1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতের খুঁটিনাটি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার কত বড় তা নিয়ে কোনো জরিপ নেই৷ তবে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে একটি হিসাব করে থাকে৷ এদিকে, বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রচলিত ধারণা দিন দিন পালটে যাচ্ছে৷

EidForAll video goes viral
ছবি: UC Browser Bangladesh

রায়ানস আর্কাইভস নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লায়েন্টদের চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের বাজার জরিপ করে৷ প্রকাশিত ও প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে তারা এই জরিপটি করে৷ তারা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও এফএম রেডিওর ওপর কাজ করে৷ ওইসব প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপনের রেট কার্ডে যে মূল্য দিয়ে থাকে, সেই হিসাবে মূল্য নির্ধারণ করে৷

রায়ানস আর্কাইভস-এর হিসেবে ২০১৮ সালে সাত হাজার ৯শ' ৬০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন গেছে টেলিভিশনে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে দুই হাজার ৯শ' কোটি টাকার৷ এফএম রেডিওতে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছে একশ' ৮৯ কোটি টাকার৷ মোট ১১ হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের হিসাব এখানে পাওয়া যায়৷

তবে পত্রিকার অনলাইন, শুধু অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপনের হিসাব এখানে নেই৷

রায়ানস আর্কাইভস-এর প্রধান নির্বাহী আহমেদ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই যে টাকার হিসাব বাস্তবে এটা এত পরিমাণ হবেনা৷ কারণ রেট কার্ডে যে বিজ্ঞাপনমূল্য লেখা থাকে, তা থেকে ডিসকাউন্ট দেয়া হয়৷ আর এই ডিসকাউন্ট নির্ধারিত হয় আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বুঝে৷''

‘টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনে প্রবৃদ্ধি বেশি’

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘আমাদের জরিপের তথ্য অনুয়ায়ী এই তিন মাধ্যমের ভিতর টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনে প্রবৃদ্ধি বেশি৷ ২০১৭ সালের তুলনায় টিভিতে বিজ্ঞাপন বেড়েছে ১৫ ভাগ৷ আর পত্রিকায় বেড়েছে ৫ ভাগ৷ কিন্তু এফএম রেডিওর বিজ্ঞাপন অর্ধেকে নেমে এসেছে৷''

তাদের জরিপে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য আছে৷ টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের শীর্ষে আছে টয়লেট্রিজ সামগ্রী৷ এরপর যথাক্রমে টেলিকমিউনিকেশন, বেভারেজ, রেডিফুড ও অন্যান্য কনজুমার প্রডাক্টস৷

পত্রিকার বিজ্ঞাপনে সরকারি বিজ্ঞাপনই শীর্ষে৷ এগুলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের বিজ্ঞাপন৷ তারপর যথাক্রমে ব্যাংক, ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স, রেডিফুড ও কসমেটিকস টয়লেট্রিজ৷

আহমেদ হাসান বলেন, ‘‘এই তিন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অপরিহার্যতা আছে৷ কিন্তু বিজ্ঞাপনে নতুনত্ব বা সৃষ্টিশীলতার অভাব দেখা যাচ্ছে৷ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপনের বাজেট শেষ করতেও বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই যে বিজ্ঞাপন, তার লায়ন শেয়ার নিয়ে নেয় ৫-৭ টি পত্রিকা এবং টেলিভিশন৷''

 

বিজ্ঞাপন মাধ্যম হিসাবে অনলাইন

বাংলাদেশে এখন ফেসবুক এবং গুগলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়ার ঝোঁক বাড়ছে৷ এর কারণ এসব মাধ্যমে টার্গেট গ্রুপ নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়৷ আবার বিজ্ঞাপনটি কত ইউজারের কাছে পৌঁছল, তাও জানা যায়৷ এছাড়া সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা খরচ করা যায়৷ এই সুবিধা পত্রিকা, টেলিভিশন বা রেডিওতে নেই৷

এছাড়া এখন অনেক অ্যাপসেও বিজ্ঞাপন যায়৷ বিজ্ঞাপন হয় মোবাইল ফোনের এসএমএস-এর মাধ্যমে৷ এর আরেকটি কারণ হলো ই-কমার্স৷ উবার বা পাঠাওয়ের মত অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে অনলাইন ভিত্তিক৷ তাদের বিজ্ঞাপনও প্রধানত অলাইনে৷ আর পত্রিকার অনলাইনগুলোও সরাসরি যেমন জিজিটাল বিজ্ঞাপন পায়, তেমনি বিজ্ঞাপন পায় গুগলের মাধ্যমেও৷

গুগল ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ম্যানেজার আরিফ নিজামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মাধ্যমে বাংলাদেশে বছরে কত টাকার বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তার সঠিক হিসাব নেই৷ কারণ বাজারটি এখনো অর্গানাইজড না৷ তবে শুধু টেলিফোন কোম্পানিগুলো যে হিসাব দিয়েছে তাতে তারা ২০১৭-১৮ সালে অনলাইন মাধ্যমে দেড়শ' কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে৷ এবছর আরো বাড়বে৷ আমার কাছে বিভিন্ন সূত্রে যে তথ্য আছে তাতে এখন এই বিজ্ঞাপনের বাজারটি দেড় হাজার কোটি টাকার এবং তা বাড়ছে৷''

‘বিজ্ঞাপন তৈরির ধারণাও পালটে যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

এনবিআর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপনকে ট্যাক্সের আওতায় এনেছে৷ এই খাতে বিজ্ঞাপনের পরিমাণ জানতে হাইকোর্টে একটা রিটও আছে৷

বিজ্ঞাপন, পিআর এবং মার্কেট রিচার্স নিয়ে কাজ করে বেঞ্চমার্ক৷ বেঞ্চমার্কের প্রধান নির্বাহী আশরাফ কায়সার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতে বিজ্ঞাপনের বাজার নিয়ে জরিপ থাকলেও আমাদের দেশে নেই৷ ভারতে তাদের বাজারের প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ১৪ ভাগ৷ কিন্তু আমাদের দেশেরটা আমরা জরিপ করছিনা৷ আর যারা বিজ্ঞাপন দেন তাদের কেউ কেউ এই খাতে খরচের টাকা গোপন রাখতে চান৷ তারপরও আমার ধারনা সব মাধ্যম মিলিয়ে আমাদের বাজারটি চার হাজার কোটি টাকার কম হবেনা বছরে৷''

তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্য করবেন নিউজের কনজাম্পশন বেড়ে গেছে অনেক গুন৷ আগে মানুষ পত্রিকা পড়তো৷ আর রাতে হয়তো কিছুক্ষণ টিভি দেখতো৷ কিন্তু এখন মানুষ সার্বক্ষণিক নিউজের মধ্যে থাকছে৷ আর এটা সম্ভব হয়েছে অনলাইনের কারণে৷ মোবাইল ফোন এখন সংবাদ ও বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে৷ তাই বিজ্ঞাপনের ধরণও পালটে যাচ্ছে৷ এর উপস্থাপনা ও মাধ্যম বদলে যাচ্ছে৷ পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও'র জায়গায় চলে আসছে অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷ আর দিন দিন এটা বাড়বে৷''

তিনি বলেন, ‘‘একারণে বিজ্ঞাপন তৈরির ধারণাও পালটে যাচ্ছে৷ এখন যাঁরা বিজ্ঞাপন বানাচ্ছেন তাঁদেরও বিজ্ঞাপনের কনটেন্ট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে৷ আমরা এখন ক্লায়েন্টের সাথে বিজ্ঞাপন তৈরির বৈঠক করিনা, করি ক্যাম্পেইন প্ল্যানিং৷''

আশরাফ কায়সার বলেন, ‘‘প্রচলিত ধারার মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের ফিডব্যাক এসেস করা সহজ নয়, যেটা অনলাইনে সহজ৷ আর ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে অনলাইনকে শক্তিশালী করছে৷''

বাংলাদেশে এই বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞাপনী সংস্থা গড়ে উঠেছে৷ টিভি ও অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য আছে প্রোডাকশন হাউজ৷ সেখানে কাজ করেন অনেক শিল্পী, কলা-কুশলী৷ তবে কত প্রতিষ্ঠান, কত লোক কাজ করেন তারও সঠিক হিসাব নেই৷

আশরাফ কায়সার বলেন, ‘‘বেঞ্চমার্ক বা এশিয়াটিকের মতো বড় প্রতিষ্ঠান যেমন আছে তেমনি ব্রিফকেস প্রতিষ্ঠানও আছে৷ তাই হিসাব করা কঠিন৷''বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের আর একটি বড় খাত হলো আউটডোর বিজ্ঞাপন৷ বিলবোর্ড বা ডিজিটাল বিলবোর্ডের মাধ্যমে এই বিজ্ঞাপন দেয়া হয়৷ এই সেক্টরে এখন ত্রিমাত্রিক বিজ্ঞাপনও চালু হয়েছে৷ তবে এই খাতটি সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার ওপর নির্ভরশীল৷ কারণ রাস্তার পাশে এই বিজ্ঞাপন দিতে হলে তাদের কাছ থেকে বরাদ্দ নিতে হয়৷

বিজ্ঞাপন নিয়ে আপনার অভিমত লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ