ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির দায়ে চার ব্লগারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে ঢাকার একটি আদালত৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লব, সুব্রত অধিকারী শুভ, মোহাম্মদ রাসেল পারভেজ ও আসিফ মহিউদ্দীন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ রবিবার আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন তাঁরা৷
জ্যেষ্ঠ পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় ব্লগারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ এই আইনে তাদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷''
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক রোববার শুনানি শেষে ব্লগারদের বিচার শুরুর আদেশ দেন৷ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দুই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন রেখেছেন তিনি৷''
প্রসঙ্গত, নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠনের প্রতিবাদ, বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে গত পহেলা এপ্রিল রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ব্লগার শুভ, বিপ্লব ও পারভেজকে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ৷ সে রাতে অবশ্য আসিফ মহিউদ্দীনকে আটক করা হয়নি৷ দুই দিন পর ৩ এপ্রিল সকালে গ্রেপ্তার করা হয় আসিফকে৷ এর আগে দুবৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ডজয়ী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ এর ১ ও ২ ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয় চার জনের বিরুদ্ধে৷'' পরবর্তীতে তাঁরা জামিনে ছাড়া পান৷
এদিকে, ব্লগারদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷ তারা মনে করে, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যকার লড়াইয়ের বলি হয়েছেন ব্লগাররা৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর নব্বই শতাংশ মুসলমান৷ গভীরভাবে রক্ষণশীল এই দেশটির সরকার জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর তারা৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকেও আটক করেছে সে দেশের পুলিশ৷