বাংলাদেশের সহস্রাধিক স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব
৪ জুলাই ২০১০গত বছর প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ১২৮টি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হয়৷ এসব ল্যাবের প্রতিটিতে ১৬টি কম্পিউটার সহ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং প্রিন্টার৷ সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ৷ তবে, শুধু কম্পিউটার দিয়েই ক্ষান্ত নয় সরকার৷ বরং প্রতি জেলায় কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে৷ প্রশিক্ষকরা মূলত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কম্পিউটার শেখাচ্ছেন৷ সেইসঙ্গে কম্পিউটার ল্যাবগুলোর দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছেন তাঁরা৷
এত ল্যাব কেন?
প্রশ্ন জাগে, সরকারের এত কম্পিউটার ল্যাব তৈরির পেছনে উদ্দেশ্যটা আসলে কী? জবাব দিলেন, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক মুনির হাসান: সবাই যেন কম্পিউটার চালাতে পারে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে - এটাকে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি৷
১৪০০ স্কুলে কম্পিউটার
এতক্ষণ যেসব কম্পিউটার ল্যাবের কথা শুনলেন, সেগুলো হয়ে গেছে গত বছরই৷ এবছর সরকারের উদ্যোগ আরো বড় পরিসরে৷ লক্ষ্য, বিভিন্ন উপজেলার ১৪০০ স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি৷ এসব ল্যাবে থাকবে ৬টি করে কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ২টি করে ইউএসবি মোডেম৷
ঐশী'র গল্প
চলুন কথা বলি, সরকারের কম্পিউটার ল্যাব থেকে প্রশিক্ষণ নেয়, এরকম এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে৷ নাম ঐশী, পড়ছেন গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে৷ তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমাদেরকে কম্পিউটারের ইতিহাস এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানানো হয়েছে৷ এরপর মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, উইন্ডোজ শেখানো হয়৷
এই কম্পিউটার শিক্ষা কী কোন কাজে লাগবে ঐশীর৷ তিনি জানালেন, এখনতো কম্পিউটার ছাড়া চলাফেরা করা অনেক কঠিন৷ পড়াশোনা, ভাল চাকরি থেকে যেকোন কাজে কম্পিউটার দরকার৷ তাই, ভবিষ্যতে এই শিক্ষা অনেক কাজে দেবে৷
ঐশীর কথায়, তাদের কম্পিউটার ল্যাবে ইন্টারনেট থাকলেও তা শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারছে না৷
ডিজিটাল বাংলাদেশ
মুনির হোসেন জানালেন, সরকারের এই উদ্যোগে সাড়া মিলছে বেশ৷ কম্পিউটার ল্যাবের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার শেখাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ দেশের অন্যান্য স্কুল কলেজেও নাকি দেখা যাচ্ছে এমন উদ্যোগ৷
তবে, বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে৷ বিশেষ করে সরকারের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে এসব কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ কি, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন উন্নয়ন সংস্থা ডি.নেট এর নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান৷ তিনি বলেন, এখন প্রকল্প শেষ হবার পরে ল্যাবগুলো কিভাবে চলবে, স্কুলের দায়িত্ব কি হবে এবং কিভাবে তারা ব্যবহার করবে - এসব বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আমি জানি৷ সেক্ষেত্রে একটা আশঙ্কা থেকে যায় যে, ল্যাবগুলো যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে সেই উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা৷
মুনির হাসান এই প্রসঙ্গে বলেন, এই কম্পিউটারগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারাও সেটি ব্যবহার করতে পারবেন৷ পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও কমিউনিটির দায়িত্ব থাকবে ল্যাবগুলো দেখভালের৷
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার স্কুল-কলেজ ছাড়াও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সেন্টার তৈরি করছে৷ ইন্টারনেট সংযোগসহ ৩০টি করে কম্পিউটার দিয়ে তৈরি এসব সেন্টারে ব্যবহার করা হবে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার৷ এখন দেখা যাক, সরকারের এসব উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কতটা সহায়ক হয়৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী