গত বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত মসজিদে পড়তে হবে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধির নানা নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞাপন
সবাইকে বাসা থেকে ওযু করে নামাযে যেতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে এবং দূরত্ব বজায় রেখে কাতারে দাড়াতে হবে।
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, মহামারীর কারণে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবারও জামাত হচ্ছে না দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ।
এদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও ঢাকার আরো কিছু মসজিদে এক বা একাধিক জামাতের ব্যবস্থা থাকছে।
ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, ঢাকার এ কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অর্থাৎ মোট পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সাধারণত দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন। কিন্তু মহামারীর কারণে গতবছর থেকে তার হচ্ছে না।
পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া বড় কাটরা মাদ্রাসা মসজিদে সকাল ৮টায় ও লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
করোনার সম্মুখ-যোদ্ধা আর নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদভাবনা
শুক্রবার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে যারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ঈদ ভাবনা কী? উৎসবটা কেমন কাটবে তাদের? চলুন জেনে আসি ছবিঘরে...
ছবি: Sazzad Hossain
৫০-১০০ টাকা বখশিশই ঈদের আনন্দ
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী মোঃ নাঈম বলেন, “গতবছর যখন সবাই করোনার ভয়ে ঘরে বন্দি, তখনও আমাদের প্রতিদিন কাজ করতে হইসে। বাসাবাড়িতে গিয়া ময়লা নেই, কেউ কখনো জিজ্ঞাস করে না কেন এত ঝুঁকি নিয়া কাম করি। আর ঈদের আনন্দ বলতে সাবেরা যেই ৫০-১০০ টাকা বখশিশ দেয়, ঐটাই আমগো আনন্দ।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ঈদে ছুটি নেই, ছুটি নিলে বেতন কাটা যাবে
রাজধানীর মিরপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী মো. আবদুল মালেক বলেন, “ আমাদের কোনো ঈদের ছুটি নেই। যদি কেউ ছুটি নিতে চায়, তবে অনুপস্থিতির দিনগুলোতে বেতন কাটা যায়৷ তাই গত চার বছর ধরে কোনো ছুটি নেইনি। সামান্য বেতন পাই, স্বামী-স্ত্রীর সংসার কোনোরকমে চলে। বেতন কাটলে না খেয়ে থাকতে হবে।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
উৎসব উদযাপনের সুযোগ নেই
রেস্তোরাঁর টাটকা খাবার বিলিকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী বলেন, “নিজের দৈনন্দিন খরচ চালাতে এখানে কাজ করি। যে-কোনো উৎসবে ছুটি চাইলে তো নেওয়াই যায়, কিন্তু সেক্ষেত্রে সেদিনের আয় বন্ধ থাকবে। ঢাকা শহরে যে খরচ, একদিনের আয় দিয়ে অন্যদিন চালানো খুব ই কঠিন।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
সন্তানদের ঈদের পোশাক কিনে দিতে পারিনি
করোনার আগে ক্যাটারিং সার্ভিসে কাজ করে মোটামুটি আয় হতো জামাল হোসেনের। লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরি হারিয়ে তিনি রিক্সাভ্যানে করে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিক্রি শুরু করেন। সংক্রমিত হওয়ার ভয় নিয়েই প্রতিদিন ঘর থেকে বের হন জানিয়ে বলেন, “গতবছর ঈদে আয় মোটামুটি হলেও এ বছর বিক্রি একেবারেই খারাপ।এই ঈদে সন্তানদের পোশাকও কিনে দিতে পারিনি৷’’
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ছুটি সীমিত, ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই
মেট্রোরেলের নির্মাণকর্মী মো. দুলাল হোসেন বলেন, “সরকার যে তিনদিন ছুটি ঘোষণা করসে, বাড়ি যাইতে আসতে লাগবে দুই দিন। তার উপর দূরপাল্লার গাড়ি সব বন্ধ। তাই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ নাই। যদি পরের ঈদে পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে হয়তো বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করা যাবে।”
ছবি: Rashed Mortaza/DW
জমানো টাকা সব শেষ, ঈদ করবো কী দিয়া?
মিরপুর-নিউমার্কেট রুটের মিরপুর লিংক বাসের সুপারভাইজার মো. আবদুল হক বলেন, “এই লকডাউনে বাস বন্ধ থাকায় মালিক আমাদের এক পয়সাও দেয় নাই। জমানো টাকা যা আছিল, তা দিয়া পরিবারসহ অনেক কষ্টে চলছি। এখন হাতে আর কোনো টাকা নাই যা দিয়ে ঈদ ভালোভাবে পালন করব।”
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ভয় করলে পেট চলবে না
একটি তামাকজাত পণ্যের বিক্রয় প্রতিনিধি নূর মোহাম্মদ বলেন, “গতবছর করোনায় কোনো চাকরি ছিল না। এ বছর হন্যে হয়ে খোঁজার পর একটি চাকরি পেয়েছি। চাকরির এই বাজারে এখন করোনার ভয় পেলে পেট চলবে কিভাবে?”
ছবি: Rashed Mortaza/DW
রোগীদের সেবার স্বার্থে ভয়কে দূরে রাখতে হচ্ছে
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, “গতবছর করোনায় যেভাবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গেছে, এ বছর সেটা করা যাচ্ছে না। আমরা দূরত্ব বজায় রাখলে রোগীরা মানসিক স্বস্তি পায় না, তাছাড়া এই আবহাওয়াতে আমাদের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়াও কষ্টকর। কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ভয় কাজ করলেও আসলে তা পাশ কাটিয়েই আমাদের সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।“
ছবি: Rashed Mortaza/DW
সহকর্মীদের স্বার্থে স্বেচ্ছায় ছুটি নেইনি
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সিগন্যালে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সুমন জানান, ঈদে ছুটি তিনদিন নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সহকর্মীদের স্বার্থেই তিনি দুইবছর যাবত ঈদের ছুটির আবেদনই করেননি। তিনি পরিবারসহ ঢাকায় থাকেন, তাই অন্য সহকর্মীরা যাতে ছুটিটা উপভোগ করতে পারে, সেজন্য তিনি ছুটি নেননি৷
ছবি: Rashed Mortaza/DW
মুসলিম সহকর্মীরা যাতে ঈদ উপভোগ করতে পারেন তাই আমরা কাজ করি
ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাল্গুনি রানী বলেন, “আমাদের অধিকাংশ স্টাফই মুসলিম হওয়ায় আমরা যারা অমুসলিম আছি, তারা ঈদগুলোতে দায়িত্ব পালন করি যেন মুসলিম সহকর্মীরা প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে। পরবর্তীতে আমাদের উৎসবেও তারা এই ত্যাগটা স্বীকার করেন। কর্মক্ষেত্রে এই সহমর্মিতার সম্পর্কটা থাকা অনেক জরুরি বলে মনে করি আমি।“
ছবি: Rashed Mortaza/DW
পরিবার নিয়ে আতঙ্কেই ঈদগুলো কাটাচ্ছি
ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকসানা মনোয়ারা বলেন, “গতবছর করোনার শুরুতে সবার মতো আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। আলাদা কোনো থাকার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা করে বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে একই ঘরে থাকতে হতো। টিকা নেওয়ার পর ভয় কিছুটা কমলেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে আগের ভয়টা এখন আবার কিছুটা চেপে বসেছে।”
ছবি: Rashed Mortaza/DW
গত ঈদের চেয়ে এবার বেচাবিক্রি কিছুটা ভালো
ঢাকার মিরপুরের একটি কাঁচাবাজারের মুদিদোকানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “গত ঈদে কঠোর লকডাউন থাকায় কেউ বাসা থেকে বের হয়নি, কেনাকাটাও করেনি। কিন্তু এ বছর ভয় অনেকটা কেটে গেছে বিধায় মানুষজন ঈদের কেনাকাটা করছে এবং আমাদের বেচাবিক্রিও তুলনামূলক ভালো।“
ছবি: Rashed Mortaza/DW
12 ছবি1 | 12
তাছাড়া পুরান ঢাকার তারা মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা ও ৯ টায়; রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়; নিমতলী ছাতা মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায়, আগামছি লেইন জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সাড়ে ৮টায় এবং বায়তুল মামুর জামে মসজিদে সকাল সোয়া ৮টা ও ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
নবাবগঞ্জ বড় মসজিদে ঈদের জামাত হবে তিনটি। সেখানে সকাল ৭টায় , ৮টায় ও ৯টায় জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আজিমপুর কবরস্থান মসজিদে মোট চারটি জামাত আয়োজনের কথা জানানো হয়। সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে এ জামাত। আর ছাপড়া মসজিদে তিনটি জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টা, সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায়।
এদিকে মিরপুর দারুস সালাম লালকুঠি বড় মসজিদে সকাল ৭টায় একটি জামাত হবে। ধানমণ্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ৯টায় এবং বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়; ঈদগাহ মাঠ মসজিদে ৮টায় এবং সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে তিনটি জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকাল ৬টা, সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে এ তিনটি জামাত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।