনেবিলিটি' আইসিএলইআই-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুবায়ের রশিদ এসব তথ্য জানিয়েছেন৷
আইসিএলইআই-এর সহায়তায় সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে৷ এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে স্থাপিত স্ক্রিনের মাধ্যমে মানুষকে বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রেোজেন ডাইঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের মতো দূষণকারী গ্যাসের পরিমাণ জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
পৃথিবীকে বাঁচাতে কোন শহরের কী পরিকল্পনা?
আজ ধরিত্রী দিবস৷ কার্বন নির্গমন কমাতে গোটা বিশ্বে নানা উদ্যোগ চলছে৷ বিশ্বের বেশ কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা সত্ত্বেও সিটি কাউন্সিল এবং মেয়ররা কার্বন নির্গমন কমানোর চেষ্টা করছেন৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Zoonar/picture alliance
‘সবুজ অর্থনীতি’
নিজেদের গ্রহকে নিজেদের রক্ষা করার লড়াই৷ তাই কোথাও বিনিয়োগ করতে হলে এই গ্রহই প্রকৃত জায়গা৷ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার একমাত্র চাবিকাঠি সবুজ অর্থনীতি৷ ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়েছিল৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে ওই চুক্তিতে স্থির হয়, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে বাড়তে না পারে, তার দিকে নজর রাখা হবে৷
ছবি: DW
তাপমাত্রা বাড়ছে
প্রাক-শিল্প স্তরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা বাসযোগ্য গ্রহের গড় তাপমাত্রার দ্বিগুণ৷ একাধিক দেশের সরকার জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পকে ‘ক্লিন এনার্জি’-র তিন গুণ হারে ভরতুকি দিয়ে যাচ্ছে৷ জীবাশ্ম জ্বালানি লবির দীর্ঘকালীন প্রভাব থেকে শুরু করে ইউক্রেনের আক্রমণের ফলে জ্বালানি সংকটে সবের মাঝেও স্থানীয় স্তরে অনেকে কাজের চেষ্টা করে চলেছেন৷
ছবি: Zhi Zhiwen/dpa/picture alliance
জলবায়ু পরিবর্তন
গত বছর জলবায়ু সম্মেলনের সময় লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘‘শহর এবং সরকারের মধ্যে পার্থক্য রাত এবং দিনের মতো৷’’ তবুও ইউরোপ এবং এশিয়ার শহরেও জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: David Klein/REUTERS
কোপেনহেগেন বিশ্বের প্রথম জলবায়ু নিরপেক্ষ শহর?
কোপেনহেগেন সরকার চায় ২০২৫ সালের মধ্যে শহরের অন্তত ৭৫ শতাংশ যাতায়াত হোক পায়ে হেঁটে, সাইকেলে কিংবা গণপরিবহণের মাধ্যমে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে শহরে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ইঞ্জিনের যানবাহন নিষিদ্ধ করা হবে৷
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অন্যতম উৎস বিদ্যুৎ এবং তাপ৷ কোপেনহেগেন প্রশাসন কয়লা, তেল এবং গ্যাসকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করছে৷ আবাসনগুলিতে তৈরি হওয়া, উৎপাদনের ফলে তৈরি হওয়া ব্যাপক বর্জ্য কমাতে ‘স্মার্ট এনার্জি গ্রিড’ স্থাপন করেছে তারা৷
ছবি: Emil Helms/Ritzau Scanpix/AFP/Getty Images
কী ভাবছে ভারত?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হিসেবে, সেই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ৷ মুম্বইয়ের মতো বিশাল জনসংখ্যার (দুই কোটি) শহরও এই পদক্ষেপে শামিল হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Design Pics/C. Caldicott
মুম্বই কী ভাবছে?
বৃষ্টি হলেই জল থৈ থৈ মুম্বই, তেমনই গরমের সময়ও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা৷২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াবে মুম্বই৷ ২০২৩ সালের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক বাস চলবে মুম্বইয়ে৷ শহরের ১০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী বর্জ্য–বিশেষ করে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মিথেন৷ এর ফলে শহর জুড়ে বনায়ন শুরু হয়েছে মুম্বইয়ে৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
প্যারিস : ১৫ মিনিটের শহর!
পায়ে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর উপযোগী শহর তৈরি করে কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব৷ বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা যদি ১৫ মিনিটেই পাওয়া যায়? তাহলে তো গাড়ির প্রয়োজন হবে না৷ কার্বন নির্গমন কমবে৷ প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগো চান, ২০২৪ সালের মধ্যে শহরের প্রতিটি রাস্তায় সাইকেল লেন থাকুক৷ ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতার লক্ষ্যপূরণ করা যাবে৷ এটাই হলো ১৫ মিনিটের শহরের পরিকল্পনা৷
ছবি: Marechal Aurore/ABACA/picture alliance
সিয়াটলও উদ্যোগী
শহর এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ প্রায়ই জলবায়ু ইস্যুর বিষয়ে জাতীয় সরকারকে তুলোধোনা করে৷ স্ব-উন্নত শহুরে সমবায় আবাসনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট আকারে বদল আনা সম্ভব৷ জার্মানির বিল্ডিং গ্রুপের ভাবনার উপর ভিত্তি করে সিয়াটলের লার্চ ল্যাব আর্কিটেকচার ফার্ম এই নিয়ে কাজ করছে৷ ‘লো এনার্জি’ আবাসন এবং ‘ইকোডিস্ট্রিক্ট’ তাদের লক্ষ্য৷
ছবি: Elaine Thompson/picture alliance/AP Photo
ফ্রাইবুর্গ: ইউরোপের সবুজতম শহর
জার্মানির ফওবান জেলার সবুজ শহর ফ্রাইবুর্গে ‘মডেল ইকো নেবারহুড’ তৈরি হয়েছে৷ এটি ‘জিরো এমিশন’ শহর৷ ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ নির্গমন কমাতে বদ্ধপরিকর স্থানীয় মানুষ এবং পৌরপ্রশাসন৷ এ শহরের পাঁচ হাজার ৬০০ জন বাসিন্দাদের কেউ গাড়ি ব্যবহার করেন না৷ রাস্তাগুলি সাইকেল এবং পথচারী-বান্ধব৷ ছাদে সৌরশক্তিসহ উজ্জ্বল রঙের ‘পাসিভহউস’ ভবন রয়েছে৷ বায়োগ্যাসচালিত শক্তি কারখানা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে৷
ছবি: Rolf Haid/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে একটি গণগ্রন্থাগার ও হাসপাতালসহ কয়েকটি সরকারি স্থাপনার ছাদে সৌরশক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
দখল হয়ে যাওয়া ২৬টি খাল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ সেটি সম্ভব হলে দুর্গন্ধ দূর হবে৷ এছাড়া উদ্ধার করার পর খালের চারপাশে গাছ লাগিয়ে সবুজের ব্যবস্থা করা হবে৷ শহর এলাকায় জলাধার থাকলে গরম কম লাগে বলে জানান আইসিএলইআই-এর নারায়ণগঞ্জের প্রকল্প কর্মকর্তা দীপক ভৌমিক৷
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী জানান, তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ইকো-পার্ক তৈরি এবং শীতলক্ষ্যা নদী ও খালের চারদিকে বনায়নের কাজ শুরু করেছেন৷
তবে জলবায়ুবান্ধব উন্নয়ন মডেল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের অভাব একটি সমস্যা বলে জানান তিনি৷
আইসিএলইআই-এর নারায়ণগঞ্জের প্রকল্প কর্মকর্তা দীপক ভৌমিক জানান, তারা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে মিলে জলবায়ুবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করছেন৷ এগুলো বাস্তবায়ন করতে তহবিলের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রস্তাব পাঠানো হবে৷
ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক, জাপান সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক শহরের কয়েকটি প্রকল্পে তহবিল জোগান দিয়েছে৷
আইসিএলইআই-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুবায়ের রশিদ জানান কার্বন নির্গমন কম করে নগর উন্নয়ন করার একটি পাইলট প্রকল্প হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ৷ দ্বিতীয় শহর হিসেবে রাজশাহীও একটি ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি৷