বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে সত্য বলাই চ্যালেঞ্জ: জুলহাস আলম
৬ নভেম্বর ২০২০
ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এর এবারের পর্বে এমন মন্তব্য করেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ঢাকার ব্যুরোপ্রধান জুলহাস আলম৷
বিজ্ঞাপন
তার সঙ্গে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার লেখক, গীতিকার ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য৷ এবারের বিষয় ছিল ‘ফ্যাক্ট ট্রাম্প: মিডিয়া যার, নির্বাচনও তার?'
কথায় কথায় উঠে আসে মিডিয়ার নৈতিকতা ও সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের মতো বিষয়৷ এবিষয়ে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য বলেন যে, কাউকে সমালোচনার পরিসর মিডিয়ার কাছে রয়েছে কিন্তু সেটা যদি যুক্তিবহির্ভূত আক্রমণ হয়, তাহলে তা সমর্থনযোগ্য নয়৷ অন্যদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে চন্দ্রিল বলেন, ‘‘ভারতীয় গণমাধ্যমে বহু টিভি চ্যানেল বা পত্রপত্রিকা আছে, যারা আজকাল নিরপেক্ষতার ভানটুকুও করেনা৷ তারা কোনো না কোনো দলের হয়েই কথা বলে৷ ফলে যেখানে আগে আমরা গণমাধ্যমকে প্রশ্ন করতাম যে সে নিরপেক্ষ কি না, এখন তার বদলে আমরা তার পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়াকে প্রশ্ন করি৷ এটা আমি মানছি যে, ইদানিং তা (গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা) দেখা যায়না কিন্তু দেখা যায় না মানেই তা যে হতে পারে না, তা কিন্তু নয়৷ কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেত৷'' চন্দ্রিলের মত, ‘‘কোনো গণমাধ্যম পুরোপুরি নিরপেক্ষ না হতে পারলেও অনেকটা নিরপেক্ষ হওয়া যায়৷ অমুক ইস্যুতে না হওয়া গেলেও তমুক ইস্যুতে হওয়া যায়৷''
কার্যকর গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি?
গণমাধ্যমের কার্যকারিতা নিয়ে ১৬টি ডিজিটাল মিডিয়া স্টার্টআপের একটি দল কাজ করছে। মানসম্পন্ন সংবাদ প্রকাশ এবং টিকে থাকার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সংস্থাগুলোকে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় জানালেন বিভিন্ন দেশের এই সাংবাদিকেরা।
ছবি: DW Akademie
ডিজিটাল মিডিয়ার অগ্রদূত যারা
১৬টি ডিজিটাল মিডিয়া স্টার্টআপের একটি দল গণমাধ্যমের কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করছে। তারা জবাব দিচ্ছে: তাদের দেশে গণমাধ্যমের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়?
ছবি: DW Akademie
লিকা আনতাদজে, জর্জিয়া, চায় খানা
‘’নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ সংবাদ পরিবেশন, একই সাথে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা এবং ভালো পাঠক ও দর্শক তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
তানিয়া এল মন্তালভো, মেক্সিকো, অ্যানিমেল পলিটিকো
‘’মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনা, মানসম্পন্ন সংবাদ পরিবেশন, মাথায় রাখা পাঠকরা কোন বিষয়গুলো জানতে চায়-এগুলোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
টিডিয়ানে হামাদৌ, সেনেগাল, ওয়েস্তাফ নিউজ
‘’গণমাধ্যমের উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর কোন বাধ্যবাধকতা জনগণের নেই। তবে নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম তাদের জন্য কিছু একটা করতে পারে এবং এটার একটা মূল্য আছে, এই বিষয়টা তারা ভালো বোঝে।‘’
ছবি: DW Akademie
পিং জিন থুম, সিঙ্গাপুর, নিউ ন্যারাটিফ
‘’দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে আইন করেছে সরকার। সরকারের সহযোগীদের হাতে বেশিরভাগ গণমাধ্যমের মালিকানা। নিরপেক্ষ গণমাধ্যমকে হয়রানি করা হয়, মামলা দেয়া হয় বা কিনে নেয়া হয়। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স বা বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচিতে এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান বেশ নিচে।‘’
ছবি: DW Akademie
লুসিয়া মেনেনডেজ, গুয়াতেমালা, নোমাডা
‘’যে দেশের পাঠকেরা মানসম্পন্ন সাংবাদিকতায় অভ্যস্ত না, তাদের নিরপেক্ষ সংবাদে অন্তর্ভুক্ত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
কিরিলো লুকেরেংকো, ইউক্রেন, রোমাদস্কে রেডিও
‘’আইনের অবৈধ ব্যবহার ইউক্রেনের গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
লুসিয়া মার্টিনেজ, আর্জেন্টিনা, চেকুয়াদো
‘’সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যা দীর্ঘ সময় ধরে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা ধরে রাখবে।‘’
ছবি: DW Akademie
ডেভিড হিলাডগো ভেগা, পেরু, ওজো পাবলিকো
‘’লাতিন অ্যামেরিকায় গণমাধ্যমের কার্যকারিকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, জনগণের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরণের খবর পরিবেশন।‘’
ছবি: DW Akademie
রোমান ফিলিপভ, মলদোভা, রাইজ মলদোভা
‘’যে দেশে শাসকগোষ্ঠীর হাতে বেশিরভাগ গণমাধ্যম, সেখানে একটা নিরপেক্ষ গণমাধ্যম হিসেবে গুণগত ও মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
তামারা কারাইন, জার্ডান, এআরআইজে
‘’আয়, নেতৃত্ব এবং প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ।‘’
ছবি: DW Akademie
11 ছবি1 | 11
অতিথি জুলহাস আলমকে প্রশ্ন করা হয় যে, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে কী৷ উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতার কাছে এখন সত্য বলাই চ্যালেঞ্জ৷ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিয়মাবলী আমাদের বলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কিন্তু আমরা সাংবাদিকরা দেশে সব সময় তা নিশ্চিত করতে পারিনা৷ অনেকে সেই দায়িত্ব নিতে চাই না৷ কারণ আমাদের আশেপাশে আতঙ্কের পরিবেশ আছে, অনেক রকমের হুমকির সম্ভাবনা আছে৷ তাই আমরা অনেকেই সেলফ-সেন্সরড হয়ে যাই৷ বেসিক জায়গায় কথা বলার পরিধি অনেক কমে এসেছে৷ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার জায়গাও কমে গেছে৷ শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ নেই৷ এটাই বাস্তবতা৷ রাজনীতির বাস্তবতা না বদলালে, তারা উদারতা না দেখালে আমাদের বাস্তবতা বদলাবে না৷''
আজকের পর্বে এসব ছাড়াও আলোচিত হয় সংবাদমাধ্যমেরসাথে গণরুচির সম্পর্ক, ভারত-বাংলাদেশের নির্বাচনে মিডিয়ার ভূমিকার মতো আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷