1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রোবট দম্পতি’ রাকিব-খুশবু

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

শিরোনাম পড়ে ভাববেন না যে এই দম্পতি আবেগ, অনুভূতিহীন৷ বরং নিজেদের কাজে একে অপরকে সাহায্য করে তাঁরা বাংলাদেশের রোবটিক্স জগতে অবদান রেখে চলেছেন৷ হ্যাঁ, বলছি ‘রোবট দম্পতি’ রাকিব আর খুশবুর কথা৷

২০১১ সালের খুশবু আর রাকিব – সেসময় তাঁরা চুয়েটে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেনছবি: Rini Eshan Khushboo

দু'জনের পুরো নাম রাকিব রেজা ও রিনি ঈশান খুশবু৷ দু'জনে মিলে গড়ে তুলেছেন ‘প্ল্যানেটার বাংলাদেশ' নামের একটি কোম্পানি৷ খুশবু তার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা৷ আর রাকিব চিফ টেকনোলজি অফিসার৷ পাস করেছেন বুয়েট থেকে৷ আর খুশবু চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী৷

রোবট তৈরি ও রোবট নির্মাণের উপর প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে বছর কয়েক আগে দুজনে মিলে প্ল্যানেটার গড়ে তোলেন৷ সেই থেকে একসঙ্গে কাজ করছেন৷ তবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মাস দুয়েক আগে৷

রোবট দম্পতি

This browser does not support the audio element.

প্ল্যানেটার থেকে এ পর্যন্ত যেসব রোবট তৈরি হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়েল্ডিং করতে সমর্থ রোবট, ‘মানবগাড়ি', ‘টেলিপ্রেজেন্স' ইত্যাদি৷ ভবন পেইন্ট করতে পারে এমন রোবট তৈরির কাজ এখন চলছে৷

টেলিপ্রেজেন্স রোবট সম্পর্কে বলতে গিয়ে খুশবু জানালেন, কয়েকটি দেশে এ ধরনের রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে অফিসের বাইরে থেকেও অফিসে কে কী করছেন তা দেখতে পারেন অফিসের প্রধান৷ এছাড়া চিকিৎসকরা অন্য স্থানে থেকেও রোগীকে পরামর্শ দিতে পারেন, কর্মরত মায়েরা অফিসে বসে ঘরে সন্তানদের দেখে রাখতে পারবেন৷ টেলিপ্রেজেন্স রোবটকে এমন আরও অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে বলে জানান তিনি৷

এদিকে ‘মানবগাড়ি' রোবট হচ্ছে এমন এক রোবট যেটা নিজেই নিজের আকার পরিবর্তন করতে পারে৷ যেমন একসময় হয়ত সে মানুষ, তারপর নিজ থেকেই সে গাড়িতে রূপ নিতে পারে৷ শুধু গাড়ি নয়, অন্য কোনো রূপেও তাকে দেখা যেতে পারে৷ গোয়েন্দাগিরির কাজে এই রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান খুশবু৷ মানবগাড়ি নামটা খুশবুদের দেয়া৷ এর টেকনিক্যাল নাম ‘সেলফ রিকনফিগারেবল ট্রান্সফরমার রোবট৷' মানবগাড়ি রোবটকে আরও উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা৷

জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন

রোবটের প্রতি খুশবু-র আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে৷ সেসময় অনেক বই পড়তেন তিনি৷ এর মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন পড়তে তাঁর খুবই ভাল লাগতো৷ এছাড়া সায়েন্স ফিকশনধর্মী মুভিও ছিল তাঁর প্রিয়৷ সেই থেকে রোবটের প্রতি তাঁর প্রেম, রোবট বানানোর স্বপ্ন দেখা শুরু৷ স্বপ্ন স্বার্থক করতে ভর্তি হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট এর যন্ত্রকৌশল বিভাগে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অংশ নেন বাংলাদেশে তৈরি রোবট নিয়ে আয়োজিত প্রথম প্রতিযোগিতা ‘রোবোরেস'-এ৷ এরপর যান মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা-র রোবট তৈরি প্রতিযোগিতায়৷

চাকরি ছেড়ে রোবটিক্স প্রসারে

চুয়েট থেকে পাস করার পর চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেন৷ কিন্তু একমাস পরই তার মনে হয় সেটা তাঁর স্থান নয়৷ ফলে আবার ফিরে যান রোবটের জগতে৷ রোবট তৈরির পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে রোবটের প্রায়োগিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন৷ পাশাপাশি উৎসাহী শিক্ষার্থীদের দিচ্ছেন রোবট তৈরির প্রশিক্ষণ৷

বিভিন্ন কাজে রোবটের ব্যবহার নিয়ে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে কথা বলার পর খুশবু-র মনে হয়েছে, বেশিরভাগ কর্মকর্তা মনে করেন বাংলাদেশে এখনও রোবট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই৷ ‘‘তাঁরা মনে করেন, কোনো কাজে রোবট ব্যবহার মানে সে কাজের জন্য যে জনবল প্রয়োজন ছিল সেটা আর না লাগা৷ এতে করে বেকার সমস্যা তৈরি হতে পারে৷ এছাড়া রোবট ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন – যার অভাব রয়েছে বাংলাদেশে৷''

২০১৩ সালে নাসায় চুয়েটের রোবট উপস্থাপন করছেন খুশবুছবি: Rini Eshan Khushboo

তবে এই যুক্তিগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন খুশবু৷ কারণ ‘‘রোবট তৈরি ও বাজারজাত করতেওতো জনবল প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে৷ তাছাড়া বিভিন্ন বিপজ্জনক কাজে মানুষের পরিবর্তে রোবট পাঠানোটা বুদ্ধিমানের কাজ,'' বলে মনে করেন তিনি৷

রোবট রপ্তানির স্বপ্ন

খুশবু চান বাংলাদেশে এখন যেমন কম্পিউটার আর মোবাইল ফোন বিক্রি ও মেরামতির দোকান গড়ে উঠেছে, রোবটের ক্ষেত্রেও একদিন সেটা সত্যি হবে৷ এছাড়া একদিন রোবট রপ্তানিরও স্বপ্ন দেখেন তিনি৷ কয়েকদিন আগে জাপান থেকে পাওয়া একটি ই-মেল তাঁকে এমনটা ভাবতে উৎসাহী করছে৷ কারণ শ্রমের মূল্য কম বিবেচনায় জাপানের ঐ ইমেল প্রেরক বাংলাদেশ থেকে রোবট আমদানির সম্ভাবনা জানতে চেয়ে ইমেলটি করেছিলেন৷

‘মানবগাড়ি’ হাতে রাকিবছবি: Rini Eshan Khushboo

খুশবু-র উপলব্ধি, ‘‘অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত মানুষরা আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে৷ দেশের রপ্তানি আয়ের একটা বড় অংশ এনে দিচ্ছে তাঁরা৷ সেখানে আমরা শিক্ষিতরা কী করছি?'' তাই তাঁর স্বপ্ন, একদিন শিক্ষিতরাও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে এমন একটি খাতের অংশ হয়ে উঠবেন৷

পরিবারের সমর্থন

খুশবু তাঁর স্বপ্নপূরণে পরিবার থেকে সমর্থন পাচ্ছেন৷ একসময়, তিনি যেন নিজস্ব ল্যাব বানাতে পারেন সেজন্য তাঁর বাবা-মা বাসার একটা রুম ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ এখনও তাঁদের সমর্থনের কারণেই চাকরি ছেড়ে রোবট নিয়ে পড়ে থাকতে পারছেন খুশবু৷ ‘‘অবশ্য মা এখন মাঝেমধ্যে চাকরি করার কথা বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন,'' বলেও জানান তিনি৷

তবে খুশবু এখনও বিদেশে না গিয়ে দেশেই রোবটিক্সে আগ্রহী শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে চান৷ ‘‘আমি এমন পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেন আমার ছাত্র-ছাত্রীরা রোবটিক্সে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে কোনোরকম বাধা না পায়৷''

নিজের স্বামীও এক্ষেত্রে তাঁকে অনেক সহায়তা করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় এখন আমরা সারাক্ষণই রোবট নিয়ে থাকতে পারছি৷''

প্ল্যানেটার থেকে যত রোবট তৈরি হয়েছে তার বেশিরভাগই রাকিবের হাতে তৈরি বলে জানিয়ে খুশবু বলেন, ‘‘রাকিব খুবই কম কথা বলে৷ তাঁর মাথা খুবই ঠাণ্ডা৷ সে অনেক ধৈর্য সহকারে কাজ করতে পারে – রোবট নিয়ে কাজ করার জন্য যেটা প্রয়োজন৷ রাকিব যদি প্ল্যানেটার এর সিটিও না হতো তাহলে হয়তো এতগুলো রোবট তৈরি হতো না৷''

রাকিব বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন৷ ২০১১ সালে তিনি ‘রোবোরেস’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিলেন৷

সাক্ষাৎকার: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ