বাংলাদেশে প্রথমবারের মত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে৷ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এই তথ্য জানিয়েছে৷
রোববার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান বলে খবর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার উপায়
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এ থেকে নিজেকে রক্ষার কিছু উপায়ের কথা থাকছে ছবিঘরে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের ভিত্তিতে পরামর্শগুলো দেয়া হলো৷
ছবি: Getty Images/X. Chu
কিছু না থাকার চেয়ে ভালো
ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এমন মাস্ক কার্যকর বলে প্রমাণিত না হলেও এগুলো অন্তত কিছু জীবাণু মুখ কিংবা নাকে যাওয়া ঠেকাতে পারে৷ এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মাস্ক পরা থাকলে মানুষের হাত যখন-তখন মুখ বা নাকে যায় না৷ আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে এমন মাস্ক অন্যদের আক্রমণ থেকে বাঁচাবে৷
ছবি: Getty Images/Stringer
হাত ধোয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে কিন্তু মাস্ক পরার কথা নেই৷ তাদের এক নম্বর পরামর্শটি হচ্ছে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া৷ সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালকোহলসমৃদ্ধ তরল ব্যবহার করা, যেমনটা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
সাবান, পানি হলেও চলবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুলেও চলবে৷ তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পুরো হাত ভালোভাবে ধোয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
সঠিকভাবে হাঁচি-কাশি দেয়া
ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করুন৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় ঠিক এভাবে মুখ আর নাক ঢাকতে হবে৷ তবে টিস্যুও ব্যবহার করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ব্যবহারের পর টিস্যুটি দূরে ফেলে দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে৷ তেমনিভাবে শার্ট আর সোয়েটারটিও ধুয়ে ফেলতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
দূরে থাকুন!
এই পরামর্শটি সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে৷ সেটি হচ্ছে, যার জ্বর ও কাশি আছে তার কাছ থেকে দূরে থাকুন৷ আপনার যদি অসুস্থ মানুষের সেবা করতে হয় তাহলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন৷
ছবি: picture alliance/empics
জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যান, ঘুরতে নয়!
জ্বর, কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷ যেখানে জনসমাগম বেশি সেসব জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
অর্ধসিদ্ধ নয়!
মাংস খুব ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধসিদ্ধ হলে চলবে না৷ কাচা মাংস, দুধ কিংবা প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে নড়াচড়া করতে হবে যেন সেগুলো রান্না হয়নি এমন খাবারের সংস্পর্শে আসতে না পারে৷
ছবি: picture-alliance/Ch. Mohr
7 ছবি1 | 7
আক্রান্তদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ইটালি থেকে ফিরেছেন৷ পরবর্তীতে তাদের একজনের সংস্পর্শে পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, আক্রান্তদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷
তিনজনই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷ তিনি বলেন, ‘‘দুইজন দেশে আসার পর তাদের উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের হটলাইনে ফোন দিলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাই। সেখানে দুইজনের পজেটিভ আসে।’’
তাদের সংস্পর্শে আসা মোট চারজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এরমধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি৷ তবে ফ্লোরা জানান, ‘‘এই মুহুর্তে রোগী এবং তাদের সংস্পর্শে যারা ছিল তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। তাদের পুরো কন্টাক্টের তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমরা মনে করি না, আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’
সবাইকে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শও দিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলবেন না। কারও সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকবেন৷’’
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি, তাতে কারোই চিন্তা করার কারণ নেই। আমরা অবশ্যই করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। সমগ্র দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করি৷’’
আইইডিসিআরের নির্দেশনা
আপনি যদি চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, ইতালি, ইরান এসব দেশে ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি আপনার জ্বর-কাশি-গলা-ব্যথা-শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন এবং কুয়েত-মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
করোনা ভাইরাস শরীরে আছে কি না, তা কীভাবে জানতে পারেন ডাক্তাররা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Ruvic
কাকে পরীক্ষা করা হয়?
সংক্রমণপ্রবণ জায়গায় থাকলেই কোনো ব্যক্তিত্বকে করোনা ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করার দরকার নেই৷ সর্দিকাশি থাকলেও যে এই পরীক্ষা করতেই হবে, এমনটা নয়৷ কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকার কোনো নির্দিষ্ট কারণ না পাওয়া গেলে তখনই করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরীক্ষা করা হবে বলে জানাচ্ছে জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Matthews
কেমন এই পরীক্ষা?
গলা বা গলা ও নাকের অংশ থেকে তরল নমুনা নেওয়া হয়৷ তারপর সেই নমুনা বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে যে সেখানে করোনা ভাইরাস আছে কি না৷ এই পরীক্ষা করতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে৷ জার্মানিতে এই পরীক্ষা করাতে কোনো খরচ লাগেনা, কারণ তা রোগীর নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Coffrini
আক্রান্তদের পরীক্ষার ফলাফল জানানো
নমুনা সংগ্রহ করা থেকে পরীক্ষাগারে সব রকমের যাচাই-বাছাই হওয়া থেকে সবশেষে সেই পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তারের কাছে পৌঁছানো- এই পুরো প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে এক থেকে দুই দিন৷ এরপর সেই খবর রোগীকে জানানো ডাক্তারের দায়িত্ব৷ আলাদা ঘরে অন্যান্যদের থেকে দূরে বিশেষ সুরক্ষাবিধি মেনেই করোনা-আক্রান্তের সাথে দেখা করবেন ডাক্তার৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগীর বাসায় গিয়েও তা জানানো যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কতটা নির্ভুল এই পরীক্ষা?
প্রথম চেষ্টায় করোনা ভাইরাস ধরা না পড়া মানেই যে শরীরে এই সংক্রমণ নেই, তা নয়৷ যদি নমুনা সংগ্রহে কোনো ফাঁক থেকে যায়, তাহলেও সংক্রমণ ধরা পড়বে না৷ সে কারণেই সংক্রমণ থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের একাধিকবার এই পরীক্ষা করাতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/
অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কি?
এই পরীক্ষা সঠিকভাবে করতে উন্নতমানের পরীক্ষাগার ও দক্ষ বিশেষজ্ঞ দরকার, যা অনেক জায়গায় নেই৷ চীনের মতো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত দেশেও নেই এই প্রযুক্তি৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকাতেও পরীক্ষার নমুনা সমন্বয়ে রয়েছে গাফিলতি৷ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে নতুন প্রযুক্তি উঠে আসলেও তা এখনও ব্যবহারিক পর্যায়ে পৌঁছয়নি৷