1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে কোন পদ্ধতিতে কতটা সংস্কার হবে?

৫ জানুয়ারি ২০২৫

১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে প্রথম দফায় গঠিত ছয় সংস্কার কমিশন৷ প্রস্তাবনা পাওয়ার পর সংস্কারের রূপরেখা কীভাবে চূড়ান্ত হবে বা কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা৷

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

সংস্কার কমিশনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বল জানা গেছে, সরকারের গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন' সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ভূমিকা রাখবে৷ এরজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমান্বয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে ওই কমিশন৷ চূড়ান্ত রূপরেখা বাস্তবায়নের কীভাবে হতে পারে সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবে কমিশন৷

প্রসঙ্গত, ছয় সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন' গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে৷

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন' সদস্য হিসেবে থাকছেন৷ আমাদের জানানো হয়েছে৷''

ঐকমত্য হলে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে: ড. শরীফ ভূঁইয়া

This browser does not support the audio element.

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ওই কমিশনটা (জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন) মূলত প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমতের কমিশন৷ ওখানেই  কী কী সংস্কার হবে, তা চূড়ান্ত হবে৷''

আর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেটা কীভাবে হবে তাও জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ তবে নির্বাচিত সংসদ ছাড়াতো আর সংবিধান সংস্কার বা আইনগত সংস্কার করা যাবে না৷''

সংস্কারের রূপরেখা তৈরিতে সংলাপ

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য বা একমত হওয়া যাবে সেই সংস্কারগুলো করা হবে৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দেয়ার পরই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কাজ শুরু হবে৷ এই কমিশন আলাদাভাবে প্রত্যেক কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ করবে৷ আর সেখানে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে এবং তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে৷

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আসলে মূল সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সংসদকে৷ শুধুমাত্র নির্বাচন বা একান্ত না করলেই নয়, এমন সংস্কারগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে৷ সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন তো এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ তাই ঐকমত্য হলে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে৷ এজন্য জাতীয় ঐকমত্যের কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চুক্তি হতে পারে৷ কীভাবে সেটা হবে তা ওই সংলাপেই ঠিক হবে৷’’

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ ইংরেজি দৈনিক নিউ এজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখন সাবজেক্ট ওয়াইজ কনসালটেশনের জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন করা হয়েছে৷ ওই কমিশনের চেয়ারম্যান আমি নিজে৷ এবং প্রফেসর আলী রীয়াজ সহ-সভাপতি৷ এখন আমরা মিলে আরেকটা কনসেনসান ডেভেলপের চেষ্টা করছি৷ সেটা কীভাবে হবে৷ সমাজের আদানপ্রদান কীভাবে হবে৷ যাতে সর্ববসম্মত কিছু এটা বের করা যায়৷ সব বিষয়ে একমত না হলেও যেন অন্তত কিছু বিষয়ে একমত হওয়া যায়৷ তখন সেটাই আমাদের সংস্কার৷ সবার যেহেতু সম্মতি থাকবে তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে৷ আশা করছি জানুয়রিতেই এটা শুরু করতে পারব৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সংস্কার আমাদের একজনের মাথা থেকেতো আসবে না৷ সবার কাছ থেকে নিয়েই এটা হবে৷ ১০ জনের মাথা থেকে নিয়ে নির্যাস হয়ে এটা আসল৷ বাইরে সরকারের নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই৷ আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের নিজস্ব থাকবে৷ আমাদের একেক জনের একেক মত৷ একেক জন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ কাজেই সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই৷''

বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ 

এদিকে সংস্কারের বিষয়ে নিজেদের সুপারিশমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিভিন্ন কমিশন৷ এ বিষয়ে তিনটি কমিশন থেকে তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷  

দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সুপারিশের মূলে রয়েছে একটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতি দমন কমিশন৷ আমরা চাইছি যাতে যে কারুর দুর্নীতি তারা তদন্ত করতে পারে৷ আবার তাদের জবাবদিহিতাও যাতে থাকে৷ তারা যাতে কাউকে ছাড় না দেয়৷ আবার কাউকে অযথা হয়রানি না করে৷ এজন্য আমাদের প্রস্তাবে কাঠামোগত দিকও থাকছে৷ আবার তারা জবাবদিহিতা কোথায় করবেন, নিয়োগ কীভাবে হবে তারও প্রস্তাব থাকছে৷’’

‘‘আর টিআইবির একজন হিসাবে বলছি যে, আমরা ওয়াচডগ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করব৷ আমাদের প্রস্তাবগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয় সেটাও আমরা দেখব,’’ বলেন তিনি৷

এদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ আমাদের কমিশনের  প্রধান ওই কমিশনেরও সদস্য৷ সেখানে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের অবস্থান তুলে ধরবেন৷’’

তিনি জানান, ‘‘আমরা একটি জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থার সুপারিশ করছি৷  মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে আমরা প্রধান্য দিয়েছি৷ আর পুলিশের বিশেষ করে কনস্টেবল বা নিম্নপদে যারা আছেন তাদের ওয়ালফেয়ারের ব্যাপারেও সুপারিশ আছে৷’’

‘‘আমরা চিন্তা করছি পুলিশের বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার প্রস্তাব দেয়ার৷ যেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত হবে,’’ বলেন তিনি৷

জবাবদিহিতা কোথায় করবেন, নিয়োগ কীভাবে হবে তার প্রস্তাব থাকছে: ড. ইফতেখারুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা নতুন করে সংবিধান লেখা বা পরিবর্তনের কোনো সুপারিশ করছি না৷ এগুলো জনগণই ঠিক করবে৷ আমরা কিছু জায়গায় সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করছি৷ যেমন ৭০ অনুচ্ছেদ এখন যেভাবে আছে সেভাবে থাকা উচিত কী না৷ প্রধানমন্ত্রীর হাতে এখন অনেক বেশি ক্ষমতা আছে, সেটা থাকা উচিত কী না৷ সেটা কীভাবে ভারসাম্য অবস্থায় আনা যায়৷  সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কীভাবে র‌্যাশনালাইজ করা যায়৷ নির্বাচন কমিশন আরো কীভাবে স্বাধীন করা যায়৷ আমরা পদ্ধতিগত দিকগুলো বলেছি৷''

উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়৷ এই সরকার সংস্কার এবং নির্বাচন দুইটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে৷ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জুন মাসে নির্বাচন হবে৷

সংস্কারের জন্য ৩ অক্টোবর পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ করা হয়৷ সেগুলো হলো: বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ও দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ৭ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের৷ প্রথম ধাপের এই ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে৷ পরে আরো পাঁচটি  কমিশন গঠন করা হয়েছে তারাও নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিলে তা নিয়েও জাতীয় সংস্কার কমিশনে সংলাপ হবে৷ প্রতিটি কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ ৯০ দিন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ