সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ে বেশি কাজ করি বলে এঁদের দু’জনকে ফেসবুকে খুব মিস করি৷ তাই আমি চাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী দু’জনই আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসবুকে যোগ দিক৷ এই চাওয়া কি বাড়াবাড়ি?
বিজ্ঞাপন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথাই ধরুন৷ ইসরায়েলের একটি বিশেষ দিবসে টুইটারে হিব্রু ভাষায় একটি শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করেন তিনি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুও কম যান না৷ সেই শুভেচ্ছা বার্তার জবাব তিনি টুইটারেই দিয়েছেন, তবে হিন্দি ভাষায়৷ বাংলাদেশ সফরের সময়ও তিনি মোদী টুইট করেছেন বাংলা ভাষায়৷
ইদানীংকালে আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনীতির এক অন্যতম উপকরণ হয়ে উঠেছে ফেসবুক, টুইটার৷ তাই বিশ্বের ছোট, বড় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও যোগ দিচ্ছেন সেখানে৷ এতে করে আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন তাঁদের জন্য যেমন সহজ হচ্ছে, তেমনি নিজের দেশের মানুষের আরো কাছে পৌঁছে যেতে পারছেন তাঁরা৷
২০১৫ সালে ফেসবুক, টুইটারে যা সাড়া জাগিয়েছে
২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটেছে৷ সন্ত্রাসী হামলার পর মানুষের প্রতিবাদ, একাত্মতার পাশাপাশি শরণার্থীদের নিয়ে আলোচনা ছিল সারা বছর৷ এখানে থাকছে গত ১২ মাসে আলোচিত ১২টি হ্যাশট্যাগের কথা৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski
জানুয়ারি: #জেসুইশার্লি
জানুয়ারি মাসে ফরাসি ভাষায় হ্যাশট্যাগ #জেসুইশার্লি, যার অর্থ ‘আই অ্যাম শার্লি’ বা ‘আমি শার্লি’ সারাবিশ্বে ট্রেন্ড করেছে৷ প্যারিসে শার্লি এব্দো পত্রিকার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ ব্যক্তি নিহতের ঘটনার পর হ্যাশট্যাগটি ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: CHARLIE HEBDO
ফেব্রুয়ারি: #দ্যড্রেস
কালো এবং নীল নাকি সাদা এবং সোনালি? একটি পোশাকের রং নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে বিভক্ত হয়ে যায় গোটা ইন্টারনেট বিশ্ব৷ তবে #দ্যড্রেস ব্যবহার করে ব্যাপক, আলোচনা, টুইট, পোস্টের পরও জানা যায়নি পোশাকের রং আসলে কোনটা৷ আপনার কী মনে হয়?
ছবি: tumblr
মার্চ: #জার্মানউইংস
গত মার্চে জার্মান উইংসের ফ্লাইট ৪ইউ৯৫২৫ ফরাসি আল্পসে বিধ্বস্ত হলে ১৫০ ব্যক্তি প্রাণ হারান৷ পরবর্তীতে জানা যায়, বিমানটি সহ-পাইলট আন্দ্রেস ল্যুবিৎস ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটি বিধ্বস্ত করেছিলেন৷ গোটা বিশ্বে এই ঘটনা আলোচিত হয়েছে #জার্মানউইংস হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
এপ্রিল: #ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার
গত এপ্রিলে দুই নিরস্ত্র কৃষ্ণাজ্ঞ ব্যক্তি, ওয়াল্টার স্কট এবং ফ্রেডি গ্রে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন৷ তাঁদের মৃত্যু গোটা দেশে প্রতিবাদের সূচনা করে, সৃষ্টি হয় #ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার হ্যাশট্যাগ৷ পরবর্তীতে আরো অনেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার হয়েছে৷ সাক্যুলে ২০১৫ সালে এটি টুইটারে ব্যবহার হয়েছে ৯০ লাখের বেশি বার৷
ছবি: Reuters/A. Latif
মে: #হোমটুভোট
মে মাসে আয়ারল্যান্ডে সমকামীদের বিয়ে নিয়ে গণভোটের আয়োজন করা হয়৷ সেসময় এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অন্যত্র থাকা আইরিশরা ভোট দিতে ঘরে ফেরার কথা জানান৷ গণভোটে সমকামিদের বিয়ে বৈধ করার পক্ষে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জুন: #সেলফিউইথডটার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত জুনে মেয়ের সঙ্গে বাবার সেলফি ইন্টারনেটে পোস্ট করতে ভারতবাসীকে অনুরোধ করেন৷ এরপর অগুনতি গর্বিত পিতা #সেলফিউইথডটার হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করেছেন৷ হ্যাশট্যাগটি শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: www.narendramodi.in
জুলাই: #গ্রিফারেন্ডাম
গ্রিসের ঋণ সঙ্কট ২০১৫ সালের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল৷ জুলাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন্ড করে হ্যাশট্যাগ #গ্রিফারেন্ডাম৷ কৃচ্ছ্বতাসাধনের বিনিময়ে আরো আন্তর্জাতিক ঋণ নেয়া হবে কিনা সেটা নির্ধারণে এই গণভোটের আয়োজন করা হয়৷ বলাবাহুল্য, গ্রিসের অধিকাংশ মানুষ তাতে না ভোট দিয়েছিল৷ বরং ইউরোজোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেয় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
আগস্ট: #রিফিউজিসওয়েলকাম
২০১৫ সালে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী দেখেছে বিশ্ব৷ প্রায় দুই কোটি মানুষ নিজের বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে এবছর৷ #রিফিউজিসওয়েলকাম ব্যবহার করে অগুনতি মানুষ শরণার্থীদের গ্রহণে ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ ইউরোপীয়রাও হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে বিভিন্ন সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
সেপ্টেম্বর: #আইস্ট্যান্ডউইথআহমেদ
যখন ১৪ বছর বয়সি একটি ছেলেকে তার ব্যাগ থাকা ঘড়িতে বোমা ভেবে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেয়া হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়, তখন বিষয়টি অনলাইনে পৌঁছাতে বেশি দেরি লাগেনি৷ টুইটারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে বিশ্বের নামি-দামি অনেক ব্যক্তিত্ব আহমেদ মাহমুদের পাশে দাঁড়ান, সূচনা হয় #আইস্ট্যান্ডউইথআহমেদ হ্যাশট্যাগের৷
অক্টোবরে টিউশন ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে দক্ষিণ আফ্রিকার শিক্ষার্থীরা৷ সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ, পুলিশের হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা টিউশন ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hendricks
নভেম্বর: #প্রেফরপ্যারিস
প্যারিসের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এব্দোতে হামলার প্রায় একছর প্যারিসে আবারো সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ১৩০ ব্যক্তি, আহত ৩৫০ জনের বেশি৷ এই ঘটনা গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়৷ #প্রেফরপ্যারিস ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন গোটা বিশ্বের মানুষ৷
ছবি: Reuters/Charles Platiau
ডিসেম্বর: #কপ২১
ডিসেম্বরে সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল জলবায়ু সম্মেলন৷ প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ঘিরে কার্যত সারা বছরই আলোচনায় ছিল #কপ২১ হ্যাশট্যাগ৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski
12 ছবি1 | 12
ভারতে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মকে অনেকটাই কাছে টানতে সক্ষম হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী৷ বর্তমানে মোদী কোনো দেশ সফরে যাওয়ার আগে সেই দেশের মানুষকে তাঁর সফরের কথা আগেভাগে জানাতেও বেছে নিচ্ছেন ফেসবুক এবং টুইটার৷ এক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগও করছেন তিনি৷ বলা বাহুল্য, এর ফল পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতেই৷ মোদী যখন জার্মানিতে, তখন টুইটারে ‘ট্রেন্ড' করতে শুরু করে ইংরেজিতে #মোদীইনজার্মানি, যখন যুক্তরাষ্ট্রে তখন #মোদীইনইউএস৷
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে মূল দুই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যকার লড়াইয়ের একটা বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় চলেছে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে কিছু লিখলে তাঁর জবাব টুইটারেই দেন হিলারি ক্লিন্টন৷ তাদের প্রচারণা লাইভ প্রচার করা হয় ফেসবুকে৷
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ফেসবুক৷ দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিয়মিত ফেসবুক ভিজিট করেন৷ সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক অনুপস্থিতি বড়ই বেমানান৷ আমি মনে করি, জনগণের মনের অবস্থাটা বুঝতে তাদের সরাসরি ফেসবুকে প্রবেশ করা উচিত৷ আশার কথা হচ্ছে, খালেদা জিয়া সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন৷ এখন পর্যন্ত বাংলায় এবং ইংরেজিতে দু'টি টুইট করেছেন তিনি, যা অনেকে শেয়ার করেছেন৷
শুধু তাঁরাই নন, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতাদেরও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার সময় এসেছে৷ পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনতে, জনগণের তথ্য আদায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বাড়াতে হবে৷
তবে খেয়াল রাখতে হবে, সরকার এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উপস্থিতি যেন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী হয়৷ গুলশান হামলার পর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য প্রকাশ করতে দেখেছি৷ এটা একদিকে যেমন ইতিবাচক, অন্যদিকে বিভ্রান্তিও ছড়াতে পারে৷ সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে কার কথা বলা উচিত সেটা নির্ধারণ করে জনগণকে জানিয়ে দিলে ব্যাপারটা ইতিবাচক হতে পারে৷ যেমন পুলিশের মুখপাত্র চাইলে নিজে ফেসবুক, টুইটারে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে পারেন এবং জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন৷ অথবা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাতা থেকে কাজটা করা যেতে পারে৷ একই ইস্যুতে দায়িত্বশীলদের অনেকে একইসঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে তা বরং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷