1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ মিয়ানমার সফর

৯ ডিসেম্বর ২০১৯

মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিচার শুরু হচ্ছে৷ এমন সময়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মিয়ানমার সফরে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাপ্রধানের এই সফরের সময় নির্বাচন ঠিক হয়নি৷

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদছবি: Wikipedia/S. Kar

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মিয়ানমারেরর সেনা প্রধানের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে রবিবার সেখানে গেছেন৷ ১১ ডিসেম্বর তার দেশে ফিরে আসার কথা৷ শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের এই সফরকে ‘শুভেচ্ছা সফর' বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷

এই সফরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর উপ প্রধান ও সেনাবাহিনী প্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন-এর সাথে সাক্ষাতের কর্মসূচি আছে৷ আইএসপিআর জানিয়েছে, ‘‘তারা দু'দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরাজমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ বিনিময়, শুভেচছা সফর ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশ হতে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করবেন৷'' 

‘‘মিয়ানমারকে সব দিক দিয়ে বয়কট করা জরুরি’’

This browser does not support the audio element.

পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় সড়ক নির্মাণ এবং মিয়ানমার কর্তৃক সীমান্ত এলাকায় স্থল মাইন ও আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ) স্থাপন সম্পর্কেও আলোচনা হতে পারে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে৷ বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মিয়ানমারের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, সামরিক জাদুঘরসহ একাধিক সামরিক ও অসামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করবেন৷

সেনাপ্রধান এই সফরের আগে নাগরিক সমাজের নামে দেশের বিশিষ্ট ২২ জন নাগরিক এই সফর বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন৷ তারা এক বিবৃতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের মিয়ানমার সফরের খবরে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে গণহত্যা প্রতিরোধকারী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের মায়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, সামরিক প্রবৃদ্ধি এবং সহযোগিতা আকাঙ্খা আমাদেরকে হতাশ এবং ক্রুদ্ধ করেছে৷ যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গণহত্যাকারী মিয়ানমার সরকার এখন বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে, সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে তোষামোদ করার এই নীতি জাতির জন্য লজ্জার, অমানবিক, এবং মর্যাদাহানিকর৷'' 

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ১০ ডিসেম্বর যখন রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হবে, তখন মানবতাবিরোধী মিয়ানমারের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যতম পক্ষ বাংলাদেশ৷ আমরা মনে করি, বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান অভিযুক্ত দেশের সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠক করলে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তা দেশের জন্য বড় কলঙ্কজক এবং অবমাননাকর ঘটনা হবে৷'' তারা এটাকে সরকারের ‘দ্বিমুখী ও আত্মঘাতী নীতি' বলে অভিহিত করেন৷
বিবৃতিতে স্বাক্ষকারীদের মধ্যে রয়েছেন, অধ্যাপক আ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সাব্বির আজিম, ব্যারিস্টার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মো. তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রমূখ৷

ড. মো. তানজীমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেখানে আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হচ্ছে, আমরা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের বিচার চাই, সেখানে এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফর কতটা প্রয়োজনীয়? এই সফর তাদের (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে৷ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দাবি কেউ কেউ করতে পারেন৷ কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুকে ঘিরে যা হয়েছে, তাতে সম্পর্ক আর বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার জায়গায় নেই৷ ফলে, এই সময়ে উচ্চ পর্যায়ের এই সফরের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই৷ এরজন্য আরো সময় নেয়া যেতো৷''

তিনি বলেন, ‘‘যখন মিয়ানমারের বিচার শুরু হয়েছে, তখন যদি আমাদের দিক থেকে একটি নৈতিক চাপ তৈরি করতে হয়, তাহলে মিয়ানমারকে সব দিক দিয়ে বয়কট করা জরুরি৷ আমরা যদি দেখাই, মিয়ামারের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, তাহলে তাদের ওপর কোনো নৈতিক চাপ আমরা সৃষ্টি করতে পারবো না৷ আর এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক সফর দিয়ে আমরা তো এখন পর্যন্ত কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারিনি৷ তাই এটা কোনো অপরিহার্য সফর নয়৷''

বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের বিচারে গাম্বিয়াকে সহায়তা করার জন্য এরই মধ্যে নেদারল্যান্ডসে গিয়েছে৷ বাংলাদেশ থেকে সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দলও গিয়েছে৷ আর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দলও নেদারল্যান্ডসে গেছে৷ আন্তর্জাতিক আইনের শিক্ষক ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যেহেতু কূটনৈতিকভাবে পারিনি, তাই এখন আমাদের কাজ হলো পর্যবেক্ষক হিসেবে গাম্বিয়াকে মিয়ানমারের বিচারে সব ধরনের সহায়তা করা৷ আমাদের কাছে যত তথ্য-প্রমাণ আছে, তা দিয়ে সহয়তা করা৷'' 

‘‘এই সময়ে সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সফর ভালো লাগেনি’’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই মামলায় কোনো পক্ষ নই সত্য, কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে আমরাও সাফারার৷ আর নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষাও আমাদের কাজ৷ তাই আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের এই বিচার আমাদের জন্যও বড় সুযোগ৷ কিন্তু ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সফর আমার কাছে ভালো লাগেনি৷ যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি৷ এই সময়টা সফরের জন্য যথোপযুক্ত কিনা তা আরেকটু ভেবে দেখা যেতো৷ আমার কাছে এই সময়ে সফর যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়নি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সেনাপ্রধানের এই সফরের মধ্য দিয়ে সরকার হয়তো মিয়ানমারকে বোঝাতে চাইছে যে, আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই৷''

এনিয়ে আগে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বাইরে আইএসপিআর নতুন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷ তবে সোমবার জানানো হয়, এটা পূর্বনির্ধারিত সফর৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ