1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে কেন স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০২০

বাংলাদেশে ৭১ জন চিকিৎসকসহ অন্তত পৌনে দুইশ স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক মারা গেছেন৷ এর বাইরে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারান্টিনে আছেন৷

ছবি: DW

শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৪৪ জন৷ আর মারা গেছেন ৮৪ জন৷ বাংলাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৭১ চিকিৎসক ও ৬২ জন নার্সসহ কমপক্ষে পৌনে দুইশ স্বাস্থ্যকর্মী এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন৷ সে হিসেবে আক্রান্তদের শতকরা প্রায় ৮ ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী৷ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী অন্তত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ইটালিতে প্রায় ৮.৫%, স্পেনে ১৫% এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ও মিনেসোটা রাজ্যে আক্রান্তদের প্রায় ২০% স্বাস্থ্যকর্মী৷ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তুলনা করলে বাংলাদেশে আক্রান্তের হার নেহায়েত কম নয়৷ কারণ চীনে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্তের মাত্র ৪% ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী৷ তাছাড়া এসব দেশে করোনার প্রকোপ বেড়েছে বাংলাদেশের আগে থেকে৷ পর্যাপ্ত পিপিইর অভাব, নিম্নমানের মাস্ক ও সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

ডা. নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

‘‘প্রথমত, যথাযথ নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই প্রথম দিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা দিতে বাধ্য করা হয়েছে৷ তারপর তাদের কাছে যেসব সামগ্রী গেছে তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের,’’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন৷ 

তিনি যোগ করেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, এন-৯৫ মাস্কের নামে তাদের যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটা অত্যন্ত নিম্নমানের৷ তৃতীয়ত, কুর্মিটোলা বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যারা এই চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের নানা ধরনের সংকট রয়েছে৷ এমনকি তারা ঠিকমতো খাবারও পাচ্ছেন না৷ ফলে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন৷ যখন কেউ মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন তখন তিনি নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহারে অত বেশি মনোযোগী থাকেন না৷ আর চতুর্থত, এদের কোন প্রশিক্ষণই নেই৷ মিডিয়ার মাধ্যমে দেখে যা শিখেছেন তাই প্রয়োগ করে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন৷ ফলে তাদের জানায় ঘাটতি রয়েছে৷’’

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার কারণে, অনেক হাসপাতাল ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে৷ করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়েই সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দিন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আনতে তার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চেয়েও পাওয়া যায়নি৷ এমনকি সরকারী অ্যাম্বুলেন্সও পাননি তিনি৷ এখনও হাসপাতালগুলোতে যারা সরাসরি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তাদের কাছে উপযুক্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়নি৷ হাসপাতালগুলোতে নেয়া হয়নি ‘ট্রায়জের' (বিশেষ ব্যবস্থা যেখানে সব রোগীকে পৃথক করে চিকিৎসা দেয়া হয়) ব্যবস্থাও৷

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘(স্বাস্থ্যকর্মীরা) বাংলাদেশে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন কারণ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভালো সেবা দিচ্ছেন৷ তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছেন৷’’ 

ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন

This browser does not support the audio element.

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম কি তারা পাচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আগে পাইনি তবে এখন পাচ্ছি৷ এখন তো প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখভাল করছেন৷ ফলে আর সমস্যা হবে না৷'' এন-৯৫ মাস্কের নামে যা দেওয়া হচ্ছে তা নিম্নমানের স্বীকার করে ডা. মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘ডাক্তাররাও এমন অভিযোগ করছেন৷ খাবার দাবার নিয়েও সমস্যা হচ্ছে৷ এগুলোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে বলেছি৷’’

বেশ কয়েকজন চিকিৎসক বলছেন, অনেক রোগী তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ এ কারণেও ভয়াবহ রোগটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বড় অংশ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন৷ সেটি হলে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন৷

সরকারপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সেনাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের যারা এগুলো ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছেন তারা মনে করেছিলেন, ডেঙ্গুর মতো পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ফেলব৷ ফলে যে দুই মাস তারা সুযোগ পেয়েছিলেন তখন কিছুই করা হয়নি৷ শুধু ফাঁকা বুলি দিয়ে গেছেন৷ যখন আক্রান্ত ধরা পড়ল তখনও শুধু মনোবল দিয়েই চিকিৎসকদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে তারা অনেক বেশি আক্রান্ত হয়েছেন৷ এখন কিছু কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে৷’’

বাংলাদেশ টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সেলিম মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে আমাদের অন্তত ২০ জন টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন৷ আমরা সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে বলেছি৷ আমাদের সবাইকে আগে অফিসে হাজির করানো হচ্ছে৷ তারপর কাজ ভাগ করা হচ্ছে৷ আমরা বলেছি, আগে কাজ ভাগ করে দেন৷ যাদের প্রয়োজন নেই তারা কেন অফিসে আসবে? এতে আমাদের লোকজন বেশি করে আক্রান্ত শুরু হলে কিন্তু কাজ করার লোক থাকবে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ