বাংলাদেশে এখন বছরে এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয় অনলাইনে৷ আর প্রতিদিন অনলাইনে ডেলিভারি দেয়া হয় ২০ হাজার অর্ডার৷ দেশে ওয়েবভিত্তিক অনলাইন শপ আছে এক হাজার৷ ফেসবুক ভিত্তিক আছে ১০ হাজারেরও বেশি৷
বিজ্ঞাপন
জাকিয়া আহমেদ একজন কর্মজীবী নারী৷ অনলাইনেই তিনি বেশি কেনাকাটা করেন৷ চাল ডাল থেকে শুরু করে পোশাক, বই সব কিছু৷ প্রশ্ন করেছিলাম অনলাইনে কেন কেনা কাটা করেন? তাঁর জবাব, ‘‘সময় বাঁচে, শ্রম বা এমনকি অর্থও বাঁচে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাকে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তারপর যেটুকু সময় পাই তা যদি কেনা কাটা বা শপিং-এর পিছনেই ব্যয় করি, তাহলে নিজস্ব দরকারি কাজগুলো কবর কখন৷ তাই অনলাইনেই পছন্দ করি৷ অর্ডার দেই৷ বাসায় ঠিক সময় জিনিস পৌঁছে দেয় অনলাইন শপগুলো৷ পেমেন্টে দিয়ে দিই৷ কোনো ঝামেলা নেই৷''
পরের প্রশ্ন – দাম কি একই পরে? ‘‘না, তারা একটা সার্ভিস চার্জ নেয়৷ তবে তা তেমন বেশি নয়৷ কিন্তু নিজে শপিং সেন্টারে কিনতে গেলে সময় আর অর্থ দু'টোই যায়৷ আর ঢাকা শহরে যে ট্রাফিক জ্যাম তাতে শপিং বা বাজার করতে যাওয়া এক বিশাল যুদ্ধের ব্যাপার৷''
বাংলাদেশ ও বিশ্বের কয়েকটি জনপ্রিয় শপিং সাইট
সাধারণ দোকানে কেনাকাটার উপর অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো৷ অনলাইনের সঙ্গে সাধারণ দোকানের যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা সময়ই বলে দেবে৷ বিশ্বের ও বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইটের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
অ্যামাজন ডট কম
www.amazon.com এমন একটি ওয়েবসাইট প্রত্যেকটি দেশের জন্যই যাদের আলাদা ব্যবস্থাপনা আছে৷ ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া – ভোক্তাদের জন্য সবকিছু আছে অ্যামাজনে৷ এমনকি ভারতের মতো বিশাল দেশসহ অন্য দেশের স্থানীয় অনলাইন শপিং পোর্টালগুলোর সঙ্গে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে অ্যামাজন৷ এখন পর্যন্ত অ্যামাজন কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে৷
ছবি: amazon.com
ইবে ডট কম
www.ebay.com-এর ভাবনাটা অসাধারণ৷ এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে যেকোন মানুষ তার জিনিস ইচ্ছেমত বেচতে পারে এবং একই সময় নতুন বিক্রেতারা নতুন নতুন জিনিসও বিক্রি করতে পারে৷ তাই দেখা যায় এই সাইটে অদ্ভুতসব জিনিস নিয়ে এলে সেগুলোও অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়৷ ইবে-তে গেলেই দেখতে পাবেন আপনার যা চাই সবই আছে সেখানে৷ বিশ্বের কোথাও যে জিনিসটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ইবে-তে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
ছবি: DW
ওয়ালমার্ট ডট কম
না বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! ওয়ালমার্টেরও অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে www.walmart.com৷ অনলাইনে বিশাল পণ্যের সমাহার আছে তাদের৷ এমনকি দোকানে যেসব জিনিস পাওয়া যায় না, অনলাইনে সেসব জিনিস পাবেন আপনি৷ সবচেয়ে সুবিধা হলো দোকানে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই৷ ঘরে বসে একটা ক্লিক করলেই দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে ওয়ালমার্টের পণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
আলীবাবা ডট কম
www.alibaba.com বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ এই পোর্টাল থেকে আপনি অনেকরকম পণ্য কিনতে পারবেন৷ কৃষি থেকে শুরু করে রাসায়নিক সবধরনের দ্রব্য পাওয়া যায় এখানে, যাই কিনুন ঠিক আপনার বাসায় পৌঁছে দেবে৷ কোন পণ্য অর্ডার করার পর তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং দাম নেয়ার পদ্ধতি বেশ সন্তোষজনক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Ming
ফ্লিপকার্ট ডট কম
www.flipkart.com এটি একটি ভারতীয় অনলাইন শপিং এর ওয়েবসাইট, যেটি বিশ্বব্যাপী বাজার বিস্তার করেছে৷ এশিয়ার মানুষের কাছে এই সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়৷ অ্যামাজনের পর কেনাকাটার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্লিপকার্ট৷ এই সাইটটি শুরু হয়েছিল অনলাইনে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে, এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে এটি৷
ছবি: flipkart.com
রকমারি ডট কম, বাংলাদেশ
অনলাইন এ বই কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে www.rokomari.com-এ একবার আপনাকে প্রবেশ করতেই হবে৷ ২০১২ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই সাইটটির যাত্রা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে অল্প খরচে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই৷
বিক্রয় ডট কম, বাংলাদেশ
বাংলাদেশে কেনা-বেচার ক্ষেত্রে এই সাইটটি খুব জনপ্রিয়৷ বাড়ি, গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন যা বিক্রি করতে বা কিনতে চান অতি সহজেই এই সাইটটির সাহায্যে তা করতে পারবেন৷ এমনকি চাকরির খোঁজও পাবেন এখানে৷ শুধু তাই নয় কোরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যে www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷
দারাজ ডট কম ডট বিডি
www.daraz.com.bd এটি জার্মানভিত্তিক কোম্পানির একটি শপিং সাইট৷ এখানে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্সসহ প্রায় ব্যবহারিক সব পণ্য পাওয়া যায়৷
আজকের ডিল ডট কম
www.ajkerdeal.com বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ বাংলাদেশভিত্তিক প্রথম বাংলা ই-কমার্স এবং বাংলাদেশি মালিকানায় বাংলাদেশি প্রথম ই-কমার্স সাইট৷ আজকের ডিল ডট কম বিডি জবস-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান৷ এই সাইট থেকে আপনি প্রায় সবধরনের কেনাকাটা করতে পারবেন৷
প্রিয়শপ ডট কম
www.priyoshop.com ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়৷ অথ্যাধুনিক ট্রেন্ডের পোশাক থেকে শুরু করে গহনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি – সবকিছুই পাওয়া যায় এই সাইটে৷
সহজ ডট কম
www.shohoz.com বাংলাদেশের এই অনলাইন শপিং সাইটটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঈদের সময় বাসের টিকেট বিক্রির জন্য৷ ঈদে বাস ও ট্রেনের টিকেট কেনার ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই এখন সহজ ডট কম-এর আশ্রয় নেন৷ এছাড়া বিভিন্ন কনসার্টসহ নানা ইভেন্টের টিকেট কেনার অন্যতম মাধ্যম এখন সহজ ডট কম৷
11 ছবি1 | 11
পণ্যের মান কি ঠিক থাকে? জাকিয়া আহমেদ জানান, ‘‘আমি এখন পর্যন্ত পণ্যের মান নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যায় পরিনি৷ অনলাইনে যে পণ্যটি দেখেছি, পণ্যটি সেই মানেরই পেয়েছি৷'' তবে তাঁর কথায়, ‘‘কর্মজীবী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং তরুণরাই অনলাইন শপিং-এর দিকে বেশি ঝুকছে৷''
বাংলাদেশে কর্মপদ্ধতির দিক থেকে অনলাইন শপিং-এর দু'ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে৷ এক ধরনের প্রতিষ্ঠান হলো, যারা পুরোটাই অনলাইন শপ৷ অনণাইনেই তাদের পণ্যের নমুনা এবং দাম দেয়া থাকে৷ ক্রেতারা অনলাইনেই পণ্য পছন্দ এবং অর্ডার করেন৷ ক্রেতাকে তাঁর বাসা বা ডেলিভারি পয়েন্টে পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়৷ আরেক ধরনের হলো অনলাইন মার্কেট প্লেস৷ এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় সক্রিয় থাকেন৷ কেউ পণ্য বিক্রির অফার করেন৷ আবার কেউ বা কিনতে চান৷ যোগাযোগটা অনলাইনের হলে বেচা-কেনা হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে৷ আর এই কেনা-বেচায় অনলাইন মার্কেট প্লেসের কোনো দায় থাকে না৷
Razib Ahmad - MP3-Stereo
অনলাইন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি ফাহিম মাশরুর ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের হিসেবে এখন শুধু অনলাইন ওয়েবসাইটেই (ফেসবুক বাদে) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার অর্ডার প্রসেস হয়৷ বছরে টাকার হিসেবে আড়াইশ' থেকে তিনশ' কোটি টাকার লেনদেন হয়৷ আর অনলাইনে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে সব ধরনের পণ্যই পওয়া যায় – পোশাক, ঘড়ি, টুপি সবকিছু৷ এখন অনলাইনে টিকেট বিক্রিসহ আরো অনেক ধরনের সেবা দেয়া হয়৷ এমনকি স্বাস্থ্যসেবাও দেয়া হয় অনলাইনে৷ ফেসবুক লাইভের মাধ্যমেও দেয়া হয় চিকিৎসা পরামর্শ৷''
তিনি জানান, ‘‘ঢাকা শহরে পণ্য ডেলিভারির সময় টাকা পরিশোধ করতে হয়৷ এছাড়া বিকাশ বা অন্য মাধ্যমেও টাকা লেনদেন হয়৷ আর ঢাকার বাইরে পণ্য পাঠানো হয় কুরিয়ার সর্ভিসের মাধ্যমে৷ সেক্ষেত্রে আগে পেমেন্ট করতে হয়৷''
প্রকৃতির দিক দেয়ে আবার বাংলাদেশে দু'ধরনের অনলাইন শপ আছে৷ এক ধরনের হলো যারা নিজোরই ওয়েবসাইট খুলে পণ্য বেচা-কেনা করেন৷ আরেক ধরনের হলো ফেসবুকে পেজ খুলে কাজ করেন৷ ফাহিম মশরুর বলেন, ‘‘ওয়েবসাইট ভিত্তিক বড় ধরনের অনলাইন শপ ৪০টির মতো আছে এখানে৷ তবে ফেসবুকে কতগুলো আছে তা বলা মুশকিল৷''
Nowrin Akhter - MP3-Stereo
বাংলাদেশে এখন ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স সবচয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর সভাপতি এবং ইংলিশ সার্চ-এর কর্ণধার রাজীব আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে এখন ওয়েবসাইট ভিত্তিক এক হাজার এবং ফেসবুক ভিত্তিক ১০ হাজার ই-কমার্স সাইট আছে৷ ২০১৬ সালে আমাদের হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে৷ প্রতিদিন ডেলিভারি দেয়া হয়েছে ২০ হাজার অর্ডার৷''
অনলাইন শপিং-এর এই দ্রুত অগ্রগতি কেন? এমন প্রশ্ন করেছিলাম অনলাইন ক্রেতা অমি আজাদের কাছে৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা কাছে বিষয়টি এরকম যে, আমি যে পণ্যটি কিনতে চাই তা কোথায় পাব? তারা কোন মডেলটি আমি নেব? তার গুণাগুণ কী? এটা মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বের করা এবং জানা কঠিন৷ কিন্তু অনলাইনে সহজেই জানা যায়৷ এছাড়া পণ্যটি যেহেতেু অনলাইনে পাওয়া যায়, তাহলে আর মার্কেটে যাওয়া কেন?''
তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অনলাইন শপিং-এ প্রতারণাও আছে৷ তেলাপোকা মারার একটি যন্ত্রের সুন্দর বিজ্ঞাপন দিয়ে অফার দিলো একটি অনলাইন শপ৷ কেনার পর দেখা গেল তেলাপোকা মরে না৷ প্রতিকার চেয়েও তখন তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না৷ কারণ তারা তখন হয়ত আমাকেই ব্লক করে দিয়েছে৷ অথবা আমার স্ত্রীর জন্য একবার অনলাইন থেকে সালোয়ার কামিজ পছন্দ করলাম৷ ডেলিভারির সময় দেখি, অনলাইনে যে ছবি ছিল তার সঙ্গে মিল নেই৷ ওয়ান টাইম ব্যবসা আর কি!''
Fahim Masrur - MP3-Stereo
প্রতারণার প্রসঙ্গটিতে রাজীব আহমেদ বলেন, ‘‘প্রতারণা আছে তবে তা শতকরা হিসেবে কম৷ ক্রেতারা অভিযোগ করতে পারেন তিন জায়গায়৷ কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার ফোরাম এবং আমাদের ইক্যাব-এ৷''
অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোতে প্রতারণা হয় সবচেয়ে বেশি৷ কারণ এখানে মার্কেট প্লেস সরারি পণ্য বিক্রি করে না৷ বিজ্ঞাপন দেখে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পণ্য বেচা-কেনা হয়৷ তাই ফাহিম মাশরুরের কথায়, ‘‘এ জন্য নীতিমালা প্রয়োজন৷''
অনলাইনে কোরবানীর গরু, কবুতর, হাঁস-মুরগিও পাওয়া যায়৷ আবার সৌখিন জিনিসও বাদ যায় না৷ এই সুযোগে যারা কখনো দোকান খুলে পণ্য বিক্রির চিন্তাও করেননি, তারা হয়ে যাচ্ছেন অনলাইন মার্কেটার৷ তারা ঘরে বসেই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পচ্ছেন৷ যা ছিল তার শখের পণ্য, তা-ই হয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য৷ ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বিক্রি করছেন৷ লাইক বাড়ছে বিক্রিও বাড়ছে – যেমন বললেন নওরীন আক্তার৷
Omi Azad - MP3-Stereo
নওরীনের তারানা নামে একপি ফেসবুক পেজ রয়েছে৷ এর মাধ্যমে তিনি হ্যান্ড মেড পণ্য বিক্রি করে৷ বিশেষ করে হ্যান্ড মেড জুয়েলারি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পেশার কারণে আমাকে অনলাইনে অনেক সময় দিতে হয়৷ ফেসবুকিং করি৷ এক সময় মনে হয় ফেসবুকে অযথা সময় কেন নষ্ট করব? আর সেখান থেকেই ফেসবুকে অনলাইন শপ-এর কাজ শুরু করি৷ এখন আমার পেজের লাইক ১৩ হাজার৷ তাছাড়া পণ্যে প্রচুর সাড়াও পাচ্ছি৷ আমরা ঢাকায় হোম ডেভিারি দেই৷ আর ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠাই৷''
ঢাকা ভিত্তিক অনলাইন শপগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, আগে বেশিরভাগ অর্ডার আসতো ঢাকা শহরের মধ্য থেকে৷ কিন্তু এখন দেশের ৬৪টি জেলা থেকেই নিয়মিত অর্ডার আসছে৷ তাছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসগুলো জানায়, ঢাকার বাইরে অনলাইন শপগুলোর পণ্য পাঠানোর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে৷ ঈদসহ নানা আয়োজনে এটা আরো বেড়ে যায়৷ সব মিলিয়ে ইন্টারনেটের আওতা যত বাড়বে, অনলাইন শপিং এবং মার্কেটিং ততই এগিয়ে যাবে৷ এতে মোবাইল ফোন রাখছে বড় ভূমিকাষ৷ কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনলাইন ইউজার অনেক বেশি৷
শপিং করাকে সহজ ও আনন্দময় করতে কিছু টিপস
কোনো উপলক্ষ্য মানেই শপিং, যদিও অনেকেই তা করতে ভালোবাসেন৷ তবুও মাঝে মাঝে উপহার কেনা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়৷ এই ছবিঘরে পাবেন কিছু টিপস, যা শপিং করাকে আনন্দময় করে তুলবে৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
লিস্ট তৈরির পর কেনা শুরু
কোনো উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের জন্য উপহার কেনা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ সত্যি কথা বলতে কি, তাড়া থাকলে প্রয়োজনের সময় সঠিক উপহারটি খুঁজে পাওয়া যায় না, অথবা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়৷ তাই অবসর সময়ে কার জন্য কী কেনা হবে, প্রথমেই তার একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলুন৷ তা না হলে, দোকানে হাজারো জিনিস দেখে চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাতে পারে৷ এছাড়া জানা থাকলে যে দোকান থেকে যা কিনবেন, তার নামও লিস্টে লিখে রাখুন৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
কার জন্য কী কিনবেন?
কার জন্য কী কিনবেন – তার লিস্ট যদি তৈরি থাকে, অর্থাৎ বড়দের, ছোটদের, ছেলেদের, মেয়েদের – এ সব যদি ঠিক করা থাকে, তবে সেভাবেই দোকানে যাওয়া যায়৷ তখন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে সেভাবে দৌড়াতে হয় না৷ এতে সময়ও কম লাগে৷ পছন্দের বা সঠিক সাইজের পোশাক বা জিনসটি সে মুহূর্তে দোকানে না থাকলে, অর্ডার দিয়ে দিন৷ পরে সময়মতো নিয়ে আসলেই হলো!
ছবি: Gustavo Caballero/Getty Images for Build-a-Bear
নোট করে নিন
বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে থাকে আকর্ষণীয় উপহারের বিজ্ঞাপন বাড়িতে বসে ভালো করে দেখে ‘নোট’ করে রাখুন৷ আপনার পছন্দের জিনিস নয়, প্রথমে দূরের দোকানে যান এবং সেগুলোতে আগে কিনে ফেলুন৷ অনেক সময় কার জন্য কী কেনা হবে – সে বিষয়ে ঠিক ‘আইডিয়া’ মাথায় আসে না৷ এক্ষেত্রে ঐ বিজ্ঞাপনগুলো বেশ উপকারী৷ তাই শপিং-এ বের হওয়ার সময় বিজ্ঞাপনের কাগজগুলো অবশ্যই সঙ্গে রাখুন৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
অনলাইন
বর্তমানে এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করেন৷ এতে বাইরে বের হওয়া বা রাস্তায় সময় নষ্ট হওয়ার ঝামেলা থাকে না৷ তবে আগেভাগেই পছন্দের জিনিসটি অর্ডার দিয়ে দিন, কারণ পছন্দ না হলে আবার ফেরত পাঠিয়ে নতুন জিনিস বাড়িতে আসতে খানিকটা সময় চলে যায়৷ আর একেবারেই পছন্দ না হলে, অনলাইনে কেনা জিনিসটি যে ফেরত পাঠিয়ে আবারো শপিং করতে যেতে হবে!
উইন্ডো শপিং
অনেকেই উইন্ডো শপিং করতে বেশ পছন্দ করেন৷ দোকানে যখন ভিড় থাকে না, তখন পরিবারের লোকজন বা একাই দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা জিনিসগুলো ধীরে-সুস্থে দেখা যায়৷ সেখানে জিনিস পছন্দ হলে নোটবুকে টুকে নেবেন বা মোবাইলে ছবি তুলে নেবেন৷ জার্মানিতে এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় দোকানে জামা, জুতোর পরে ছবি তোলে৷ নতুন পোশাকে কেমন লাগছে – পরে তা ভালোভাবে ভেবে কিনতে আসে৷
ছবি: Martin Roemers/laif
পরিচিতদের থেকে জেনে নিন
অনেক সময় দেখা যায় অনেকদিন থেকে আপনি একটি সুন্দর শাড়ি বা ড্রেস খুঁজেও পাননি৷ হঠাৎ একদিন আপনারই পরিচিত একজনের গায়ে আপনার পছন্দের পোশাকটি দেখলেন৷ কোনো দ্বিধা না করে তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিন দোকানের নাম-ঠিকানা৷ এতে আপনি পছন্দের জিনসটি পাবেন এবং যাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, সেও কিন্তু অখুশি হবেন না!
ছবি: BilderBox
প্যাকিং
বাড়িতে ফিরে জিনিসগুলো দেখে নিন এবং যেগুলো কেনা হয়েছে সেগুলোর নাম লিস্ট থেকে কেটে দিন৷ একটু অবসর পেলে উপহারগুলো সুন্দর কাগজে মুড়ে নাম লিখে রেখে দিন৷ এই কাজটি করার পর নিজেকে অনেক হালকা মনে হবে এবং উপহার দেওয়ার কাজটাও অনেকটা এগিয়ে যাবে৷ আসলে শপিং-এর প্ল্যান যত আগে হবে, কাজটি ততই সহজ হবে৷
ছবি: Fotolia/julien tromeur
খাওয়া-দাওয়া
যে কোনো উপলক্ষ্যেকে সফল করতে চাই মজাদার খাবার আর এ নিয়ম সারা বিশ্বেই এক রকম৷ এর জন্য যে সব খাবার ঘরে বা ফ্রিজে কিনে রাখা যায়, তা আগে থেকেই বাড়িতে এনে রাখুন৷ অবশ্য তাজা জিনিস, যেমন শাক-সবজি, ফলমূল – এ সব কিন্তু কিনবেন একেবারে শেষে৷ তবে খাবারের লিস্টটাও যদি আগে থেকে তৈরি করে রাখা যায়, তাতে আপনারই চিন্তা দূর হবে৷ আর অতিথি আসার পর আপ্যায়ন করতে অনেক সুবিধা হবে৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
8 ছবি1 | 8
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷