1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে উত্তরে পানি কমছে, মধ্যাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা

১৬ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে৷ তবে মধ্যাঞ্চলে এখন বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আত্রাই নদী অববাহিকার এলাকাগুলো নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক দেখা দিয়েছে৷

নৌকায় টিন, লাকড়ি নিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছেছবি: Sarkar Mohammad/DW

দেশের অভ্যন্তরে এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারি বৃষ্টির কারণে এই বন্যা বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র৷ রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবন্ধা ও চাপাইনবাবগঞ্জে বন্যার পানি কমেছে৷  তবে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে৷ নওগাঁ এবং আত্রাই নদী সংলগ্ন এলাকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷

বিপদে তিস্তা পাড়ের মানুষ

এদিকে এই বন্যায় রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট জেলার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷  রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর পশ্চিম পাশে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছে৷ এতে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে৷ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোত বাঁধের গায়ে সরাসরি আঘাত করায় এ ধস দেখা দিয়েছে৷

এই ধসে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে৷ পাশাপাশি আশপাশের অন্তত তিনটি গ্রামের এক হাজারেরও বেশি পরিবারের বসতভিটা ও কৃষিজমি সরাসরি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা দ্রুত মেরামত না হলে বাঁধের সঙ্গে সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেবে৷

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বলেও কোনো কাজ হয় না: নির্মল রায়

This browser does not support the audio element.

গঙ্গাচড়া এলাকার বাসিন্দা নির্মল রায় জানান, ‘‘তিস্তা নদী নীলফামারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ এরপর রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা হয়ে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে৷ ফলে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে চলে গেলে ওই চারটি জেলার মানুষই ক্ষতির মুখে পড়ে, প্লাবিত হয়৷''

তিনি জানান, ‘‘তিনদিন পর এখন পানি নেমে যাচ্ছে৷ তবে অনেক পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে৷ ফসল ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ সেইসঙ্গে সেতুরক্ষা বাঁধটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ ব্লক বসে গেছে৷ যদি এটা ভেঙ্গে যায় তাহলে পুরো জেলা প্লাবিত হবে৷ সমস্যা  হচ্ছে এই বাঁধটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)৷ ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বলেও কোনো কাজ হয় না৷ আমরা স্থানীয়রা ব্লক ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছি৷''

তার আশঙ্কা সেতু রক্ষা বাঁধটি ভেগে গেলে রংপুর থেকে লালমনিরহাটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে৷

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেতু রক্ষা বাঁধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে ওটা এলজিইডি নির্মাণ করেছে৷ ওটার দায়িত্ব তাদের৷ আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘পানি নেমে যাচ্ছে৷ তিস্তার পানিও বিপদসীমার নীচে চলে গেছে৷ বন্যায় বেশ কিছু বাড়ি-ঘরের ক্ষতি হয়েছে৷ আমি গঙ্গাচড়া এলাকায় শনিবার গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছি৷'' তবে এনিয়ে যোগাযোগ করে এলজিইডির কারো বক্তব্য পাওয়া সম্ভবয় হয়নি৷

বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ

লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা এলাকার বন্যার পনিও নামছে৷ তবে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ পানি নামতে শুরু করায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির চিত্র বেরিয়ে আসছে৷ বাংলাদেশে ১৪ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে৷ আছে শহর রক্ষা বাঁধ ও  সেতু রক্ষা বাঁধ৷ কিন্তু এই বেড়িবাঁধগুলো প্রশ্নের মুখে৷ গত জুন মাসে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর তীরের ১২২ কিলোমিটার বাঁধের ২০টি জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে৷ তাতে তিনটি উপজেলার অনেক গ্রামই পানির নীচে তলিয়ে যায়৷ পানির তোড়ে অনেকের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, খামার, ফসল সব কিছু ভেসে যায়৷  কমপক্ষে ৪০টি গ্রাম পানির নীচে চলে যায়৷ তখন ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সব মিলিয়ে যে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটারের মতো বাঁধ আছে এগুলোর ডিজাইন এবং এর নির্মাণ উপকরণে সমস্যা আছে৷ ফলে যখন পানির ওয়েভ আসে সেগুলো টেকেনা৷ আর এগুলো হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷''

এ নিয়ে চেষ্টা করেও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

ভাঙন: ২০৫০ সালে কেমন উপকূল চাই?

13:11

This browser does not support the video element.

বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কতা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান ডয়চে ভেলেকে জানান, ''এখন একটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ নওগাঁর আত্রাই নদী৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা বিপদসীমার উপরেই থাকবে৷ এরপর পানি কমতে পারে৷ নওগাঁ জেলায় স্বল্প মেয়াদি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে৷ পদ্মা নদীর পানি আরো দুইদিন বিদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে৷ এরফলে পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলো  প্লাবিত হবে৷'' যমুনা নদী সংলগ্ন এলাকা টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, গাইবান্ধা, কুঁড়িগ্রাম ও পাবনা এলাকায়ও পানি বাড়তে পারে৷

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আত্রাই নদী আত্রাই রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে (নওগাঁ) বিপদসীমার ৩০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদী নওগাঁয় বিপদসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে ও নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে৷

পদ্মা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে৷ এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার  নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে৷

যমুনা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সতর্কসীমায়  প্রবাহিত হতে পারে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম বিভাগে এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের অভ্যন্তরে সিলেট ও রংপুর বিভাগে এবং উজানে মাঝারি-ভারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷

রাজশাহী বিভাগের আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীসমূহের পানি  গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আগামী ২৪ ঘন্টা ওই নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে, এই সময়ে আত্রাই নদী নওগাঁয় বিপদসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে ও নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে৷ পরবর্তী দুই দিন নদীসমূহের পানি  হ্রাস পেতে পারে৷

গঙ্গা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়েছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ গঙ্গার পানি আগামী পাঁচ দিন হ্রাস পেতে পারে৷ পদ্মা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে৷ এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে৷ তবে পরবর্তী চার দিন পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে৷

পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলো প্লাবিত হবে: সরদার উদয় রায়হান

This browser does not support the audio element.

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল আগামী তিন দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী দুই দিন হ্রাস পেতে পারে৷ যমুনা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘন্টা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে৷

সিলেট বিভাগের কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে৷ ওই নদীসমূহের পানি সমতল আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে৷ মনু, ধলাই, খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে ও পরবর্তী দুই দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে৷

রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পেয়েছে৷ আগামী দুইদিন তিস্তা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও ধরলা, দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে; তবে তৃতীয় দিন ওই নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে৷

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের ত্রিপুরায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে৷ দেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টি হয়েছে, তাই নদীতে পানির প্রবাহ বেড়েছে৷ তবে বড় বন্যার আশঙ্কা কেটে গেছে৷ বলেন, ‘‘আরো কিছু জেলা অল্প সময়ের জন্য প্লাবিত হবে৷  মাঝারি ও হালকা বৃষ্টিপাত হবে৷ সামনে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নাই৷''

তবে বন্যার পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে৷ কেথাও বাঁধ ভেঙে গেছে এবং আরো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি৷

তিস্তার পানি পাচ্ছেন না যে ভারতীয়রাও

05:04

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ