বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠাখালী গ্রামের নারীদের তৈরি নকশিকাঁথা ন্যায্যমূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন আতাউর রহমান ও সাদেকা হাসান দম্পতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Hong
বিজ্ঞাপন
এরপর গত সাত-আট বছরে অনেক পথ পেরিয়েছে ব্রিটেনে লেখাপড়া শেষে মাতৃভূমির টানে ২০০৯ সালে দেশে ফেরা এই দম্পতির উদ্যোগ৷ এর মধ্যে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার৷
উদ্যোগটির নাম ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’৷ এর মাধ্যমে তৃণমূলের পণ্যকে ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে আতাউর রহমান জানান, ‘‘ব্রিটেনে লেখাপড়া শেষে আমরা সেখানে কিছুদিন কাজ করি৷ তারপর ‘হোম সিকনেস’-এর কারণে দেশে ফিরে মংলার মিঠাখালী গ্রামে গিয়ে সেখানকার মহিলাদের জিজ্ঞেস করি, তাঁরা তাঁদের নকশিকাঁথা কীভাবে বিক্রি করেন৷ তাঁরা জানান, লোকজন এসে তাঁদের কাছ থেকে নকশিকাঁথা নিয়ে যায়৷ তাঁদের নিজেদের এ সব বিক্রি করার উপায় নেই৷ এই কথা শুনে আমরা তাঁদের কম্পিউটারের মাধ্যমে বিক্রির ধারণা দিই৷’’
এরপর সেখানে একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন আতাউর-সাদেকা দম্পতি৷ স্থানীয় তরুণদের প্রশিক্ষণও দেন৷ তাঁরাই নারী ও কৃষকদের ছবি ও তাঁদের পণ্যের ছবি তুলে অনলাইনে দেয়ার কাজটি করেন৷
Ataur - MP3-Stereo
This browser does not support the audio element.
কিন্তু সমস্যাটি বাঁধে পণ্য বিক্রির পর টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে৷ কারণ, তখনও বাংলাদেশে অনলাইনে টাকা লেনদেনের সুযোগ ছিল না৷ ‘‘এই অবস্থায় আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এই সেবা চালুর অনুরোধ করি,’’ বলেন আতাউর৷ এর ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালের শুরুতে বাংলাদেশে অনলাইন লেনদেন শুরু হয় বলে জানান তিনি৷
আতাউর রহমান বলেন, অনলাইনে পণ্য বিক্রির কারণে এক জেলার কৃষকের পণ্য এখন সারা দেশের মানুষ কিনতে পারছেন৷ আগে দেখা যেত, কোনো এলাকার কৃষকের পণ্য শুধু সেই এলাকার স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে৷ ‘‘রাঙামাটির আনারস এখন চাইলে বাকি ৬৩ জেলার মানুষ সহজেই কিনতে পারছেন,’’ যোগ করেন আতাউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন যেমন দেখা যায়, চাহিদার চেয়ে কোনো পণ্যের উৎপাদন অনেক বেশি হয়ে গেলে বাজারের অভাবে কৃষককে সেগুলো খুবই কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে কিংবা ফেলে দিতে হচ্ছে৷’’ কিন্তু অনলাইন বেচাকেনার আরও প্রসার হলে কৃষকদের ঐসব পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে৷
সরকারের সঙ্গে ই-শপ
আতাউর ও সাদেকা দম্পতি সাত বছরে ১১টি জেলায় তাদের কার্যক্রম প্রসার করেছিলেন৷ এরপর সরকার সারা দেশে ই-শপ চালুর উদ্যোগ নিলে তার সঙ্গে যোগ দেয় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’৷ তাদের পদ্ধতিতেই এখন দেশের ৬৪টি জেলায় ই-শপ চালু হয়েছে৷ এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশ ও বিশ্বের কয়েকটি জনপ্রিয় শপিং সাইট
সাধারণ দোকানে কেনাকাটার উপর অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো৷ অনলাইনের সঙ্গে সাধারণ দোকানের যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা সময়ই বলে দেবে৷ বিশ্বের ও বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইটের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
অ্যামাজন ডট কম
www.amazon.com এমন একটি ওয়েবসাইট প্রত্যেকটি দেশের জন্যই যাদের আলাদা ব্যবস্থাপনা আছে৷ ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া – ভোক্তাদের জন্য সবকিছু আছে অ্যামাজনে৷ এমনকি ভারতের মতো বিশাল দেশসহ অন্য দেশের স্থানীয় অনলাইন শপিং পোর্টালগুলোর সঙ্গে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে অ্যামাজন৷ এখন পর্যন্ত অ্যামাজন কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে৷
ছবি: amazon.com
ইবে ডট কম
www.ebay.com-এর ভাবনাটা অসাধারণ৷ এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে যেকোন মানুষ তার জিনিস ইচ্ছেমত বেচতে পারে এবং একই সময় নতুন বিক্রেতারা নতুন নতুন জিনিসও বিক্রি করতে পারে৷ তাই দেখা যায় এই সাইটে অদ্ভুতসব জিনিস নিয়ে এলে সেগুলোও অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়৷ ইবে-তে গেলেই দেখতে পাবেন আপনার যা চাই সবই আছে সেখানে৷ বিশ্বের কোথাও যে জিনিসটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ইবে-তে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
ছবি: DW
ওয়ালমার্ট ডট কম
না বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! ওয়ালমার্টেরও অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে www.walmart.com৷ অনলাইনে বিশাল পণ্যের সমাহার আছে তাদের৷ এমনকি দোকানে যেসব জিনিস পাওয়া যায় না, অনলাইনে সেসব জিনিস পাবেন আপনি৷ সবচেয়ে সুবিধা হলো দোকানে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই৷ ঘরে বসে একটা ক্লিক করলেই দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে ওয়ালমার্টের পণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
আলীবাবা ডট কম
www.alibaba.com বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ এই পোর্টাল থেকে আপনি অনেকরকম পণ্য কিনতে পারবেন৷ কৃষি থেকে শুরু করে রাসায়নিক সবধরনের দ্রব্য পাওয়া যায় এখানে, যাই কিনুন ঠিক আপনার বাসায় পৌঁছে দেবে৷ কোন পণ্য অর্ডার করার পর তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং দাম নেয়ার পদ্ধতি বেশ সন্তোষজনক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Ming
ফ্লিপকার্ট ডট কম
www.flipkart.com এটি একটি ভারতীয় অনলাইন শপিং এর ওয়েবসাইট, যেটি বিশ্বব্যাপী বাজার বিস্তার করেছে৷ এশিয়ার মানুষের কাছে এই সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়৷ অ্যামাজনের পর কেনাকাটার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্লিপকার্ট৷ এই সাইটটি শুরু হয়েছিল অনলাইনে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে, এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে এটি৷
ছবি: flipkart.com
রকমারি ডট কম, বাংলাদেশ
অনলাইন এ বই কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে www.rokomari.com-এ একবার আপনাকে প্রবেশ করতেই হবে৷ ২০১২ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই সাইটটির যাত্রা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে অল্প খরচে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই৷
বিক্রয় ডট কম, বাংলাদেশ
বাংলাদেশে কেনা-বেচার ক্ষেত্রে এই সাইটটি খুব জনপ্রিয়৷ বাড়ি, গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন যা বিক্রি করতে বা কিনতে চান অতি সহজেই এই সাইটটির সাহায্যে তা করতে পারবেন৷ এমনকি চাকরির খোঁজও পাবেন এখানে৷ শুধু তাই নয় কোরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যে www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷
দারাজ ডট কম ডট বিডি
www.daraz.com.bd এটি জার্মানভিত্তিক কোম্পানির একটি শপিং সাইট৷ এখানে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্সসহ প্রায় ব্যবহারিক সব পণ্য পাওয়া যায়৷
আজকের ডিল ডট কম
www.ajkerdeal.com বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ বাংলাদেশভিত্তিক প্রথম বাংলা ই-কমার্স এবং বাংলাদেশি মালিকানায় বাংলাদেশি প্রথম ই-কমার্স সাইট৷ আজকের ডিল ডট কম বিডি জবস-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান৷ এই সাইট থেকে আপনি প্রায় সবধরনের কেনাকাটা করতে পারবেন৷
প্রিয়শপ ডট কম
www.priyoshop.com ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়৷ অথ্যাধুনিক ট্রেন্ডের পোশাক থেকে শুরু করে গহনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি – সবকিছুই পাওয়া যায় এই সাইটে৷
সহজ ডট কম
www.shohoz.com বাংলাদেশের এই অনলাইন শপিং সাইটটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঈদের সময় বাসের টিকেট বিক্রির জন্য৷ ঈদে বাস ও ট্রেনের টিকেট কেনার ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই এখন সহজ ডট কম-এর আশ্রয় নেন৷ এছাড়া বিভিন্ন কনসার্টসহ নানা ইভেন্টের টিকেট কেনার অন্যতম মাধ্যম এখন সহজ ডট কম৷
11 ছবি1 | 11
ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ
বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা যেমন বাড়ছে, তেমনি কিছু অভিযোগও উঠছে৷ যেমন পণ্য অর্ডার দিয়ে সময়মতো না পাওয়া, ঠিক পণ্য না পাওয়া এবং পছন্দ না হলে ফেরত দেয়ার সমস্যা ইত্যাদি৷ এসব থেকে বাঁচতে ক্রেতাদের সবসময় পরিচিত ব্র্যান্ডের কাছ থেকে পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়েছেন আতাউর রহমান৷ এছাড়া ঝুঁকি এড়াতে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি'-র চেয়ে অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করার পরামর্শ দেন তিনি৷