1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে এখনো ডলার ও রিজার্ভের ওপর চাপ

৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

নতুন অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশে রপ্তানি আয় বেড়েছে, কমেছে আমদানি ব্যয়। রেমিট্যান্স বাড়ছে। তারপরও রিজার্ভ কমছে। কাটেনি ডলার সংকট। বাংলাদেশে ডলারের তুলনায় ইউরোর দাম কমছে। এসবের কারণ কী?

Symbolbild US-Dollar
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের প্রতীকী ছবিছবি: Stephan Jansen dpa/picture alliance

বিশ্লেষকর মনে করেন, আমদানি- রপ্তানির হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন  ব্যুরোর হিসেব। কিন্তু অদৃশ্য অনেক ‘পেমেন্ট' আছে। আর অস্থিরতার কারণে হোক বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, ডলার এখনো পাচার হচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে অনেক ডলার আছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে টাকার প্রতি আস্থা কমছে। ফলে ডলার সংকট কাটছে না। রিজার্ভ কমছে।

এই পরিস্থিতি কত দিন চলতে পারে বা এই সংকট থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসতে কত দিন লাগবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

ডলার সংকট, রিজার্ভ কমছে

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম বেঁধে দিয়েছে। এক ইউএস ডলার এখন ৯৫ টাকা। কিন্তু ব্যাংকের বাইরে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১২ টাকায়। কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রির অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তারা ডলার সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে অভিযোগ। অন্যদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ডলার ধরে রাখার ব্যাপারেও বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কোনো নিবাসি ব্যক্তি ১০ হাজারের বেশি ডলার নিজের কাছে এক মাসের বেশি সময় রাখতে পারবেন না। এটা অনুমোদিত মানি চেঞ্জারের কাছে বিক্রি করতে হবে অথবা ব্যাংকে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসেবে রাখতে পারবেন। কেউ যদি ১০ হাজার ডলারের বেশি নিজের কাছে রাখেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন কমে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আকু'র সর্বশেষ ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর এখন এই রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে। গত দুই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় দুইগুণ হবে। বাজারে ডলার সংকট অব্যাহত আছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদেশে যারা যাচ্ছেন, তারা পাসপোর্টের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন না।  কার্ব মার্কেট থেকে তাদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

‘সংকট কাটাতে রপ্তানি, রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে’

This browser does not support the audio element.

আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র হিসেবে গত আগস্টে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে। ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে আগস্টে, যা জুলাই মাসের তুলনায় ৬২ কোটি ডলার বেশি। আর গত বছরের আগস্টের তুলনায় এটা ৩৬.১৮ শতাংশ বেশি।  চলতি বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১৪.৭২ শতাংশ বেশি। আগস্টে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬.১৮ শতাংশ।

তবে আগের মতো তৈরি পোশাকই রপ্তানিতে  মূল ভূমিকা রাখছে। জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে পোশাক খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৬৩ কোটি ডলার। কিন্তু রপ্তানি আয় হয়েছে ৭১১ কোটি ডলার।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমদানি ব্যয়ও গত দুই মাসে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আগস্ট মাসে আমদানি ব্যয় পরিশোধ (এলসি পেমেন্ট) করা হয়েছে ৫৯৩ কোটি ডলার। আগের জুলাই মাসে ছিল ৭৪২ কোটি ডলার । এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় কমেছে ১৪৯ কোটি ডলার।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ব্যাংকিং চ্যানেলে আগস্টে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ১৮১ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাই মাসে পাঠিয়েছেন ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা গত বছরে জুলাইয়ে ছিল ১৮৭ কোটি ডলার।

সংকট কাটবে কবে?

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "সংকট কাটাতে অবশ্যই রপ্তানি বাড়াতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে হবে। সেদিকেই আমরা এগোচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে কত দিন লাগবে তা বলা মুশকিল।”

‘সব কিছু এক মাস- দুই মাসে বোঝা যায় না’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, " ডলারের দাম বেঁধে দিয়ে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা সমাধান নয়। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকের সুদের হার বাড়ছে না। এতে টাকার প্রতি মানুষের  আস্থা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকে রাখা টাকার পরিমান (মান) প্রকৃত বিবেচনায় কমে যাচ্ছে। আবার আমাদের অনেক অদৃশ্য পেমেন্ট আছে। ১৫ থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার শর্ট টার্ম পেমেন্ট আছে প্রাইভেট সেক্টরে প্রতি মাসে।''

এ প্রসঙ্গে যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, "রপ্তানির হিসেবে একটা ফাঁক আছে। সেটা হলো, আপনি কত ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন আর কত ডলার হাতে পেয়েছেন। এখানে একটা গ্যাপ আছে। আমদানি হিসাবও এক মাস- দুই মাস থেকে বোঝা যায় না। কারণ, আগের পেমেন্টও থাকে। ফলে এটা থেকে একটি মাসের প্রকৃত চিত্র সব সময় পাওয়া যায় না।”

ডলার সংকট এবং রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "অনিশ্চয়তার কারণে টাকার পরিবর্তে অনেকেই এখন ডলার হাতে রাখছেন। আইন যতই করেন, কাদের হাতে নগদ ডলার আছে, তা তো আগে জানতে হবে। আর দেশের বাইরে ডলার পাচার হচ্ছে। কেন পাচার হচ্ছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঋণ তো শোধ করতে হচ্ছে।  লোন রি-পেমেন্ট তো এক জায়গা থেকে হয় না। সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট আছে। গভর্নমেন্টের ক্রেডিট আছে।  বছরে সরকারকেই তো দুই-তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়। অফশোর ব্যাংকিংয়ের ডেবিট, ক্রেডিট আছে। এটা অনেক বৃহৎ পরিসরে দেখলে রিজার্ভের ওপর চাপ ও ডলার সংকটের বিষয়টি বোঝা যাবে। শুধু  আমদানি, রপ্তানি আর রেমিট্যান্স দিয়ে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ