বাংলাদেশের ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রের
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৮ এপ্রিল ২০১৬
বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের হামলার হুমকিতে থাকা ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মানবিক আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র মার্ক টোনার বৃহস্পতিবার এ কথা জানান৷
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানবাধিকার নেতা নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা মুক্তচিন্তা করছেন তাঁদের রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না৷ তাই অনেক ব্লগার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন৷ আর কেউ কেউ পাড়ি জমাতে চাইছেন৷ সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি হুমকির মুখে থাকা মুক্তমনাদের আশ্রয় দেয় তাহলে তা ইতিবাচক৷ তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়৷''
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে বুধবার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে মার্ক টোনার বলেন, ‘‘নাজিমুদ্দিনের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি৷ সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷ এর আগেও এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷'' এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার ইসলামি চরমপন্থাকে দায়ী করছে উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের একজন টোনারকে প্রশ্ন করেন যে যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের সংযোগ খুঁজে পাচ্ছে কিনা?
এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়: নূর খান
জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনো ধারণা নেই৷ নাজিমুদ্দিন হত্যার দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি৷ অতীতের হত্যাকাণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদার পক্ষ থেকে দায় স্বীকারের কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷''
বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে লেখা এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো হুমকিতে থাকা বাংলাদেশি লেখক-ব্লগারদের মানবিক আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানায়৷ নাজিমুদ্দিন হত্যার পর সে দাবি আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে৷ কয়েকমাস আগের সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে টোনারের কাছে আশ্রয়ের ব্যাপারটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে হামলার হুমকিতে থাকা অনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লগারকে মানবিক আশ্রয় দেয়ার বিষযটি বিচেনায় রাখা হয়েছে৷'' তবে এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের পরার্মশ দেন তিনি৷
বাংলাদেশের মানবাধিকার নেতা এবং জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে এপর্যন্ত যেসব ব্লগার, প্রকাশক বা মুক্তচিন্তার মানুষ হত্যা অথবা আক্রমণের শিকার হয়েছে বলতে গেলে তার কোনো বিচার হয়নি৷ দু'একটি ব্যতিক্রম বাদে অপরাধীরাও আটক হয়নি৷ সরকারের মন্ত্রী বা শীর্ষমহলের কথায় একধরণের সমঝোতার লক্ষণ স্পষ্ট৷ তাঁরা ব্লগারদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলছেন৷ তাঁদের আটকও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ধর্মীয় উগ্রবাদীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই বিচারহীনতাই স্বাধীন চিন্তার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অনেকেই এখন আর দেশে থাকা নিরাপদ মনে করছেন না৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও তা সামাধান নয়৷ তাহলেতো দেশের ১৬ কোটি মানুষকেই বিদেশে চলে যেতে হবে৷''
নূর খান বলেন, ‘‘সামাধান হলো জঙ্গিদের দমন, তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ নিশ্চিত করা৷''
নেদারল্যান্ডসে বাংলা ব্লগারদের মিলনমেলা
তাঁদের কেউই স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করেননি৷ কেউ ভালো চাকরি করতেন, কেউ ছিলেন শিক্ষার্থী৷ কিন্তু একের পর এক সহযোদ্ধাদের মৃত্যু তাঁদের হিসেব বদলে দিয়েছে, যেতে হয়েছে নির্বাসনে৷
ছবি: DW/A. Islam
হেগে বাংলা ব্লগারদের আসর
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি বসেছিল বাংলা ব্লগারদের মিলনমেলা৷ গত বছর ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়কে স্মরণ এবং এক সংহতি বইমেলাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের নির্বাসিত ব্লগারদের বেশ কয়েকজন জড়ো হন হেগের এই ‘হিউম্যানিটি হাউসে৷’
ছবি: DW/A. Islam
ছবি তুলতে বারণ
হেগে বইমেলা এবং আলোচনায় অংশ নেয়া ব্লগারদের প্রায় সবাই বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে পরিচিত৷ অনলাইন দুনিয়ায় তাঁদের ছদ্মনামে লেখা ‘পোস্ট’ আলোড়ন তুলছে অনেকবার৷ সেই ব্লগারদের অনেকেই আগ্রহী ছিলেন না নিজেদের প্রকৃত পরিচয় সবাইকে জানাতে৷ তাই তাঁদের ছবি তোলা যায়নি৷
ছবি: DW/A. Islam
বইমেলায় হাজির টুটুল
গত বছরের ৩১শে অক্টোবর ঢাকায় একসঙ্গে দু’টি প্রকাশনী সংস্থায় হামলা হয়েছিল৷ জাগৃতি প্রকাশনীতে হামলায় খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বইয়ের অন্যতম প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দিপন৷ তবে শুদ্ধস্বরে হামলা হলেও প্রাণে বেঁচে যান অভিজিতের আরেক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল৷ দ্য হেগে আয়োজিত বইমেলায় হাজির ছিলেন তিনিও৷
ছবি: DW/A. Islam
মডারেটর জেকব ডে জঞ্জ
হেগে ব্লগারদের আলোচনায় মডারেটর হিসেবে ছিলেন ‘দ্য হেগ পিস প্রজেক্টের’ পরিচালক জেকব ডে জঞ্জ৷ তাঁর সংগঠন এবং মুক্তমনা ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়নের সহায়তায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে৷ বাংলাদেশে মুক্তমনা, মানবতাবাদী ব্লগারদের উপর হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন ডে জঞ্জ৷
ছবি: DW/A. Islam
রাজনীতিবদরা যেভাবে ব্লগার হত্যায় সমর্থন দিচ্ছে
হেগে বাংলা ব্লগারদের সম্মেলনে রেজার’স এজ নামের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়, যাতে মূলত ব্লগারদের হত্যা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দলের অবস্থান দেখানো হয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক্ষেত্রে একই৷
ছবি: DW/A. Islam
বাংলা ব্লগারদের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
হেগে ব্লগারদের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে অন্যান্যদের সঙ্গে ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের মডারেটর ও ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতার একজন বিচারক রাফিদা আহমেদ বন্যা (ডানে)৷
ছবি: DW/A. Islam
সবাই নির্বাসনে নন
লন্ডন থেকে হেগের বইমেলা ও আলোচনা সভায় আসেন নাস্তিক ব্লগার আরিফুর রহমান৷ মুক্তমনা, মানবতাবাদী ব্লগারদের উপর হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন তিনি৷ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার দেখতে ক্লিক করুন ‘আরো’ বাটনে৷
ছবি: DW/A. Islam
বইয়ের প্রদর্শনী
‘বাংলাদেশ সংহতি বইমেলা’ করা হয়েছিল ঢাকায় একুশে বইমেলায় যেতে না পারা ব্লগারদের একটি বিকল্প মেলার স্বাদ দিতে৷ অল্প কিছু বই সেখানে প্রদর্শন করা হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
নতুন চমক
হেগে বইমেলায় এক নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা দেন রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ বাংলা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে ‘মুক্তান্বেষা’ নামে নতুন এক ওয়েবসাইট শীঘ্রই চালু করবে মুক্তমনা৷