জাতিসংঘের একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিও ফেসবুক এবং টুইটারে শেয়ার করেছেন অনেকে৷ এতে বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার যে ‘স্বৈরাচারী' নয় তা সরকারের নিশ্চিত করা উচিত বলে জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউটিউব-এ ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে ‘বিএনপি অনলি' নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের মুখপাত্র স্টেফান ডুইয়ারিচ এক সাংবাদিকের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেছেন৷
ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি' নামের একটি ফেসবুক পাতা থেকে৷ পাতাটি ফেসবুক ভিরিফাইড করেনি৷ তাই এটি বিএনপির আনুষ্ঠানিক পাতা কিনা নিশ্চিত নয়৷ এতে লেখা হয়েছে, ‘‘বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এবং দেশে অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মূখপাত্র স্টেফান ডুইয়ারিচ৷''
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মুখপাত্র জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনারের অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করেন৷ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারকে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, শীর্ষ বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার এবং আটক কখনই ‘স্বৈরাচারী' নয় এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দেশে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই করা হচ্ছে৷''
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁর কাছে অত্যন্ত ‘ডিস্টার্বিং' বলে মনে হয়েছে৷ জাতিসংঘের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বর্তমান ‘বিশৃঙ্খলা' স্বাভাবিকভাবেই নজর কেড়েছে তাঁর৷ বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হত্যার অভিযোগ রয়েছে৷ এ সব অভিযোগ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দেশটির অবস্থানের উপর কোনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা – এমন এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র জানান, এক্ষেত্রে ‘স্টান্ডার্ড হিউম্যান রাইটস স্ক্রিনিং পলিসি' অনুসরণ করা হবে বলে তিনি মনে করেন৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে জানুয়ারি মাসের চলমান অবরোধে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েক ডজন মানুষ৷ এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে' নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে সাত৷