1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

বাংলাদেশে আবহাওয়ায় পরিবর্তনে বাড়ছে শিশু ডায়রিয়া রোগী

৪ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে৷ বিশেষজ্ঞরা এজন্য আবহাওয়া পরিবর্তনকে অন্যতম কারণ মনে করছেন৷

বাংলাদেশের একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa

ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) প্রতিদিন গড়ে সাড়ে আটশ ডায়ারিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন৷ তাদের ৮০ ভাগের বয়স ২ বছরের কম৷

১৪ মাস বয়সি শিশু ইবাদতকে নিয়ে মা শ্যামলী বেগম এসেছেন আইসিডিডিআরবিতে৷ সন্তানকে নিয়ে মাদারীপুরের শিবচর থেকে এসেছেন তিনি৷

শ্যামলী বেগম বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ডাক্তার দেখিয়েছি, বাচ্চার হাতে স্যালাইন দিতে রগ খুঁজে পায় না, আমার বাচ্চার চারদিনে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই ঢাকায় নিয়ে এসেছি৷ এখন ইবাদতের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন৷''

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডায়রিয়া অনেক কারণে হয়, তারমধ্যে রোটা ভাইরাস একটা কারণ৷ এই ডায়রিয়ার লক্ষণ হচ্ছে, শিশুর অল্প জ্বর থাকে, আবার অনেক সময় জ্বর থাকেও না, পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়৷ কোন ক্ষেত্রে সাদা পায়খানা হয়, কোনটা আবার হলুদ রংয়ের পায়খানা হয়৷ এই ডায়রিয়াতে রক্ত যায় না, শুরুতে জ্বর থাকলেও তা চলে যায়৷ এই ধরনের ডায়রিয়া ভালো হতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগে৷

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি রোগী: ডা. শোয়েব বিন ইসলাম

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিশুদের ডায়রিয়া বেশি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন৷ বড় মানুষ এটা মানিয়ে নিতে পারলেও শিশুরা পারে না৷ আমরা বলি, আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন৷ শিশু হাসপাতালে তো রোগীদের জায়গা দেওয়ার অবস্থা নেই৷অধিকাংশকেই ভর্তি করা লাগছে না৷ অনেকে হাসপাতালে আনতে দেরি করার কারণে শিশুদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ তাদের ভর্তি করতে হচ্ছে৷ ধূলাবালি থেকে শিশুদের দূরে রাখা এবং ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে৷’’

ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, ‘‘ডায়রিয়া হলে মায়েরা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে৷ প্রথম হলো, পাতলা পায়খানা হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে আপনার বাচ্চার ওজন যত কেজি, তত চামচ স্যালাইন পানি খাওয়ান৷ ৫ এমএল এর চামচে মেপে স্যালাইন খাওয়াতে হবে৷ ডায়রিয়া চলাকালে শিশুকে ধীরে ধীরে স্যালাইন খাওয়াতে হবে৷ তাহলে শিশু বমি করবে না৷ এছাড়া আমরা জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়াতে বলি৷ আর এসময় শিশু স্বাভাবিক খাবারই খাবে৷ মায়ের বুকের দুধ কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না৷ এভাবে ৫-৭ দিনে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে, তবে অল্প কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে, সুস্থ হতে৷ স্যালাইন বানানোর ১২ ঘন্টা পরে তা আর খাওয়া যাবে না৷’’

আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে বছরজুড়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা হয়৷ বছরে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা নেয়৷ আইসিডিডিআরবির শর্ট স্টে ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. শোয়েব বিন ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতিবছর শীতের শুরুতে আমাদের দেশে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ যদিও বিগত দুই বছরের তুলনায় এবছর কিছুটা বেশি৷ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি রোগী দেখা যাচ্ছে৷ ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকা থেকেই শিশুরা ডায়রিয়া নিয়ে আসছে৷ এবার যেটা দেখা যাচ্ছে, গত দুই সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৮৫০ জন থেকে ৯০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে৷ এর ৮০ শতাংশ রোগীর বয়স ২ বছরের কম৷ এবার যে রোগী আসছে, আমরা মাইক্রবাইলোজিক্যাল অ্যাসেস করে দেখেছি, তাদের অধিকাংশই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ অর্থাৎ ভাইরাসজনিত কারণে এই ডায়রিয়া হচ্ছে৷’’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৬৪৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়৷

অন্যদিকে গত ১ নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি এই ৬৩ দিনে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৫ জন৷ অর্থাৎ প্রতিদিন সারা দেশে গড়ে ১ হাজার ৮০০ মানুষ ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷

কিছু কিছু জেলায় রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে৷ এই ৬৩ দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে৷ এই জেলায় ভর্তি হওয়া রোগী ছিল ৭ হাজার ৩৯০ জন৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে শীতকালে জীবানুর আচরণ বদলে যায়৷ কিছু ভাইরাস শীতকালে সক্রিয় হয়৷ তাপমাত্রা তারতম্যের কারণে এটা হয়৷ শীত বেশি পড়লে জীবাণুর আচরণ বদলাতে থাকে৷ ফলে এই সময় ডায়রারিয়ার প্রকোপ বাড়বে সেটা বলা যায়৷ এবার যে অনেক বেশি ডায়রিয়ার রোগী সেটা বলা যাবে না৷ তবে কিছু বেশি৷ এক্ষেত্রে অভিভাবকরা একটু সচেতন হলেই বাচ্চাকে নিরাপদে রাখা সম্ভব৷''

খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাচ্চাকে বাইরে বের না করার পরামর্শও এই বিশেষজ্ঞের৷

সারাদেশে হঠাৎ করেই জেঁকে বসেছে শীত৷ গত কয়েক দিনের শীতের তীব্রতায় নাজেহাল মানুষ৷ দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব৷ এতে বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা৷ ঘন কুয়াশা আর শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন মানুষ৷ অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই৷

এই সময় ডায়রারিয়ার প্রকোপ বাড়বে সেটা বলা যায়: ডা. লেনিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন৷

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আইসিডিডিআরবির পরামর্শক অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্যালাইন যে একটা ওষুধ, এটা কোন সাধারণ খাবার না সেটা অনেক অভিভাবক বোঝেন না৷ অল্প পানিতে, অল্প স্যালাইন গুলিয়ে অথবা ভালোভাবে না গুলিয়ে স্যালাইন খাওয়া যাবে না৷ স্যালাইন বানাতে হবে সঠিকভাবে৷ স্যালাইন ও পানির অনুপাত ঠিক না হলে শিশুদের শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়৷ এসময় বাচ্চাদের আরো পানির পিপাসা বেড়ে যায়৷ সে আরো পানি খেতে চায় এবং ওই স্যালাইন পানি খাওয়ার ফলে শরীরে আরো লবণ বেড়ে যায়৷ একটা সময় বাচ্চার খিচুনি হয়৷ এ ধরনের সমস্যার কারণে অনেক সময় বাচ্চাকে বাঁচানো যায় না৷ আবার অনেক সময় ডায়রিয়ার সঙ্গে নিউমোনিয়াও হয়৷ সেটা অভিভাবকরা বোঝেন না৷ ফলে বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়৷ ফলে বাচ্চার কোন সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ