বাংলাদেশে কেউ 'সংখ্যালঘু' নন, দিল্লিতে বললেন হাসান
২ নভেম্বর ২০২২
মঙ্গলবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে একথা বলেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সকলের সমান অধিকার।
বিজ্ঞাপন
কলকাতায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পর দিল্লি এসেছেন হাসান মাহমুদ। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে মাহমুদ এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ''প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার আছে। তার দাবি, ক্ষমতাসীন দল সজাগ ও সতর্ক। তাই এবছর দুর্গাপুজো নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে কেটেছে। আগের বছরের তুলনায় সাতশটি পুজো বেশি হয়েছে।''
ভারতে বিতর্কিত সিএএ সম্পর্কে মন্ত্রীর বক্তব্য, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
হাসান মাহমুদের বক্তব্য, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা জরুরি। আর এখানেই ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, ''স্থিতিশীলতা না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হতে পারে না। বাংলাদেশে গত দশ বছরে যে উন্নতি হয়েছে তা স্থিতিশীল সরকার আছে বলেই। এই উন্নয়নে ভারতেরও ভূমিকা আছে।'' তিনি বলেছেন, আগামী বছর দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন হবে। সেখানে বাংলাদেশকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী
সময়ের ধারাবাহিকতায় শতকরা হারে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমেছে এবং বেড়েছে৷ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন পরিসংখ্যান জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Jibon Ahmed
বর্তমান সংখ্যা
বিবিএসের করা বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ৷ হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১ দশমিক ৬ ভাগ৷ ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ৷ সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৪৬ লাখের হিসাবে তাদের সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ৷
ছবি: Jibon Ahmed
স্বাধীনতার পরে
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ার হারে আবারো ধীরগতি দেখা যায়৷ ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারিতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ছিলো ১৪.৬ শতাংশ৷ ২০১১ সালে সেটি কমে আসে ৯.৬ শতাংশে৷ অর্থাৎ বাংলাদেশ আমলে ৩৭ বছরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর শতকরা হার কমেছে ৫ শতাংশ৷ ১৯৭৪ সালে এ সংখ্যা হয় ১ কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার৷
ছবি: Jibon Ahmed
দেশভাগের আগে
১৯১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সেসময় পূর্ব বাংলায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার ছিলো ৩১ শতাংশ৷ ১৯৪১ সালে ২৮ শতাংশ৷ অর্থাৎ ২০ বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার কমেছে ৩ শতাংশ৷ তবে ১৯৪১ থেকে ১৯৭৪ সময় হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার কমে যায় প্রায় ১৫ শতাংশ৷ এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে ভারত-ভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ বিভিন্ন কারণে হিন্দু-মুসলিম উভয়ের দেশান্তরী হওয়ার ঘটনা ছিল৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
পাকিস্তান আমলে
১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিলো ৯৭ লাখ ৬ হাজার৷ ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে এ সংখ্যা ৯৯ লাখ ৫০ হাজার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সংখ্যায় কতোটা কমেছে
ভারত-ভাগের পর ১৯৫১ সালে ৯৭ লাখ ৬ হাজার থেকে ২০১১ সালে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৮ লাখে৷ কিন্তু সংখ্যাগুরু মুসলিমদের তুলনায় এই হার কমেছে৷ এই কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান শুধু পাকিস্তান আমলে কিংবা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরই যে দেখা যাচ্ছে তেমন নয়৷ বরং ব্রিটিশ আমলেও এই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক হার কমে যাওয়ার প্রবণতা ছিল৷ মুসলিমদের জন্মহার বেশি হওয়াকে এর কারণ হিসাবে দেখান কেউ কেউ৷
ছবি: DW
5 ছবি1 | 5
তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন কিছু শোনাতে পারেননি হাসান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ''আমরা যেখানেই যাই, তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এর থেকেই এর গুরুত্ব কতটা, তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে। তারপরেও বলব, এই বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। আশা করছি, জট কাটবে, চুক্তি সম্ভব হবে।''
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ''ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো বিস্তৃত হচ্ছে। তাতে দিল্লি ও ঢাকা দুই পক্ষেরই লাভ। ভারত সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। দুই দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের বলি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও উন্নতি করে চলেছে দুই দেশ।''
জিএইচ/এসজি (তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন)