বাংলাদেশে এতিম মেয়েদের জন্য আইআরডাব্লিউ’র সহায়তা
৫ জুলাই ২০১২
বাংলাদেশে ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড তথা আইআরডাব্লিউ এর ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর কথা সম্পর্কে বাংলাদেশ কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘‘আইআরডাব্লিউ বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৩২টি দেশে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে৷ সংস্থাটি বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে মূলত ১৯৯১ সালে৷ সেই বছর যখন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল তখন চট্টগ্রামের দুর্যোগপীড়িত মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হাজির হয় তারা৷ একই বছর বাংলাদেশ এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো থেকে আইআরডাব্লিউ বাংলাদেশে কাজ করার জন্য নথিভুক্ত হয়৷ তখন থেকেই সংস্থাটি বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মূলত দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিশু কল্যাণ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে আইআরডাব্লিউ কাজ করে থাকে৷''
সম্প্রতি এতিম শিশু রয়েছে এমন একশ'টি পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আইআরডাব্লিউ৷ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষিত জনগোষ্ঠী সম্পর্কে তিনি জানান, ‘‘উত্তরাঞ্চলের মিঠাপুকুর উপজেলায় আইআরডাব্লিউ সম্প্রতি এই কাজ বাস্তবায়ন করে৷ এই পরিবারগুলোতে থাকা বিধবা মায়েরাই একমাত্র আয়-উপার্জনের সাথে জড়িত৷ কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো সম্পদ-সম্পত্তি নেই৷ তাদের আয়ের তেমন কোনো উৎসও নেই৷ এমনকি আইআরডাব্লিউ কিংবা অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলো যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলোর মধ্যেও এই পরিবারগুলো কখনও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পায়নি৷ এমনকি তাদের নিজস্ব কোনো সুন্দর ঘর ছিল না৷ তারা যে ঘরগুলোতে থাকতো সেগুলোতে বৃষ্টির সময় পানি পড়তো৷ তারপর শীতের সময় তাদের শীত নিবারণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷ তাদের নিজস্ব কোনো গভীর নলকূপ ছিল না৷ ফলে তাদেরকে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো৷ এছাড়া তাদের কোনো স্বাস্থ্য-সম্মত পায়খানা ছিল না৷ ফলে তারা প্রায়ই নানা রোগ-ব্যধিতে ভুগতো৷ আর তারা অসুস্থতায় ভুগলে তাদের যেসব গরু-বাছর কিংবা হাঁস-মুরগি থাকে সেগুলো বিক্রি করে চিকিৎসা করার চেষ্টা করে৷ ফলে তাদের এই সামান্য আয়ের উৎসও শেষ হয়ে যায়৷ তাদের এমন শোচনীয় অবস্থা বিবেচনা করে আমরা মিঠাপুকুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করি৷ ''
এই প্রকল্পের উপকারভোগী একশ'টি পরিবারের মধ্যে ৮২ টি মুসলিম পরিবার, ১৭টি হিন্দু পরিবার এবং একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্য বলে জানিয়েছেন ইসমাইল হোসেন৷
এই প্রকল্পের আওতায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে একশ'টি দুস্থ পরিবারের জন্য একটি করে ঘর, স্বাস্থ্য-সম্মত পায়খখানা এবং নিরাপদ পানীয় পানির সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি করে নলকূপ স্থাপন করা হয়৷ এসব সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে এসব পরিবারের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে এবং তাদের সন্তানরা এখন ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে৷ কারণ আগে তাদের বইখাতা বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যেতো৷ এছাড়া এই দুস্থ পারিবারগুলো বাছাই করার সময় এমন পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যেসব বাড়িতে এতিম মেয়েশিশু রয়েছে৷ কারণ একটি ভালো ঘর না থাকায় এবং পায়খানা না থাকায় এই মেয়ে শিশুরা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জীবন যাপন করতে বাধ্য হতো৷''
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ