1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের ভোট যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ মার্চ ২০২২

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে সৃষ্ট মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ৷ প্রস্তাবটি ১৪০ ভোটে পাস হয়েছে৷

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ফাইল ছবি)ছবি: Timothy A. Clary/AFP

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের এই ভোট যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে৷ এই ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ বিশ্লেষকরাও বলছেন, একটা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিয়ে পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয় না, ফলে সামনের দিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনো চাপের মুখে জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেয়নি৷ ইউক্রেনকে মানবতার পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ৷ জাতিসংঘের ভোট ছিল মানবিক সহায়তার জন্য, ইউক্রেনের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত মানুষের পক্ষে তাই বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে৷ এই ইস্যুতে অবস্থান পরিবর্তন হয়নি, কোনো চাপের মুখেও বাংলাদেশ অবস্থান পরিবর্তন করেনি৷ এখন যুদ্ধে বড় দেশগুলো ছোটদের অকারণে টানাটানি করে, যা অনুচিত৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প কিভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে৷ জাতিসংঘের প্রথম প্রস্তাবে রাশিয়াকে একতরফাভাবে দোষারোপ করা হয়েছিল, তাই বাংলাদেশ তখন সমর্থন দেয়নি৷ বাংলাদেশ সব সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে, তাই মানবিক কারণে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ৷ দেশের মঙ্গলের জন্য যা করার, তাই করবে সরকার৷ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না৷ নির্যাতিতদের পক্ষে বাংলাদেশ৷ নির্যাতিত, আহতদের সুযোগ-সুবিধার পক্ষে আমরা৷’’

একটা ভোটের মাধ্যমে এটার পরিবর্তন হয় না: মোহাম্মদ জমির

This browser does not support the audio element.

ইউক্রেনে মানবিক সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে পক্ষে ভোট দেয় ১৪০ সদস্যদেশ৷ ভোটদানে বিরত ছিল ৩৮ দেশ৷ আর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে পাঁচটি দেশ৷ এই পাঁচ দেশ হলো রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হওয়া এ প্রস্তাব মানার বাধ্যবাধকতা নেই রাশিয়ার৷ এর আগেও ২ মার্চ ইউক্রেনে হামলা বন্ধের প্রস্তাব পাস হয় সাধারণ পরিষদে৷ তখন পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৪১ দেশ৷ বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল৷

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যেহেতু নীতিগতভাবে মানবাধিকার ক্ষুন্ন হোক এটা পছন্দ করে না, ফলে তারা আশা করছে, যুদ্ধ বিরতি হবে এবং পরে ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় যেসব সমস্যা আছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে শেষ হবে৷ সাধারণ মানুষ যেন এতে ক্ষতিগ্রস্থ না হন৷ বাংলাদেশের আগেও নীতি ছিল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক নয়৷ এখনও সেটাই আছে৷ একটা ভোটের মাধ্যমে এটার পরিবর্তন হয় না৷ এটা স্বীকৃতির মাধ্যমে পরিবর্তন হয়৷’’ 

আমি মনে করি বাংলাদেশের এই অবস্থানটা যথাযথ: মুন্সি ফয়েজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক প্রধান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘না, আমি মনে করি না যে, এই ভোট দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে নীতিগত কোনো পরিবর্তন হয়েছে৷ বাংলাদেশ সব সময় যুদ্ধের বিপক্ষে, কিন্তু মানবিক সাহায্যের পক্ষে৷ এখানে দেখতে হবে প্রস্তাবটা কি? কোন প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের প্রসঙ্গ আসছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু এটা নিয়ে ব্যাখা দিয়েছেন৷ আগের প্রস্তাবটা ছিল, যুদ্ধে এক পক্ষের সমর্থন করা, আরেক পক্ষের বিপক্ষে যাওয়া৷ এক পক্ষের নিন্দা পুরোটাই৷ এবার কিন্তু নিন্দার বিষয় না, যুদ্ধের কারণে বিরাট মানবিক বিপর্যয় ঘটছে ইউক্রেনে, তাদের মানবিক সহায়তা দরকার সেটার ব্যাপারে সমর্থন জানাচ্ছে বাংলাদেশ৷ এই দু'টোর মধ্যে বিরাট তফাৎ৷ আমার মনে হয় না যে, বাংলাদেশে নৈতিক অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে৷’’

কোনো চাপে পড়ে কি এই সমর্থন? জবাবে জনাব আহমেদ বলেন, ‘‘আগে যখন ভোট দেয়নি, এবারও ভোট না দিলে তো খুব বেশি পার্থক্য হতো না৷ আমার মনে হয় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বরং বাংলাদেশের অবস্থানটা আরো পরিস্কার হলো৷ আমি মনে করি বাংলাদেশের এই অবস্থানটা যথাযথ৷’’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি না, নীতিগত কোনো পরিবর্তন হয়েছে৷ আগের প্রস্তাবটা রাশিয়াকে অভিযুক্ত করার বিষয় ছিল৷ আর এটা যুদ্ধ সমাপ্তি এবং মানবিক করিডোরের বিষয়৷ ফলে বাংলাদেশের কাছে এই প্রস্তাবটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি৷ একটা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিয়ে তো পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয় না৷ আসলে ভোট দেওয়া আর ভোটদানে বিরত থাকা, দু'টোই কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত৷ এতে কিন্তু অনেকেই অখুশি হতে পারে৷ এই প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু বাংলাদেশ তুলে ধরতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়৷ এতে অবস্থানের পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত বহন করে না৷ বাংলাদেশ আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে চায়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ