1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে করের আওতায় গুগল, অ্যামাজন, ফেসবুক

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৩ জুন ২০২১

বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন করল তিন বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি৷ গুগল, অ্যামাজনের পর সবশেষ যোগ দিল ফেসবুক৷ তাদেরকে করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা৷

বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন করল তিন বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি৷ গুগল, অ্যামাজনের পর সবশেষ যোগ দিল ফেসবুক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jaitner

রোববার বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এর কাছ থেকে ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর পেয়েছে ফেসবুক৷ মোট তিনটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নাম্বার বা ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর নেয় তারা৷ সেগুলো হল: ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড৷ প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের এই নিবন্ধন নম্বর দেয়ার কথা রোববার জানিয়েছে এনিবাআরই৷

শুধু ফেসবুক নয়, গত মাসের শেষ দিকে মূসক নিবন্ধন করিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্লাটফর্ম অ্যামাজনও৷ অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে তাদের ঘোষিত লেনদেনের উপর সরকারকে নির্দিষ্ট হারে মূসক পরিশোধে বাধ্য থাকবে এবং নিয়মিত মূসক রিটার্ন দাখিল করবে৷

সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে?

খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাবে ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করে৷ কিন্তু তার বিপরীতে তারা যথাযথভাবে সরকারকে কর দেয়নি বলে অভিযোগ ছিল৷ বিষয়টি গড়ায় আদালতেও৷ তারই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত তিন  টেক জায়ান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এনবিআর এর করজালে আসল৷

এনবিআরের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন যে তারা ভ্যাট দিত না সেটা বলা যাবে না৷ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে বিলগুলো পরিশোধ হতো সেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখত৷ সেটা আমরা পেয়ে যেতাম৷ এখন গুগল, অ্যামাজান, ফেসবুক সরাসরি ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে৷ এতে করে তাদের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হল৷ সরকারও এখন থেকে একটা সঠিক হিসাব পাবে৷ এখন পর্যন্ত তো তিনটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে, অন্যরাও আলোচনা করছে৷ দ্রুতই তাদেরও নিবন্ধন হয়ে যাবে৷’’

‘সরকার এখন থেকে সঠিক হিসাব পাবে’

This browser does not support the audio element.

তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে কত টাকা আয় করে তা নিয়ে যেমন ধোঁয়াশা রয়েছে তেমনি তাদের আয় থেকে যথাযথ কর মিলবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷  বিশেষ করে বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অফিস না থাকায় তাদের দায়বদ্ধ করা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে৷ 

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন তো সরকার কোন টাকাই পেত না৷ এখন অন্তত একটা হিসাব তো এনবিআর করতে পারবে? আস্তে আস্তে অবৈধ পথগুলো বন্ধ হবে৷ ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়াতে বিষয়টা একধাপ এগুলো৷ এরপর অফিস করার জন্যও তাদের চাপ দেওয়া যাবে৷ এই কাজগুলো করতে গেলে এনবিআরের হাতে কিছু তথ্য-উপাত্ত তো থাকতে হবে৷ সেই তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পথ প্রশস্ত হল৷ বছর শেষে সরকার এই সেক্টরের হিসাবটা তো পাবে৷’’

বাংলাদেশে অফিস করার জন্য ফেসবুককে অনেকদিন ধরেই বলে আসছে সরকার৷ কিন্তু ফেসবুক তাদের পলিসিতে এখন বাংলাদেশে অফিস করার বিষয়টি আনেনি৷ তবে বাংলাদেশের জন্য একটি পৃথক ডেস্ক করে বাংলা ভাষাভাষীও নিয়োগ দিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তাদের সঙ্গে অব্যহতভাবে যোগাযোগ রাখছি৷ পাশাপাশি ভ্যাটের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা তাদের চাপ দিয়েছি৷ এর ফলশ্রুতিতে তারা ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে৷ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আমরা কথা বলছি৷’’

কত আয় করছে গুগল-ফেসবুক?

বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন বাজারের বড় একটি অংশ আসে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে৷ একসময় সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের মতো প্রথাগত মাধ্যমেই তারা বিজ্ঞাপন দিত৷ কিন্তু এখন ডিজিটাল মাধ্যমকে ক্রমশ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ বিজ্ঞাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করছে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো অনলাইন প্লাটফর্মে৷ এ প্রসঙ্গে মোবাইল অপারেটর রবির হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মার্কেটিংয়ের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করি এর ৬০ শতাংশই এখন ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যয় করছি৷ আসলে মানুষের বিচরণ যেখানে সেখানে আমরা বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করে থাকি৷’’

গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, ইউটিউব, নেটফিক্সসহ আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কত টাকার বিজ্ঞাপন যাচ্ছে এর কোন সঠিক হিসাব কারো কাছে নেই৷ বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রধান পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কিছু খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করি৷ সুনির্দিষ্ট করে তো বলা যাবে না, তবে এই বাজারটা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার৷'' ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবালের ডিজিএম সাইমুন বাড়ৈ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, এটা ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ এখানে সঠিক হিসাব করার কোন সুযোগ নেই৷’’

সুমন আহমেদ সাবির

This browser does not support the audio element.

২০১৯ সালের এপ্রিল ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব উচ্চ আদালতে একটা রিট করেছিলেন৷ সেই রিটের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে বিটিআরসি জানিয়েছিল, গত ৫ বছরে তিনটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ আট হাজার ৭৪৪ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ৭৩ টাকা খরচ করেছে৷ বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এই অর্থ আদায় করেছে৷ এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৬২৯ ডলার৷ রবি খরচ করেছে ৩২ কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলার এবং বাংলালিংক খরচ করেছে ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৭ ডলার৷

ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত নভেম্বরে আদালত এই রিটের রায় দিয়েছেন৷ সেখানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন করার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে কত টাকা পাওয়া যাচ্ছে সেটাও ছয়মাস অন্তর আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে৷ মূলত ওই রায়ের প্রেক্ষিতেই এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট নিবন্ধন করেছে৷’’

ভ্যাট নিবন্ধন হলেই কি সব বিজ্ঞাপন বৈধ পথে যাবে?

গুগল, ফেসবুক বা অ্যামাজান ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন করলেই কি তাদের প্রতিষ্ঠানের সব বিজ্ঞাপন বৈধপথে যাবে? জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘‘এখানে যে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, সেটা থেকে কি এতদিন সরকার কোন রাজস্ব পেত? পেত না৷ এখন নিবন্ধনের ফলে বৈধপথে যে বিজ্ঞাপনগুলো যাবে তার থেকে তো রাজস্ব পাবে৷ এতে সরকার একটা ধারণা তো করতে পারবে, এই মার্কেটটা কত বড়? হুন্ডির মাধ্যমে কত টাকা যাচ্ছে, তার ধারণাটাও পাওয়া যাবে৷’’

ড. মইনুল খান বলেন, ‘‘এখনই সব বিজ্ঞাপন বৈধপথে যাবে সেটা বলা যাবে না৷ তবে প্রক্রিয়াটা তো শুরু হল৷ আমাদের কাছে এখন পরিস্কার একটা ধারণা থাকবে৷ সেগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিতে পারব৷’’এক্স সলুশন লিমিটেডের পরিচালক দ্রাবির আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে তো আমরা এই মার্কেটটার সাইজটাই জানি না৷ একেকজন একেক ধরনের তথ্য দেন৷ আমার মনে হয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈধ পথে খরচ অনেক কমবে৷ ফলে সবাই বৈধ পথেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা চিন্তা করবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ