বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্য প্রায় বন্ধ
বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ আসাম
১ অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্য পথ এখনো কার্যত বন্ধ। ব্যবসায়ীদের দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বাংলাদেশের ইলিশ ঢুকেছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তার পরেও হাসি ফোটেনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মুখে। বিশেষত উত্তর পূর্ব ভারতের ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫ অগাস্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্য শুরু হলেও এখনো দিনে ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হচ্ছে তাদের। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এখনো পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। যে ব্যাংকগুলির মাধ্যমে টাকার লেনদেন হতো, সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য কবে স্বাভাবিক হবে, তা স্পষ্ট নয়।
পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পথ উত্তর-পূর্ব ভারতে। উত্তরপূর্বের আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার সঙ্গে এই বাণিজ্য সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি ও রপ্তানির উপর। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। এই দুইমাসে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাদের। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্য আবার শুরু হলেও তা আগের মতো হচ্ছে না। ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
দাম প্রচুর, তাও কলকাতার বাজার মাত করলো বাংলাদেশের ইলিশ
কলকাতার বাজারে এলো বাংলাদেশের ইলিশ৷ শুক্রবার ভোরে পাইকারি বাজারে ইলিশ আসে৷ তারপর তা চলে যায় বাজারগুলিতে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইলিশ এলো
পাতিপুকুরের পাইকারি বাজারের ছবি৷ বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এসে পৌঁছালো৷ তারপর বাক্স থেকে তা বের করার প্রক্রিয়া শুরু হলো৷ এরপর পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বিক্রেতারা ইলিশ কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন৷ পাতিপুকুর ছাড়া কলকাতা ও হাওড়ায় আরো কয়েকটি পাইকারি বাজার আছে৷ সেখানেও ইলিশ এসেছে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছোট-বড় ইলিশ
দুই ধরনের ইলিশই এসেছে৷ কিছু ইলিশ এক কেজি বা তার বেশি ওজনের৷ কিছু ইলিশ এক কেজির কম ওজনের৷ পাতিপুকুরের এক বিক্রেতা দুই ধরনের ইলিশ তুলে দেখাচ্ছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজারে ইলিশ
এরপর কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতারা বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে এলেন৷ মানিকতলা, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেটের মতো বড় বাজারে তো বটেই, অন্য ছোট বাজারেও পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের ইলিশ৷ প্রতীক্ষা শেষ হলো৷ উপরের ছবিটি গড়িয়াহাট বাজারের, এখানে প্রচুর বিক্রেতা বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি করেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
খুবই দামি
পাইকারি বাজারে এক কেজির থেকে বড় ইলিশের দাম উঠেছে এক হাজার ছয়শ টাকা থেকে এক হাজার সাতশ টাকা৷ এক কেজির নিচের ইলিশের দাম এক হাজার চারশ টাকা থেকে এক হাজার পাঁচশ টাকা৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজারে আরো দামি
এই ইলিশ যখন বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে, তখন তার দাম চাওয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি৷ ফলে কলকাতার বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ এলেও তা হয়ত অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ তা সত্ত্বেও সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ অন্য খাতে খরচ কমিয়ে ইলিশ কিনে রসনা তৃপ্তি করছেন৷ কারণ, ইলিশ-ভক্তরা কবে আর দামের তোয়াক্কা করেছেন!
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এত দাম?
পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মাত্র ৫০ টন ইলিশ এসেছে৷ একশ টনের মতো এলে দাম একটু কম হতো৷ কিন্তু কম ইলিশ আসায় দাম তুলনায় বেশি৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তাও বিক্রি হচ্ছে
এত দাম সত্ত্বেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে৷ মাছে-ভাতে বাঙালি তো পাতে সুস্বাদু ইলিশের জন্য সবকিছু করতে পারে৷ উৎসবের মাসে খরচ এমনিতেই বেশি হয়৷ টাকার টানাটানি থাকে৷ তারপরেও ইলিশের জন্য তারা টাকা খরচ করতে পিছপা হচ্ছেন না৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গঙ্গা বনাম পদ্মার ইলিশ
গঙ্গার ইলিশেরও নামডাক কম নয়৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেকের মতে, পদ্মার ইলিশের স্বাদ অনেক ভালো৷ পাতিপুকুরের মাছ ব্যবসায়ী দুলাল সামন্ত জানিয়েছেন, ‘‘পদ্মার ইলিশের ওজন বেশি হয়৷ বাংলাদেশ থেকে এক কেজি থেকে এক কেজি আটশ গ্রাম ওজনের মাছ বেশি আসে৷ এক কেজির কম ওজনের মাছও আসে৷ কিন্তু গঙ্গার ইলিশ পাঁচশ থেকে সাতশ গ্রাম ওজনের হয়৷ পদ্মার ইলিশের স্বাদ তাই ভালো হয়৷’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যত দিন নদীর জলে...
গড়িয়াহাটে ইলিশ কিনছিলেন সুজিত পাত্র৷ তার স্পষ্ট কথা, ‘‘যারা ইলিশ কেনে, তারা দামের চিন্তা করে না৷ ইলিশ যত বেশি সময় নদীর জলে থাকবে, তত নোনা ভাব কেটে যাবে, তত তার স্বাদ বাড়বে৷ যারা ইলিশ খান, মাছ চেনেন, তারা ভালো করে বোঝেন, গঙ্গা ও পদ্মার ইলিশের তফাৎ কোথায়?’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইলিশপ্রেমীর কথা
গড়িয়াহাট বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন অজন্তা রায়৷ তিনি জানালেন, কাজের জন্য অনেকবার বাংলাদেশ গেছেন৷ বাংলাদেশের ইলিশের জন্য তার আলাদা টান আছে৷ এই ইলিশ খেলে মন ভালো হয়ে যায়৷ দাম অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাই তিনি ইলিশ কিনেই বাড়ি ফিরছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইলিশ চিনি কেমনে
লেক মার্কেটে এসে ইলিশ কিনছিলেন রুদ্র রায়৷ তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশের ইলিশ একটু লম্বাটে হয়৷ স্বাদেও অপূর্ব৷ যারা বাংলাদেশের ইলিশ চেনেন, তারা একবার দেখলেই বুঝে যাবেন, কোন ইলিশ ঢাকা থেকে এসেছে৷’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
স্বাদে রাজা
মানিকতলা বাজেরে ইলিশ কেনার ফাঁকে শ্যামল সাউ জানালেন, ‘‘কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি৷ কিন্তু তার স্বাদটাও দেখতে হবে৷ স্বাদটাই তো আসল৷ তাই কোলাঘাটে রূপনারায়ণের ইলিশ যেমন আমার পছন্দ, তেমনই পছন্দ বাংলাদেশের ইলিশ৷’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ক্রেতা ও বিক্রতা খুশি
বাংলাদেশের ইলিশ যে এত দাম সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে, তা দেখে বিক্রেতারাও খুশি৷ তারাও একটু লাভের মুখ দেখছেন যে৷ ক্রেতারাও খুশি, তারা ভালো ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ১৩টি স্থলবন্দর এবং ৪টি নদীবন্দর আছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, পেঁয়াজ, আদা, শুকনো লঙ্কা, ফল, কয়লা, পাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি রপ্তানি হয়। আমদানির ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সামগ্রি আসে কাঠের ফার্নিচার, প্লাস্টিক, সিমেন্ট, জিআই শিট, ওয়েস্ট কটন, আয়রন রড, মাছ, আচার, বিস্কুট-সহ বেশ কয়েকটি পানীয়।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের গুয়াহাটি শাখার সাধারণ সম্পাদক অমরেশ রায় জানিয়েছেন, ৫ অগাস্ট থেকে আমদানি এবং রপ্তানি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, "প্রথমত, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক কারণে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যাংকের সহায়তায় আমরা ব্যবসা করছিলাম, সেগুলো এখন বিভিন্ন নতুন নিয়মের অধীনে। ফলে আগের মতো লেনদেন সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় টাকা আদান-প্রদান হয় ডলারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক আমাদের সহায়তা করতো। কিন্তু তাদের ক্ষমতা এখন কমিয়ে আনা হয়েছে।"
বস্তুত, দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কিছু কিছু ট্রাক যেতে শুরু করেছে। তবে এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে এমনটা বলা যায় না।
বাংলাদেশের সিলেটের ব্যবসায়ী জয়ন্ত চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "যেসব ব্যাংক আগে ভারতের ব্যবসায়ীদের লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) দিত, তাদের এখন আর সেই অনুমতি নেই। বর্তমান শাসকদল বলছে বাংলাদেশ ডলারের পরিমাণ কম, ফলে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহু ব্যবসায়ী একসময় আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, তারা ভয়ে আত্মগোপন করে আছেন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে আমরা জানি না। তবে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই দেশের বাণিজ্য।"
আসামে বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আসামের বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফ৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
সুতারকান্দি সীমান্ত
আসামের সুতারকান্দি সীমান্ত৷ করিমগঞ্জ শহর থেকে কিছুটা দূরে এই সীমান্ত৷ এখানে বিএসএফের প্রহরা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷ সারাদিন ধরে চলছে প্রহরার কাজ৷ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এভাবেই নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফ৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
রাতেও প্রহরা
এখন রাতেও মার্চ হচ্ছে৷ প্রহরা চলছে৷ কোনোরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী৷ বিএসএফ কর্তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন৷ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
কুকুরের সাহায্য
সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে বিএসএফের মার্চ চলছে৷ সেখানে কুকুরের সাহায্যও নেয়া হচ্ছে৷ বিএসএফের প্রশিক্ষিত কুকুর৷ বিস্ফোরক খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
ওপারের দিকে নজর
বিএসএফ জওয়ানের হাতে দূরবিন৷ নজর কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে৷ কোনোরকম সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ছে কিনা, সেটাই দেখছেন ওই জওয়ান৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
প্রহরায় নারীরাও
বিএসএফের এই নারী কর্মী সীমান্ত প্রহরার কাজে আছেন৷ নজর রাখছেন পরিস্থিতির উপরে৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
গোবিন্দপুর গ্রাম
এই সীমান্তে গোবিন্দপুর হলো একটা বিশেষ গ্রাম৷ কারণ, এই গ্রামটি ভারতে, কিন্তু কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে৷ এই গ্রামে যেতে হলে কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে যেতে হয়৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
একদিকে ভারত, অন্যদিকে বাংলাদেশ
গ্রামের মধ্যেই সীমান্ত৷ বস্তুত বাড়ির উঠোনের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে সীমান্ত৷ মাটিতে রয়েছে ছোট তিনকোণা পিলার৷ তার একদিকে লেখা ইন্ডিয়া, অন্যদিকে বাংলাদেশ৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
গ্রামে বিএসএফের প্রহরা
সেই গ্রামেও বিএসএফ নজরদারি বাড়িয়েছে৷ গ্রামের কাদা ভর্তি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র জওয়ানরা৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
গ্রামও অনেকটা শুনশান
গ্রামেও লোক অনেকটা কম৷ অনেক বাড়ি শুনশান৷ বিএসএফ থাকায় মানুষের ভরসা আছে ঠিকই, কিন্তু একটা চিন্তাও আছে৷ ওপারের গোলমালের আঁচ এদিকে আসবে না তো! সূত্র জানাচ্ছে, প্রশাসনও এই মানুষদের দরকার পড়লে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
দরকারে ফোন
বিএসএফের তরফে বলে দেয়া হয়েছে, কোনো দরকার পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ সন্দেহজনক কিছু দেখলে ফোন করা হয়৷ বিএসএফ জওয়ানরা দ্রুত পৌঁছে যাবেন৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
গ্রামের বাইরে যেতে
কাজের সূত্রে বা দরকারে এই গ্রামের বাইরে যেতে হলে প্রথমে যেতে হয় কাঁটাতারের বেড়ার গেটে৷ সেখানে কার্ড দেখিয়ে, নাম লিখিয়ে, আঙুলের ছাপ দিয়ে বাইরে যাওয়া৷ কাজ শেষ হয়ে গেলে গেট বন্ধ হওয়ার আগে আবার গ্রামে ফিরে আসা আগের মতোই চলছে৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
বিএসএফের ব্যবস্থা
শুধু যে টহলদারির সংখ্যা বা জওয়ানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে তাই নয়, বিএসেফ আসাম সীমান্তে ক্যামেরা ও সেন্সরের সংখ্যাও বাড়িয়েছে৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা
কিছুদিন আগেই প্রবল বৃষ্টি হয়েছে এখানে৷ প্রায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ সেই জল থেকে গেছে৷ সেখানেই মাছ ধরছে একটি ভারতীয় নৌকা৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
কাঁটাতারের বেড়া
এদিকে ভারতের আসাম, ওদিকে বাংলাদেশের সিলেট৷ মাঝখানে রয়েছে এই কাঁটাতারের বেড়া৷ আর আছে ভারতের দিকে বিএসএফের কড়া পাহারা৷
ছবি: Biswa Kalyan Purkayastha
14 ছবি1 | 14
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে বেশ কিছু কড়া নিয়ম আছে। এর আওতায় কোনও বাইরের দেশে জিনিসপত্র পাঠানোর ছয় মাসের মধ্যে টাকা ফিরে না এলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। এক্ষেত্রে তাদের ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করা-সহ তাদের গ্রেফতার পর্যন্ত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংক ক্ষমতা হারানোর পর এখন ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এই আশঙ্কায় আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "আমরা জানি না বাংলাদেশের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এবং আমরা ইতিমধ্যেই যে টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি তা কবে ফেরত পাবো।'' তার দাবি, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় তিন হাজার ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ছোট-বড় ব্যবসা করেন। সময় মতো টাকা ফেরত না এলে এদের প্রায় সকলেই কম-বেশি সমস্যায় পড়বেন। লাইসেন্স হারানোর আশঙ্কাও আছে।
আগরতলার ব্যবসায়ী শংকর রায় জানিয়েছেন, "ভারত থেকে চাল, পেঁয়াজ-সহ বেশ কিছু সামগ্রী অল্প হলেও বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে প্রায় কোনও সামগ্রীই ভারতে আসছে না। আমরা লাগাতার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি তবে তারাও আতঙ্কিত। সেই দেশে স্থায়ী সরকার এলে হয়তো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠক করে সমাধান সূত্র বের করা যেতে পারে। তবে তা কবে হবে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।"
এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন আনুষাঙ্গিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষেরাও। করিমগঞ্জের সুতারকান্দি এলাকার ট্রাক মালিক ফয়জুল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তার অন্তত ১২টি ট্রাক আছে। গত ৫ অগাস্ট থেকে তা সীমান্তের পাশে দাঁড়িয়ে।
ফয়জুলের আক্ষেপ, "নিজের পরিবার চালানোর পাশাপাশি ট্রাক চালকদের পরিবারের খরচ আমাকে বহন করতে হচ্ছে। এভাবে আর বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। এক সময় এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে হবে, কারণ এই কদিনে বহু টাকা ঋণ হয়ে গেছে।"
সুতারকান্দি এলাকায় প্রায় ৩০০ দিনমজুর প্রতিদিন ট্রাক বোঝাইয়ের কাজ করেন। তাদেরও এখন কোনো কাজ নেই।
আসামের গুয়াহাটিতে থাকা বাংলাদেশ অতিরিক্ত হাই কমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে ডিডাব্লিউ যোগাযোগ করেছিল। সেখান থেকে বলা হয়েছে, '৫ অগাস্ট থেকে দুই দেশের ব্যবসায় খানিকটা ভাটা পড়েছে তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলাসম্ভব নয়।' বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সরকার কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা, এব্যাপারেও তারা কিছু জানে না।