1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে কি আবার সহিংস জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে?

এম আবুল কালাম আজাদ
৭ অক্টোবর ২০২২

‘‘দেখানোর দরকার ছিল দেখায় দিছে, ঠেকাইতে পারে নাই৷ আবার যখন দরকার হবে দেখায় দিবে, ঠেকাইতে পারবে না,” এভাবেই বলেছিলেন আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)-এর সক্রিয় অনুসারী রাকিবুল ইসলাম রাকিব৷

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছর পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছর পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত (ফাইল ছবি)ছবি: bdnews24.com

২০১৬ সালের জুলাইয়ের পর হঠাৎ জঙ্গি হামলা কেন বন্ধ হয়ে গেল বা জঙ্গিরা হামলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন ২০১৭ সালে নওগাঁয় নেয়া এক সাক্ষাৎকারে৷

রাকিব সে সময় দাবি করেছিলেন, সব শ্রেণি-পেশায় তাদের লোক আছে, যারা নীরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সময়মতো তারা বেরিয়ে আসবে৷ সে বছরের আগস্টে পুলিশ রাকিবকে লালমনিরহাটের বাড়ি থেকে আটক করে৷ যদিও পুলিশ তাকে নব্য জেএমবি'র প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাবি করেছিল৷

সম্প্রতি সন্দেহভাজন কয়েকজন জঙ্গি আটক এবং বেশ কিছু যুবকের ‘নিখোঁজ' হওয়ার খবরে এই অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অনেকের ধারণা৷ কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন নিকট ভবিষ্যতে জঙ্গিদের আবার সহিংস রূপে দেখা যেতে পারে৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাফিকুল ইসলামের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ গত মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন হলে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী (সংসদ) নির্বাচনের সময় জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং এর কিছু আলামতও দেখা গেছে৷

তাহলে কি ২০১৭ সালে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের করা দাবি অনুযায়ী জঙ্গিরা আবার ‘দেখিয়ে দেয়া'র প্রস্তুতি নিচ্ছে? সে সময় রাকিব পরিস্কার ইঙ্গিত দিয়েছিল যে জঙ্গি হামলা বন্ধ হলেও ভবিষ্যতে সময়-সুযোগমতো আবার তারা তৎপর হবে৷ জঙ্গিদের কৌশল ও জঙ্গি প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে তার দাবিটিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না৷

বেশ কয়েক বছর ধরে জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করছে এমন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো সহিংস তৎপরতার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতি বেছে নেয়, যা নির্ভর করে কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক প্রবণতার উপর৷ অন্য সময়ে তারা প্রচারণা ও কর্মী সংগ্রহের মাধ্যমে সংগঠনের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে৷ এই পর্যায়ে নিবেদিত কিছু কর্মী বাছাই করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ‘জিহাদের' জন্য প্রস্তুত করা হয়৷

"একদিকে পুরাতন জঙ্গি সংগঠন, যেমন জেএমবি, আন্সার-আল ইসলাম ও হুজিবি সংগঠিত হচ্ছে, অন্যদিকে এসব সংগঠনের কিছু প্রবীণ নেতা জেল থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছোট ছোট দল গঠন করে কাজ করছে৷ অনেক ক্ষেত্রে তারা নতুন নাম দিয়ে গোপনে যুবকদের সক্রিয় করছে,” জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে ডয়েচে ভেলেকে বলছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-র অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম৷

অতীতের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় মূলত এই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ কেননা, সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর সেই সুযোগটাই তারা কাজে লাগাতে চায়৷

তবে দেশে যদি শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে আফগানিস্থান, সিরিয়া ও কাশ্মীরে বড় ধরনের কর্মকাণ্ড না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থান ঘটার আশঙ্কা নেই বলে এই কর্মকর্তার ধারণা৷

অতীতে যে পরিস্থিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে

বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হামলা শুরু হয় ১৯৯৯ সালের শুরুতে এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত হামলা চলতে থাকে৷ সে সময় হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) ও জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)৷ ২০০৬ ও ২০০৭ সালে জঙ্গি নেতাদের আটক করে ফাঁসি দেয়া ও কয়েকশ জঙ্গি আটকের প্রেক্ষিতে জঙ্গি হামলা থেমে যায়৷

সে সময় মনে করা হয়েছিল জঙ্গিরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না৷ কিন্তু হামলা বন্ধ হলেও জঙ্গিরা কার্যত বসে থাকেনি৷ সামর্থ্য হারিয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যায়৷ ভিতরে ভিতরে সংগঠিত হতে থাকে৷ কৌশল পাল্টে গোপনে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আবার হামলার সক্ষমতা অর্জন করে৷ ঠিক এমনটাই ঘটেছে ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত৷ সে বছরগুলোতে জঙ্গিরা শক্তি অর্জন করেছে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আবার হামলা শুরু করে৷ সে সময় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ইরাক-সিরিয়ায় আল কায়েদা ও নতুন জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান ও তৎপরতা বাংলাদেশের জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করে৷ ফলে তারা একের পর এক হামলা চালায়৷

২০১৬ পরবর্তী পরিস্থিতি

সে বছরের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ময়দানে হামলার পর দেশে বড় ধরনের হামলা হয়নি৷ ধারণা করা হয়, পুলিশ ও র‍্যাবের অভিযানে সন্দেহভাজন শতাধিক জঙ্গির মৃত্যু ও কয়েক হাজার সন্দেহভাজন জঙ্গির আটকের ফলে হামলা থেমে যায়৷ তবে পূর্বের ন্যায় জঙ্গিরা থেমে যায়নি৷

"মূলত অনলাইনে তারা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়৷ বিশেষ করে করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালে জঙ্গিরা অনলাইনে প্রচার-প্রচারনায় তৎপর ছিল৷ এ সময় তারা শত শত সমর্থক, বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে৷ এদের কয়েকজন আফগানিস্থান-কাশ্মীর-পাকিস্তান পাড়ি দিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে,” পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা ডয়েচে ভেলেকে বলেন৷

তার মতে, পুরাতন হুজিবি নেতাদের মধ্যে যারা জেলে বা জেলের বাইরে আছে, তারা সক্রিয় হয়েছে৷ এরা নবীনদের হিযরত ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করছে৷ পাহাড়ি অঞ্চলে এদের কিছু গোপন তৎপরতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়৷ আনসার-আল ইসলামের মতো তারাও অনেক তৎপর গত কয়েক মাস ধরে৷

এদিকে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যারা হুন্ডির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকে টাকা সংগ্রহ করে জঙ্গিবাদে ব্যবহার করছিল৷ আহামেদুল ইসলাম দাবি করেন, গত তিন বছরে তারা কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে৷ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বেড়ে গেছে বলেও তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন৷ 

আগামী দিনে জঙ্গিদের নতুন রূপে দেখা যেতে পারে-এমন আশঙ্কাও রয়েছে৷ বিগত কয়েক বছরের কর্মতৎপরতা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় নতুন কৌশল নিয়ে তারা আবির্ভূত হবে৷ এমনকি তাদের হামলার ধরনও পাল্টে যাবে বলে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার ধারণা৷

জেলেবন্দি জঙ্গি রাকিবের দাবি সঠিক হোক আর না হোক বাংলাদেশে আবারও জঙ্গিদের উত্থান ঘটার আশঙ্কা রয়েছে৷ কেননা, ২০১৬ সালের পর জঙ্গিরা গত ৬ বছরে নীরবে আবার সংগঠিত হয়েছে, শক্তি অর্জন করেছে৷ এখন তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে৷ অনুকুল পরিবেশ পেলেই তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে৷

এ প্রসঙ্গে সিটিটিসির প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়টাকে উগ্রবাদী সংগঠনগুলো ব্যবহার করতে চায়৷ তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে৷ সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি৷'' পুলিশের অন্যসব ইউনিট তৎপর৷ পুলিশের তৎপরতার কারণে জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য হামলা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করা কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন৷

২০১৯ সালের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ