বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, নিরাপত্তা নিয়ে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সংকট আছে৷ তবে তাকে বড় করে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো অনেক দেশে নিয়মিত খুন খারাবি হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশে কিছু একটা হলেই তারা হইচই করে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব পরিস্থিতির বাইরে নয়৷ তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সার্বিকভাবে দেখতে হবে৷
একটি ঘটনা থেকে একটি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, এটা বলা চলে না, বলে মনে করেন ড. জিয়া রহমান৷ ইটালির নাগরিক তাবেলা সিজার-এর হত্যা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে; এই অবস্থায় ‘পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য’ কোনো তৃতীয় পক্ষ এই পথ বেছে নিতে পারে৷ ‘‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বাস্তবিক বিপদ সম্পর্কে কোনো সঠিক হদিশ দেওয়া হয়নি’’, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল প্রসঙ্গে বলেন তিনি৷
নিরাপত্তা একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেই বিচারে বিদেশি স্থাপনাগুলোর জন্য বাড়তি প্রস্তুতি ও সতর্কতা নেওয়া অবশ্যই উচিত, বলে মনে করেন ড. রহমান৷ তবুও এটাকে আলাদা করে দেখার কোনো কারণ নেই৷ যেমন জঙ্গিবাদ আজ একটা বিশ্বব্যাপী ঘটনা; জঙ্গিতৎপরতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর ‘এক ধরনের অর্জন আছে’, বলে ড. রহমান দাবি করেন৷ তেমনই ব্লগার হত্যার ক্ষেত্রে এক ধরনের রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলাগত অ্যাম্বিভ্যালেন্স বা ‘দোদুল্যমানতা’ দেখেন অধ্যাপক জিয়া রহমান৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷