1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদমাধ্যমে নারী কতটা নিরাপদ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে নারীরা কতটা নিরাপদ?

Me Too-Proteste in Bangladesch
ফাইল ফটোছবি: bdnews24.com

একুশে টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার এম এম সেকান্দারকে রোববার রাতে তার বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব৷ পরে তাকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হস্তান্তর করা হয়৷ সোমবার তার নারী সহকর্মী তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন৷ সেকান্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷

ওই নারী ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, গত বছর ট্রেইনি রিপোর্টার হিসেবে একুশে টেলিভিশনে যোগ দেয়ার পর থেকেই তাঁকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল সেকান্দার৷ তিনি মালিক কর্তৃপক্ষ এবং সিইও'র কাছের লোক হওয়ায় অভিযোগ করতে এতদিন সাহস করেননি৷ এমনকি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছে৷ পরে সেকান্দার নিজের গাড়িতে করে বাসায় নামিয়ে দেয়ার নামে গাড়িতে যৌন হয়রানি করেছেন৷ অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার ইটিভি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন৷ বিষয়টি তিনি র‌্যাবকেও জানান৷

তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বলা হতো কোথাও কোনো অভিযোগ দিয়ে কাজ হবে না৷ আমি পরিস্থিতিও সেরকম দেখেছি৷ আমি কিছু বলতে গেলে আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হতো না৷ আমাকে বসিয়ে রাখা হতো৷ আমি ট্রেইনি রিপোর্টার, আমার পদোন্নতি হবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়৷ গত ২৭ জানুয়ারি সর্বশেষ গাড়ির মধ্যে আমাকে যৌন হয়রানি করা হয়৷''

মোহাম্মদ আলী শিকদার

This browser does not support the audio element.

একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে সেকান্দারকে সাসপেন্ড করি৷  আর ওই নারী সাংবাদিককে মামলা করতে বলি৷ কারণ, সে যে অভিযোগ করেছে, সেটা ফৌজদারী অপরাধ৷ তিনি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করছি৷ তার নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখছি৷''

আগেই ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি বৃহস্পতিবার৷ তার আগে ঘটনা আমাদের জানা ছিল না বা কেউ জানায়নি৷ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি৷''

একুশে টেলিভিশনের প্রাথমিক তদন্তে সেকান্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখনো তদন্ত চলছে৷ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সেকান্দার গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছে, এসব ঘটনার জন্য সিইও মিস্টার বুলবুল দায়ী৷ আমরা তা সংরক্ষণ করে রেকর্ডে নিয়েছি৷''

বিষয়টি নিয়ে একুশে টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার এম এম সেকান্দারের স্ত্রী'র সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার টেলিফোনে যেডাগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ আর সেকান্দারের ফেসবুক স্টেটাসের ব্যাপারেও তার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল

This browser does not support the audio element.

তবে তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমীন সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ আমার স্বামী নির্দোষ৷ তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে৷''

তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘রাতে র‌্যাব সেকান্দারকে বাসা থেকে নেয়ার সময় আমাদের জানানো হয়, গাড়ি দুর্ঘটনা করে এসেছে সেজন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পুরো ঘটনাটি সাজানো এবং ষড়যন্ত্র৷ যে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেটার কোনো প্রমাণ নেই৷''

সেকান্দারের ফেসবুব স্ট্যাটাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে সেকান্দারের ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে৷ এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা ছিল৷ সেই ডায়েরিটির একটি কপিও র‌্যাব নিয়েছে৷''

একুশে টেলিভিশনের সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেকান্দারের কিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যা  হয়, তাই হবে৷ আর প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেশের বাইরে আছেন৷ তিনি ফিরলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কী করা যায় সে ব্যাপরে সিদ্ধান্ত হবে৷''

তাঁকে দায়ী করে সেকান্দারের ফেসবুক স্ট্যাটাসের ব্যাপারে তিনি  বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত এবং বিশ্বাস করি, সেকান্দার ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেয়নি৷ তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছিল৷ হ্যাকড হওয়ার পর সে আমার কাছে এসে তা জানিয়েছে৷ সাইবার ক্রাইম ইউনিটে গিয়ে নিজে অভিযোগ করেছে৷ জিডি করেছে৷''

নাসিম আরা হক মিনু

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার ফেসবুক আইডিও হ্যাক করার চেষ্টা হয়েছিল৷ আমি দু'বার গুগল নোটিফিকেশন পেয়েছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘যারা আইডি হ্যাক করেছে, তারা কি উদ্দেশ্যে করেছে তারাই ভালো বলতে পারবেন৷''

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ এই প্রথম নয়৷ এর আগে ডিবিসি টেলিভিশনের একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তাঁরইপরিচিত এক নারী৷ যদিও ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানে নয়৷ এরপর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের  একজন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একইভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার সাবেক এক নারী সহকর্মী৷ একজন টিভি উপস্থাপকের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে৷ তবে এগুলোর কোনেটারই তদন্ত হয়নি বা তদন্ত শেষ হয়নি৷ ডেইলি স্টারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও তার ফল এখনো জানা যায়নি৷ আর ডিবিসি নিউজের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা শোনা গেলেও এখন সেই কমিটিরই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ নারীরা এখন সংবাদ মাধ্যমে আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশি সত্য, কিন্তু এখন আমরা যৌন হয়রানির অনেক অভিযোগও পাচ্ছি৷ কিন্তু অনেকেই  প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে চান না নানা কারণে৷ এর মধ্যে চাকরি হারানোর ভয় এবং পদোন্নতির বিষয়টি প্রধান৷ তারপরও  নারীরা সাহসী হচ্ছেন৷ কেউ কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন৷''

তিনি সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা ওইসব সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ তারা তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছেন৷ কিন্তু পরে আমরা তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাইনি৷''

শাবান মাহমুদ

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে সুপ্রিম কোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে৷ তাতে বলা হয়েছে, সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি করার কথা বলা হয়েছে৷ অভিযোগ নেয়া এবং তা তদন্তের কথা আছে৷ তদন্ত অনুযায়ী বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা আছে৷ নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমেই আদালতের নির্দেশ মেনে যৌন নিপীড়নরিরোধী কমিটি নাই৷ আমরা সম্প্রতি সম্পাদকদের চিঠি দিয়ে ওই কমিটি করার অনুরোধ জানিয়েছি৷''

একুশে টেলিভিশনেযৌন নিপীড়ন কোনো কমিটি বা জেন্ডার অ্যাডভাইজার আছে কিনা জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘‘না, আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো কমিটি নাই৷ আগেও ছিল না৷ তবে এখন আমরা এ ধরনের কমিটি করব৷'' 

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই৷ সংবাদ মাধ্যমগুলো এই নির্দেশনা উপেক্ষা করতে পারে না৷ এ নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের উদ্যোগেই মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত৷ জানতে চাওয়া উচিত কারা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করেছে বা করেনি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইদানিং সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশি৷ সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কথিত যৌন হয়রানির ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে৷ এর অবসান হওয়া প্রয়োজন৷ কমিটি থাকলে হয়তো এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ