বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর৷ নির্ভরযোগ্য ও সত্যনির্ভর তথ্যে জনগণের অধিকারের কথাও উল্লেখ করেছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স মেন' নামে একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র প্রকাশ হয়৷ তথ্যচিত্রে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কর্মকর্তাসহ উচ্চপর্যায়ের কিছু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়৷
এরপর সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া সংবাদ আকারে ছাপানো হলেও আল জাজিরায় তুলে ধরা দুর্নীতির বিষয়টি অধিকাংশ গণমাধ্যমেই প্রকাশ হয়নি৷
এরপরই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম নিজেদের সম্পাদকীয়তে এর কারণ হিসেবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং অন্য বিভিন্ন আইনের কিছু ধারাকে দায়ী করে৷
১০ ফেব্রুয়ারি ডয়চে ভেলের সাংবাদিক টিম সেবাস্টিয়ানের সঞ্চালনায় টক শো ‘কনফ্লিক্ট জোন'-এ অতিথি হিসেবে হাজির হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী৷
সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু শব্দচয়ন দুর্বল ও অস্পষ্ট হয়েছে, যার অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷''
কিন্তু পরদিনই ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা দেশের আইনের আদলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে' উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ৷
জিহাদি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার দায়ে ফ্রান্সের বিরোধী রাজনীতিবিদ মারিঁ ল্য পেনকে বিচারের মুখোমুখি করার সংবাদও স্ট্যাটাসের সঙ্গে শেয়ার করেন তিনি৷ ফ্রান্স ও জার্মানির হেট স্পিচ ও হলোকাস্ট ডিনায়া অ্যাক্টের উল্লেখ করেন সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনো, কোনো দেশেই অবাধ নয়৷''
এ বিষয়ে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য জানতে চায় ডয়চে ভেলে বাংলা৷ ফিরতি ইমেইলে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ‘মুক্ত ও স্বাধীনভাবে' কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর৷
তবে আলোচনায় আসা অন্যান্য বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর৷
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷