ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পরই উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন– কেমন হবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক? পোশাক রপ্তানি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ কী?
বিজ্ঞাপন
সাক্ষাৎকারে এ সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর৷
ডয়চে ভেলে : ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা দুই দেশের সম্পর্কে কি কোনো প্রভাব ফেলেছে?
এম হুমায়ুন কবীর : আমার কাছে মনে হয় সম্পর্ক যেভাবে ছিল এখনও সেভাবেই আছে৷ তবে এটাকে রুটিন সম্পর্কই বলব৷ আরেকটা জায়গা গভীরভাবে দেখতে হবে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা কিন্তু এশিয়া পলিসির সঙ্গে সম্পর্কিত৷ কাজেই যুক্তরাষ্ট্র এশিয়াকে কিভাবে দেখে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এশিয়া পলিসি কী হবে– সেই রুপরেখা আমরা দেখিনি৷ যদিও আমরা দেখছি, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্টও সাম্প্রতিক সময়ে এশীয় কয়েকটি দেশ সফরকালে এশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিটমেন্ট আছে সেটা বজায় থাকবে বলে বলছেন৷ অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন টিটিপি থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷ কাজেই এখানে আমরা মিক্স সিগন্যাল পাচ্ছি৷ যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি এশীয় পলিসি সম্পর্কে এবং এশীয় নীতি পরিচালনা করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টেও কোনো কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রাপ্তি ঘটেনি৷ কাজেই সেই প্রেক্ষাপটেও আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন থাকবে সেটার উপর খানিকটা প্রভাব ফেলতে পারে৷ এই মুহুর্তে আমাদের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেমন ছিল, তেমনি আছে৷
Samir Dhaka Alap Interview of Ambassador M. Humayun Kabir 11.06.2017 - MP3-Stereo
আমাদের পণ্যের যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ ছিল, সেটা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি?
এই মুহুর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যের ব্যাপারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কি নীতি নেবে এটা নিয়েও এখনো সংশয় কাটেনি৷ জিএসপি বা খানিকটা শুল্ক রেয়াতে যে প্রবেশাধিকার পেতাম সেটা স্থগিত হয়েছে ২০১৩ সালে৷ ট্রাম্প প্রশাসনের এই মুহুর্ত পর্যন্ত যেহেতু কোনো নীতিমালা আসেনি, কাজেই এখনই এটা ফেরত পাওয়ার মতো কোনো অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয় না৷ তবে আমাদের দিক দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা পাবার প্রত্যাশা তো আমরা রাখি এবং আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷
বাংলাদেশ-আমেরিকা সামরিক সম্পর্ক বর্তমানে কোন পর্যায়ে?
সামরিক সম্পর্ক আগে যেমন ছিল সেই পর্যায়েই আছে৷ কিন্তু এবার যে বাজেট পেশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের কাছে, তাতে এই অঞ্চলের জন্য সামরিক খাতে ব্যয় কমাবার একটা প্রস্তাব আছে৷ যদি এটা কংগ্রেসে পাশ হয়, তাহলে হয়ত বাংলাদেশেও সামরিক সহায়তার বিষয়ে ঘাটতি পড়তে পারে৷ এটা একটা আশঙ্কা৷ আরেকটা যে দিক আছে, সেটা হলো, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিয়েছে৷ সেই অবস্থানের প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাড়তি সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু আছে৷
শান্তিরক্ষা তহবিল কমিয়ে দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ এতে কি বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে?
প্রস্তাবিত বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জাতিসংঘে তাদের যে অবদান বা চাঁদা সেটা কমাবার একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ এখন যে বাজেট প্রস্তাবনা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে সেটা যদি পাশ হয় তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান কমবে৷ সেটা কমার অর্থ দাঁড়াবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা পরিচালনার সক্ষমতাও খানিকটা কমে আসবে৷ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে পর্যায়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহন করছে তাতে খুব বড় ধরণের পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করছি না৷ তবে খানিকটা প্রভাব তো নিশ্চয়ই পড়বে৷
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে আসছে৷ এরপর বিভিন্ন সময়ে এই সম্পর্কে যোগ হয়েছে নানা মাত্রা৷ বর্তমানে দেশটি বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি-গন্তব্য এবং রেমিটেন্সের অন্যতম উৎস৷
ছবি: Minara Begum
বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যুদ্ধে তাণ্ডবলীলা চালাতে পাকিস্তান যে সব ব্যবহার করে, তার মধ্যে বহু অস্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি৷ এমনকি তারা বাংলাদেশ অভিমুখে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে নতুন এই রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঠেকাতে চেয়েছিল৷ পাকিস্তানের পরাজয় ঠেকাতে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আনারও উদ্যোগ নিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূকিকায় এসব নস্যাৎ হয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Everett Collection
শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি
যুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও দেশটির বহু মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং তহবিল সংগ্রহে ভূমিকা রাখে৷ পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিরুদ্ধেও তাঁরা সরব হন৷ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দৃশ্যত অবস্থান বদলায় মার্কিন সরকার৷ স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি রোধে দেশটির তৎপরতা দেখা গেছে৷
ছবি: Getty Images
বিনিয়োগ ও উন্নয়নে
স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ নতুন দেশটির উন্নয়নে অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়েও যায় তারা৷ ইউএসএইড-এর মতে, বর্তমানে তাদের অন্যতম বৃহৎ ‘ফরেন এইড মিশন’ রয়েছে বাংলাদেশে৷ অবশ্য শেভরন, কনকো ফিলিপের মতো জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে৷
ছবি: AP
বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার
একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যে আবার আমদানি-রপ্তানির হিসাব বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে৷ গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানির মধ্যে ৬ বিলিয়নই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Masterson
রেমিটেন্স
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ের ১ হাজার ৫৩২ কোটি মার্কিন ডলারের যে রেকর্ড হয়, তার মধ্যে ২৩৮ কোটি ডলারই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ দীর্ঘদিন যাবত দেশটি বাংলাদেশর প্রবাসী আয়ের শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে থাকছে৷
ছবি: Muntasir Mamun Imran
তৈরি পোশাক
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক৷ এই পণ্যও সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই রপ্তানি কিছুটা পড়তির দিকে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
জিএসপি
জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা যায়৷ যদিও তৈরি পোশাকখাত কোনোদিনই এই সুবিধা পায়নি, তথাপি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা বাতিল করে দেয়৷ বাংলাদেশ সরকার এখন বলছে, জিএসপি সুবিধা পাওয়া পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ায় এটা কেবল মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে আছে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/Suvra Kanti Das
ট্রাম্পযুগ
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণের ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে বাংলাদেশের তিক্ততার পর আসে মার্কিন নির্বাচন৷ সেখানে মুসলিমবিরোধী নানা মন্তব্য করলেও ট্রাম্প জিতে যাওয়ার পর মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে উষ্ণ অভিনন্দন জানায় বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
টিপিপি বাতিল
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তিতে বাংলাদেশ সরাসরি ছিল না৷ তবে এটা ঘিরে বাংলাদেশের উদ্বেগ ছিল৷ কারণ, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে যেতো৷ তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান এই রপ্তানি পণ্য অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তো৷ নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুসারে ট্রাম্প এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশ সরকার থেকে অভিনন্দনও জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/
ভূ-রাজনীতি
অদূরে চীন, পাশেই ভারত৷ সীমান্ত রয়েছে চীনের দীর্ঘদিনের মিত্র মিয়ানমারের সঙ্গেও৷ ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব পায় বড় শক্তিগুলোর কাছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশগুলোর পক্ষে ভূমিকা রেখেও আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভূক্তভোগী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ৷ এই চুক্তির আওতায় প্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা রয়েছে৷ ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় টান পড়বে এই অর্থ জোগানে৷ এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কার্বন নিঃসরণ না কমালে এর ফল ভোগ করতে হবে বাংলাদেশকেও৷
শান্তিরক্ষী বাহিনী
জাতিসংঘ পরিচালিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বড় একটা অংশ বাংলাদেশের৷ এটা বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়েরও একটা উৎসে পরিণত হয়েছে৷ অন্যদিকে জাতিসংঘের বাজেটের বড় একটা অংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছেন ট্রাম্প৷ সেক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনসহ অনেক কাজ পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে বলে জানায় সংস্থাটির এক মুখপাত্র৷ এটা উদ্বেগে ফেলেছে বাংলাদেশকেও৷
ছবি: UNMIS/John Charles
অভিবাসন নীতি
যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ অভিবাসী কমাতে ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ সমস্যায় ফেলবে সেখানে থাকা অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে৷
ছবি: Imago/Zuma Press
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে বড় একটা জায়গা জুড়ে থাকে দেশটির গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি৷ বাংলাদেশে নিয়োগ পাওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রায়ই এটা নিয়ে কথা বলতে বা সক্রিয় হতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
14 ছবি1 | 14
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ায় বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোতে কি কোনো প্রভাব পড়তে পারে?
খানিকটা তো হতেই পারে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা যে সহায়তা পেতাম, এখন তারা সেই জায়গা থেকে যদি অর্থ সরিয়ে নেয় বা সাহায্য স্থগিত করে, তাহলে আমাদের চলমান প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সহযোগিতা পাব না৷ সেক্ষেত্রে আমরা খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি৷
ট্রাম্প প্রশাসন হিলারি এবং ড. ইউনূস ইস্যুতে তদন্ত শুরু করেছে৷ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা কি কোনো প্রভাব ফেলতে পারে?
আসলে ট্রাম্প প্রশাসন নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের জুডিশিয়াল কমিটি এটার তদন্ত করছে৷ তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশের উপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা৷
আগেও দেখেছি, মার্কিন প্রশাসন আমাদের সরকারের ওপর নানা দিক দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ যেমন ড. ইউনূস এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যু৷ বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কি আমাদের সরকার কোনো ধরনের চাপে পড়তে পারে?
চাপ তো আমরা কখনোই চাই না৷ যে কোনো দেশের জন্যই চাপ দেয়া হোক সেটাও আমরা চাই না৷ তবে এখনও সেটা বলা যাবে না৷ ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক নীতি কী হবে সেটা নিয়েও তো সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা আমরা পাচ্ছি না৷ তবে আমাদের দিক থেকে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কেউ চাপ দিক সেটা আমরা চাই না৷
অ্যামেরিকা বাংলাদেশের নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে৷ আগামী জাতীয় নির্বাচনে অ্যামেরিকার প্রভাব কতটুকু থাকতে পারে?
ওয়াশিংটনে সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত
উইকিলিক্স অথবা অন্য কোনো ‘বেসরকারি’ সংগঠন নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই ভিতরের মানুষ৷ ট্রাম্প ক্রোধে ফুঁসলেও তার উৎস খুঁজে পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
টেলিফোন সংলাপ
ক্ষমতায় আসার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু বিদেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ আলোচনা করেছিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন৷ সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে ট্রাম্প-এর রোষের শিকার হয়েছিলেন ওবামা আমলের অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস৷ তিনিই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প টিমের যোগাযোগ নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছিলেন বলে ট্রাম্প সন্দেহ করেন৷
ছবি: Reuters/L. Buckman
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইএস সম্পর্কে এমন গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও অজানা ছিল৷ সেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Tass/Alexander Shcherbak
এফবিআই মেমো
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার পর তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান জেমস কোমি৷ তাঁকে বরখাস্ত করার পর সেই ‘মেমো’-র অস্তিত্ব ও বিবরণ ফাঁস হওয়ায় জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Harrer
পোপনীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা
হোয়াইট হাউসের কর্মী ও উপদেষ্টারা ট্রাম্প-এর অনেক সিদ্ধান্ত আগেভাগে জানতে পারেন না৷ ফলে তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যে তাঁর দ্রুত চিন্তার সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না৷ এমন ‘অরাজকতা’-র ফলে তথ্য-ফাঁসের ঘটনা ঘনঘন ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
অন্তর্ঘাতের অভিযোগ
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা এই সব তথ্য ফাঁসের ঘটনার মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া দেখছেন৷ অনির্বাচিত আমলারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনকে হেয় করতে এমন অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে বলে রক্ষণশীল মহলে অভিযোগ উঠছে৷ এই সব ‘লিক’-এর উৎস খুঁজে বার করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
6 ছবি1 | 6
বাংলাদেশের নির্বাচনে অ্যামেরিকার খুব প্রভাব আমি দেখি না৷ বাংলাদেশের নির্বাচনে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সেটা পরিচালনা করতে হবে৷ সরকার সেটা বাস্তবায়নের জন্য যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা দরকার সেটা করবে৷ এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পর্যবেক্ষণ করতে চায় সেটা ভালো৷ তাতে তো আমাদের আপত্তির কোনো কারণ দেখি না৷ এটা নির্বাচনকে যেন কোনোভাবেই প্রভাবিত না করে সেদিকে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে৷ আমরা সেটাই প্রত্যাশা করব৷
সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে অভিবাসীদের ব্যাপারে অনেক রকম আলোচনা হয়েছে৷ বাংলাদেশের যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?
এখনো পর্যন্ত নাই৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে যাচ্ছে, তাতে করে রাজনৈতিকভাবে তারা যদি চাপের মুখে পড়ে তাহলে অভিবাসন ইস্যুটা তাদের সস্তা রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে৷ তেমনটা যদি ঘটে তাহলে অন্যান্য দেশের অভিবাসীসের সঙ্গে বাংলাদেশিদের জন্যও খানিকটা সমস্যা হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা৷
আমাদের সরকার এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
পারে৷ নিশ্চয়ই পারে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেও করেছে, এখনো করতে পারে৷ কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো বাংলাদেশিরা ইতিবাচকভাবেই তাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে৷ তারা শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে বসবাস করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা ভিত্তি রচনা করছে৷ এসব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবিটা জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশিরা হয়ত খানিকটা সুবিধায় থাকবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷