করোনা সংকটে সংখ্যা নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত, হিসেব কষে দেখাতে চাচ্ছি বাংলাদেশে কতজন আক্রান্ত হওয়া যুক্তিযুক্ত, কতজনের মৃত্যু৷ চলুন আগে একটু সংখ্যার মারপ্যাঁচ দেখে নেই৷
বিজ্ঞাপন
অনেকেরই অভিযোগ, বাংলাদেশ সরকার করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না৷ বিপুল জনগোষ্ঠীর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যের প্রতি তীব্র অনাস্থা থাকায় এমন মনোভাব যেকোনো দেশেই তৈরি হওয়া স্বাভাবিক৷ অভিযোগ রয়েছে, লক্ষণ থাকলেও অনেককেই পরীক্ষা করা হচ্ছে না, ফলে বাংলাদেশে প্রকৃত শনাক্তের সংখ্যা জানা যাচ্ছে না৷ এইসব অভিযোগ সত্যিও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে৷
কিন্তু অনেকে এর পেছনে যুক্তি দাঁড় করাতে গিয়ে ইটালিসহ বিভিন্ন দেশের দিনপ্রতি আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশে আক্রান্তের ধীরগতির তুলনা করছেন৷ এই সংখ্যাগত তুলনাটাই ভুল৷ কেন? সংখ্যার জবাবে সংখ্যা দিয়েই বলছি৷
১) পৃথিবীর একেক দেশে টেস্টের জন্য একেকরকম নীতি নেয়া হয়েছে৷ কোনো দেশ মৃদু লক্ষণ দেখা দিলেও অনেককেই টেস্ট করছে, যাকে অ্যাগ্রেসিভ টেস্ট বলা হচ্ছে৷ এর উদাহরণ জার্মানি৷ অন্য অনেক দেশের চেয়ে এজন্যই জার্মানিতে শনাক্তের সংখ্যাও বেশি, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কম৷
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য তীব্র লক্ষণ দেখা না দিলে বেশিরভাগ মানুষকেই টেস্ট করছে না, বরং বাসায় সেল্ফ কোয়ারান্টিনে থাকতে উৎসাহিত করছে৷ ফলে দেশটিতে শনাক্তের সংখ্যা কম হলেও সে তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি৷
কোনো দেশই লক্ষণ না থাকলেও তার সব নাগরিকের টেস্ট করাচ্ছে, এমনটা হচ্ছে না৷ সেটা যৌক্তিক না, বাস্তবও না৷
২) স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত দেশগুলোতেও টেস্টের সংখ্যা সমান নয়৷ স্টাটিস্টার ২০ মার্চের তথ্য অনুযায়ী বলছি৷ তাইওয়ান প্রতিদিন গড়ে টেস্ট করছে প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৯০ জনের৷ অন্যদিকে বাহরাইন প্রতি লাখ নাগরিকের জন্য প্রতি দিন ১০৯৮টি৷ কিন্তু দুই দেশেরই শনাক্ত আর মৃতের সংখ্যায় খুব বেশি তফাত নেই৷
ফলে যে যত বেশি টেস্ট করবে, সে তত ভালোভাবে করোনা ঠেকাতে পারবে, এটা সবসময় সত্যি নয়৷ তবে হ্যাঁ, টেস্ট একমাত্র না হলেও অবশ্যই সংক্রমণ ঠেকানোর গুরুত্বপূর্ণ একটা হাতিয়ার৷ লক্ষণ থাকলেই টেস্ট করে আইসোলেশন বা কোয়ারান্টিনের পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ তবে সে টেস্ট লক্ষণযুক্ত মানুষ ও তার আশেপাশের মানুষের জন্য, একটা দেশের সব মানুষের জন্য নয়৷
৩) ইটালিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি৷ ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশটির ২২.৬ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষের বয়স ছিল ৬৫ বছর বা তার ওপরে৷ আর করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি তো এই বয়সে বেশি, এটা এরই মধ্যে প্রমাণিত৷
অন্যদিকে স্টাটিস্টা বলছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৬৫ বা তার চেয়ে বয়স্ক মানুষের হার কেবল ৫.১৬ শতাংশ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগ৷
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷
৪) ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে ইটালিতে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের গড় আয়ু ৬২৷ আর যারা মারা গিয়েছেন তাদের একটি বড় অংশের বয়স ৬০ বছরের উপরে৷ এর মানে কি কম বয়সের কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না? অবশ্যই হচ্ছেন, কিন্তু তাদের অনেককেই লক্ষণ না থাকায় টেস্ট করা হচ্ছে না, বা তারা সাইলেন্ট স্প্রেডার অর্থাৎ কোনো লক্ষণ টের পাচ্ছেন না৷
ফলে পৃথিবীর কোন দেশে আসলে কতো সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত, এর সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, সব আক্রান্তকে শনাক্ত করা গেলে মৃত্যু হার অনেক কমই হবে৷
৫) নিশ্চয়ই আমরা এতোদিনে জেনে গেছি, যারা বয়স্ক এবং তাদের মধ্যে যাদের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়বেটিস, হৃদরোগের মতো নানা জটিলতা রয়েছে, তারাই এই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন৷ একই সঙ্গে বেশ কিছু জটিলতা থাকার বিষয়টিকে কোমরবিডিটি বলা হয়৷
ইটালিতে এই কোমরবিডিটি নিয়ে অনেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গিয়েছেন৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে ইটালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বেশ উদার নীতি গ্রহণ করেছেন৷ ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ মারা গেলেই তাকে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় সংযুক্ত করা হচ্ছে৷
এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আগে ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া ছিল, পরে করোনা সংক্রমণ ঘটেছে, এমন রোগীর মৃত্যুকেও এই তালিকায় ফেলা হয়েছে৷ ফলে কে আসলে হৃদরোগে মারা গিয়েছেন, কে নিউমোনিয়ায় মারা গিয়েছেন আর কে করোনা ভাইরাসের কারণেই মারা গিয়েছেন, তা বোঝার কোনো উপায় নেই৷
৬) আমরা কেবল ইটালিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, অ্যামেরিকা, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনা করছি৷ কিন্তু কী কারণে চীনের হুবেই প্রদেশের এতো কাছে থেকেও তাইওয়ানে সংক্রমণ এতো কম, সেটা বিবেচনায় আনছি না৷
তাইওয়ানে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২১ জানুয়ারি৷ এখন দেশটির আক্রান্ত-মৃত্যুর হিসেব জানেন? জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে প্রথম শনাক্তের ৬৯ দিন পর ৩০ মার্চ পর্যন্ত তাইওয়ানে মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩০৬ জন, মারা গিয়েছেন ৫ জন৷
আমরা যে চীন, ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশের ১৪ দিন, ২১ দিন, ২৮ দিনের হিসেব দিচ্ছি, তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তা মিললো না কেনো?
৭) ভাইরাসটির সংক্রমণ কোথায় কিভাবে হবে, এটি অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে৷ একটু দেশের মানুষের হাইজিন, অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মেলামেশার ঘনিষ্ঠতা, পর্যটন, সীমান্তে কঠোরতা এমনকি আবহাওয়ার ওপরও এর অনেককিছু নির্ভর করতে পারে৷ কিন্তু ভাইরাসটি একেবারেই নতুন ও অপরিচিত হওয়ায় এখনই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা৷
১৪ ফেব্রুয়ারি মিশরের কায়রোতে শনাক্ত হয় আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম করোনা সংক্রমণ৷ আফ্রিকানিউজ বলছে, ৪৫ দিন পর ৩০ মার্চ পর্যন্ত পুরো মহাদেশের ৪৬ দেশ মিলিয়ে শনাক্ত হয়েছেন ৪,৭৬০ জন, মারা গেছেন ১৪৬ জন৷ ইউরোপের সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান চিত্রের সঙ্গে আফ্রিকা মিললো? না৷
৮) আফ্রিকা মহাদেশের ৫৪টি দেশের মধ্যে ৪৬টিতে সংক্রমণ ঘটেছে, ৮টিতে এখনও ঘটেনি৷ আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ ঘটেছে সাউথ আফ্রিকায়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সাউথ আফ্রিকার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত লেসোথো নামের দেশটিতে কোনো সংক্রমণ নেই৷
৯) এবার একটু অন্যরকম সংখ্যার হিসেব৷ শুনতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু অপ্রিয় সত্য হচ্ছে সংখ্যা অনেকক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারে৷ যেভাবে রীতিমতো ম্যাপ তৈরি করে আমরা পুরো পৃথিবীর পরিসংখ্যান দেখাচ্ছি, তাতে ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু আমি আরো কিছু সংখ্যা বলছি, শান্ত হয়ে একবার ভেবে দেখুন, তুলনা করে দেখুন৷
* আমি যখন লেখাটি লিখছি, তখন বিশ্বজুড়ে নভেল করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭,০৮৩৷
* ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু হয় মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায়৷ এই রিপোর্ট পাবেন এখানে৷
* ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ মানুষের৷ বাংলাদেশে সে বছর সড়কে মারা গিয়েছেন আনুমানিক ২০ হাজারের বেশি মানুষ৷ প্রায় প্রতি বছরেরই হিসেবটা এমন৷ এই মৃত্যুরও একটা ম্যাপ রয়েছে, দেখতে পারেন এখানে৷
* বিশ্বে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, অর্থাৎ হৃদযন্ত্র ও রক্তচাপ সংক্রান্ত নানা রোগ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে পৃথিবীজুড়ে মানুষের মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ঘটে এই কারণে৷ ২০১৬ সালের হিসেবে প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলেন হৃদযন্ত্রের নানা রোগে৷ এই তথ্যটি দেখতে পারেন এখানে৷
একবার চিন্তা করে দেখুন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সড়ক দুর্ঘটনা বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি৷
কিন্তু তারপরও করোনার সংখ্যা নিয়ে এতো আতঙ্ক কেনো?
এর প্রথম কারণ, এমন বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম ভাইরাস অন্তত গত ১০০ বছরে দেখা যায়নি৷ ইবোলায় মৃত্যুর হার গড়ে ৫০% হলেও এর সংক্রমণের গতি ছিল তুলনামূলক কম৷ অন্যদিকে নভেল করোনায় মৃত্যুর হার গড়ে ২-৩% বা তারও কম হলেও এটি সংক্রমিত হয় খুব সহজেই৷
আর দ্বিতীয় কারণ আমাদের সংখ্যাপ্রীতি ও সংখ্যাভীতি৷ সড়ক দুর্ঘটনার উদাহরণই আবার টানছি৷ আট জেলায় আট জন মারা গেলে পত্রিকার ভেতরের পাতায় এবং টিভির স্ক্রলে খবর আসে৷ কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় আট জন মারা গেলে সেটা প্রথম পাতা এবং ব্রেকিং এ জায়গা করে নেয়৷ আবার সেই আট জন একই পরিবারের হলে আমরা বিশেষ সংবাদসহ আরো বড় ট্রিটমেন্ট দেই৷ কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা তো সমানই, তাহলে? আমরা কি তাহলে মৃত্যুতেও গ্ল্যামার খুঁজি? চমক খুঁজি?
তাই বলে যেকোনো সংখ্যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করতে বলছি না৷ আমার অনুরোধ, সংখ্যা অনেকক্ষেত্রে খুব বিভ্রান্তিকর হতে পারে৷ ফলে কেবল একপাক্ষিক চিত্র না দেখে আরো বিশদ অনুসন্ধান করাটা প্রয়োজন৷
আমার পরামর্শ, সংখ্যায় ভয় পাবেন না৷ সংখ্যার কারণে বিভ্রান্ত হবেন না৷ আমরা বরং নিয়মিত হাত ধুই, নাক-চোখ-মুখে হাত না দেই, কয়েকটা দিন মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলি৷ আর বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের তাদের কাজটা করতে দেই৷ এতে আমাদের সবার মঙ্গল৷
করোনার মোকাবিলায় সংহতি ও হাস্যরস
করোনা সংকট মানুষের অনেক ভালো দিক জাগিয়ে তুলেছে৷ সরাসরি সহায়তা থেকে শুরু করে প্রতীকী পদক্ষেপ অথবা অন্যদের উৎসাহ দেবার অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে৷ এমনই কিছু উদাহরণ তুলে ধরা যাক৷
ছবি: picture-alliance/TASS/O. Smolskaya
টেডি বেয়ারের সন্ধানে
সপ্তাহের পর সপ্তাহ স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় বাবা-মায়েরা পড়েছেন সমস্যায়৷ বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের অনেক মানুষ তাই খুদেদের আমোদের ব্যবস্থা করছেন৷ তাঁরা বাচ্চাদের জানালায় টেডি বেয়ার রেখে দিচ্ছেন৷ বাবা-মার সঙ্গে হাঁটতে বের হলে শিশুরা এক মানচিত্র অনুসরণ করে এমন আরও পুতুল খুঁজে পেতে পারে৷
করোনা ভাইরাস বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে৷ তাঁদের সুরক্ষার জন্য অনেক সুপারমার্কেট বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে৷ দিনের নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র বয়স্কদের বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Dambarage
দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বৈচিত্র্য
তুরস্কে বয়স্কদের সহায়তা করতে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সের মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন কোনো রোগে ভুগছেন, সুরক্ষার স্বার্থে তাদের জন্য কার্যত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে৷ ২৫ বছর বয়সি এক তরুণ বয়স্কদের মনোরঞ্জন করতে তাদের বাসার সামনে গানবাজনার ব্যবস্থা করেছে৷ অন্য কিছু দেশে বৃদ্ধাবাসের সামনে গানের খবর পাওয়া গেছে৷ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কাউকে তাঁদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. U. Uysal
সব ঠিক হয়ে যাবে
ইটালির অনেক মানুষ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্যত গৃহবন্দি রয়েছেন৷ কবে এই দশা শেষ হবে, কেউ জানে না৷ কমপক্ষে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ কার্যকর থাকবে৷ মানুষ পরস্পরকে সাহস জোগাতে অনেক কিছু করছে৷ অনেক জানালা ও বারান্দায় রামধনুর ছবিসহ তিনটি শব্দ শোভা পাচ্ছে, বাংলায় যার অর্থ ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca/IPA/P. Tenagli
ইটালির প্রতি সংহতি
কঠিন সংকটের মাঝেও সংহতিবোধের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে৷ রাশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে বেসলান শহরের মানুষ বারান্দায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ইটালির প্রতি সংহতিবোধ জানিয়েছে৷ প্যারাগুয়ে, পোল্যান্ড ও বসনিয়ায় শহরের অনেক ভবনে ইটালির পতাকার রংয়ের আলোকসজ্জা দেখা গেছে৷ চীনেও একটি বাসের গায়ে ইটালির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/TASS/O. Smolskaya
চলো ছুটি-ছুটি খেলা যাক
আডাস ভাসিলিয়াউস্কাস করোনা মহামারির কারণে ফটোগ্রাফার হিসেবে কোনো কাজ পাচ্ছেন না৷ দমে না গিয়ে তিনি ড্রোনের মাধ্যমে লকডাউন চলাকালীন লিথুয়েনিয়ার মানুষের কার্যকলাপের ছবি তুলছেন৷ তাতে বেশ কিছু মজার দৃশ্য ধরা পড়ছে৷ ছাদের উপর রোদ পোয়ানো থেকে শুরু করে বারান্দায় ব্যায়ামের ছবিতেই মানুষের মনোভাব ফুটে উঠছে৷ কেউ ছদ্মবেশ পরে খেলছে, কেউ বা আগামী ছুটিতে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখছে৷
ছবি: picture-alliance/Cover Images/A. Vasilauskas
প্রাণীর করুণ দশা
অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের জনজীবনও স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছে না বলে উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীও সমস্যায় পড়েছে৷ ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবীরা পথের কুকুরের খাদ্যের ব্যবস্থা করছেন৷ জার্মানির পশুকল্যাণ সংগঠনও শহরে অভুক্ত পায়রার হাল সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. M. Rahman
সম্মান ও মর্যাদা
অনেক দেশে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ ইউরোপের কিছু দেশে বিকালে ডাক্তার, নার্স ইত্যাদি পেশার মানুষের এই ভূমিকাকে সম্মান জানাতে হাততালি দেবার রেওয়াজ চালু হয়েছে৷ পাকিস্তানে সাদা পতাকা দুলিয়ে ডাক্তারদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে৷ তবে তাঁদের সহায়তা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাসায় থেকে মহামারির গতি কমাতে অবদান রাখা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/PPI
সমবেত প্রচেষ্টা
গোটা বিশ্বে স্বেচ্ছাসেবীরা সেলাই মেশিন বার করে সহজ মাস্ক তৈরি করছেন৷ তবে এভাবে সংক্রমণ এড়ানো সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ একমাত্র মুখ ও নাক ঠিকমতো ঢাকতে পারলে কমপক্ষে ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করা যায়৷ আর্মেনীয়-সিরীয় এই নারীরা যে মাস্ক তৈরি করছেন, সেগুলি আলেপ্পোর মানুষের কাছে বণ্টন করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
ফাউ হিসেবে টয়লেট পেপার
বর্তমান সংকটের সময় শুধু জার্মানিতেই টয়লেট পেপারের আকাল দেখা যাচ্ছে না৷ অ্যামেরিকার মিনেসোটা রাজ্যে এক রেস্তোরাঁয় ২৫ ডলারের বেশি মূল্যের খাবার অর্ডার দিলে বিনামূল্যে একটি টয়লেট পেপারের রোল পাওয়া যাচ্ছে৷ মালিক বলেছেন, ক্রেতারা সেটা পেয়ে মন খুলে হাসছেন৷ সেটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো পাওনা৷ বলা বাহুল্য, বিপণন কৌশল হিসেবে এমন চমক সত্যি কাজ করছে৷