‘ক্ষমতাসীনরা সংবাদমাধ্যমকে সব সময় শত্রু মনে করেছে’
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নানা দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যথেষ্ট হচ্ছে? আপনি নিজেও তো একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ছিলেন৷ সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলবেন?
মুস্তাফিজশফি :বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সিরিজ প্রতিবেদনের প্রথম উদাহরণ দৈনিক ইত্তেফাকে আবেদ খানের ‘ওপেন সিক্রেট’৷ ওপেন সিক্রেট ছিল মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর সরেজমিন প্রতিবেদন৷ সেটাকে যদি আমাদের প্রথম ভিত্তি ধরি, তাহলে আমি বলবো যে, আমাদের দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেক এগিয়েছে৷
আপনি আমার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কথা বলেছেন৷ আমাদের শুরুর সময়টায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগটা বেশি ছিল না৷ আমাদের প্রথমত, সেরকম প্রশিক্ষক ছিল না৷ লেখাপড়া করার খুব বেশি সুযোগ ছিল না৷ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ নামে একটি বিভাগ ছিল৷ বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না৷ আমি নিজে সাংবাদিকতায় পড়িনি, বাংলায় পড়েছি৷ আমি কাজ করতে করতে একেবারে মফস্বল থেকে শুরু করে, সাংবাদিকতার প্রতিটি স্তর পেরিয়ে এখন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি৷
আগে যে সুযোগের অভাব ছিল, এখন কিন্তু সেরকম না৷ এখন সবাই জেনে-বুঝে সাংবাদিকতায় আসছেন৷ তারা জানেন, অনুসন্ধান কীভাবে করতে হয়৷ সমস্যা অন্য জায়গায়৷ শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সবক্ষেত্রেই শর্টকাট করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে৷ এই শর্টকাটে জনপ্রিয়তা অর্জন, অতিক্রম করার প্রবণতা, সেই প্রবণতা কিন্তু সাংবাদিকতাকেও পেয়ে বসেছে৷
‘প্রতিবেদনটির গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও কিন্তু অনেক বিতর্ক আছে’
বিশ্বের সাথে তুলনা করলে আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কতটা এগিয়েছে?
শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিকভাবেও এই শর্টকাট প্রবণতা আছে৷ আমরা যদি পুলিৎজার পুরস্কারগুলো পর্যালোচনা করি, সেখানেও যে পুরস্কারগুলো পাচ্ছে, সেই বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা একেবারে পিছিয়ে আছে তা বলা যাবে না৷ এখানকারও অনেক প্রতিবেদন বৈশ্বিক যে বিভিন্ন সংস্থা আছে, সেখানে বিবেচনার মধ্যে গিয়েছে৷ সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলো'র একটি প্রতিবেদন, যেটা রোজিনা ইসলাম করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের যে পদক দেয়া হয়েছে, সেখানে জালিয়াতি হয়েছে- এই রিপোর্টটিকে কিন্তু আমি একেবারে বিশ্বমানের রিপোর্ট বলবো৷
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়৷ তা কি বেড়েছে? আইন কি সহায়ক?
আমি এক বাক্যে সহায়ক বলবো না৷ আইনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে৷ ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে৷ এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একদিকে আমাদের স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ আবার অন্যদিকে আমি বলবো, এই আইনটির কারণে আমরা অনেক বেশি দায়িত্বশীল হয়েছি৷ আরো সতর্ক হয়েছি৷ ফলে এই আইনটির পরও যারা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছেন, তারা সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা আরো বেশি পালন করে এগিয়ে যাচ্ছেন৷
বাংলাদেশে কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঝুঁকি বেশি?
বেশি আমি বলবো না৷ ঝুঁকি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সব সময়ই ছিল৷ ভবিষ্যতেও যে থাকবেনা তা আমি বলবো না৷ বৈশ্বিক যে ঝুঁকি সেই তুলনায় বাংলাদেশে ঝুঁকি কম বলে আমি মনে করি৷ কারণ, বাংলাদেশে তো যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা করতে হচ্ছে না৷
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগে ভূমিকা রাখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা ‘ওয়াটারগেট কেলেংকারি’৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
ঘটনার শুরু
১৯৭২ সালের ১৭ জুন ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট ভবনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদরদপ্তরে পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ তাদের মধ্যে একজন সিআইএ-র সাবেক কর্মকর্তা জেমস ম্যাকর্ড৷ ঘটনার সময় তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনি প্রচারণার জন্য গঠিত সংস্থায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন বলে ১৯ জুন জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট৷ তবে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেন প্রধান জন মিচেল তা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Paul J. Richard/AFP/GettyImages
চোরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিক্সন ক্যাম্পেনের টাকা
ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানান, ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিসে ঢোকার চেষ্টা করা এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার ডলারের ক্যাশিয়ার্স চেক পাওয়া গেছে৷ চেকটি আপাতদৃষ্টিতে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের বলে জানায় পত্রিকাটি৷
ছবি: washingtonpost.com
ডেমোক্রেটদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জন মিচেল নিক্সনের রিপাবলিকান দলের একটি গোপন তহবিল নিয়ন্ত্রণ করতেন, যেটা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ে ব্যবহার করা হতো৷
ছবি: washingtonpost.com
ওয়াটারগেট ঘটনার সঙ্গে নিক্সন ক্যাম্পেনের সম্পৃক্ততা
বব উডওয়ার্ড (ডানে) ও কার্ল বার্নস্টিন (বামে) ১০ অক্টোবর জানান, ওয়াটারগেটের ব্রেক-ইন ছিল নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের পক্ষ থেকে চালানো রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি ও ডেমোক্রেটদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা তৈরির চেষ্টার অংশ৷ অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনি প্রচারণা সম্পর্কে তথ্য পেতে তাদের অফিসের টেলিফোনে আড়িপাতার যন্ত্র বসাতে ঐ পাঁচ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন নিক্সন ক্যাম্পেনের কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ডিপ থ্রোট’
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন তাদের কয়েকটি প্রতিবেদনে সূত্রের নাম উল্লেখ করেননি৷ পরে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাদের ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ বইতে ‘ডিপ থ্রোট’ নামে একটি সূত্রের কথা জানানো হয়৷ সব সূত্রের মধ্যে এই সূত্রটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলা জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কিন্তু কে ছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উডওয়ার্ডকে তথ্য দিয়েছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’৷ তাই উডওয়ার্ডও ডিপ থ্রোটের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন৷ তবে প্রতিবেদনগুলোতে গোপন সব তথ্যের উপস্থিতি দেখে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ডিপ থ্রোটের পরিচয় জানতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন৷ কিন্তু পারেননি৷ অবশেষে নিক্সনের পদত্যাগের ৩১ বছর পর ২০০৫ সালে জানা যায় এফবিআই-এর সেই সময়কার দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্ক ফেল্ট ছিলেন সেই ডিপ থ্রোট৷ ফেল্টের বয়স তখন ৯১৷
ছবি: picture-alliance/FBI Collection at NARA
কেন ডিপ থ্রোট তথ্য ফাঁস করেছিলেন?
ফেল্টের পরিবারের দাবি, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের কারণে ফেল্ট তথ্য ফাঁস করেন৷ এদিকে, উডওয়ার্ড তার ‘দ্য সিক্রেট ম্যান’ বইয়ে জানান, ১৯৭২ সালের মে মাসে এডগার হুভারের মৃত্যুর পর ফেল্ট মনে করেছিলেন, ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় এবার তাকে এফবিআই প্রধান করা হবে৷ কিন্তু তা না করে আইন প্রয়োগের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা নৌ কর্মকর্তা প্যাট্রিক গ্রে’কে প্রধান করা হয়েছিল৷ এতে ফেল্ট অসন্তুষ্ট ছিলেন৷
ছবি: FBI Collection at NARA/Consolidated/picture alliance
ফেল্টের সঙ্গে উডওয়ার্ডের যোগাযোগ পদ্ধতি
গোপনে কথা বলতে তারা দুটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন৷ ফেল্টের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ড নিজের ব্যালকনিতে টবে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিতেন, যা দেখে ফেল্ট বুঝতেন, উডওয়ার্ড কথা বলতে চান৷ আর ফেল্ট কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ডের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের রিসিপশনে উডওয়ার্ডের নামে থাকা ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ২০ নম্বর পাতায় ‘২০’ লেখাটি গোল করে সেখানে দাগ কেটে সময়টা বলে দিতেন৷ মাঝেমধ্যে ফেল্টের বাসায়ও ফোন করতেন উডওয়ার্ড৷
ছবি: AP
হোয়াইট হাউসের তোপের মুখে ওয়াশিংটন পোস্ট
ওয়াশিংটন পোস্টে একের পর এক প্রতিবেদন নিয়ে খুশি ছিল না নিক্সন প্রশাসন৷ নিক্সনের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত যুদ্ধ শুরু করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট৷ এসব প্রতিবেদন মিথ্যা তথ্যে পরিপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়েছিল৷ এছাড়া ওয়াটারগেট নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ও টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু না বললেও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের সমালোচনায় মুখর ছিল হোয়াইট হাউস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ওয়াশিংটন পোস্ট নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের সন্দেহ
ওয়াটারগেট নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে শুরুর দিকে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছিল তার গুরুত্ব অন্যান্য গণমাধ্যম বুঝতে পারেনি৷ শুধু তাই নয়, ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’ ও ‘ওয়াশিংটন স্টার-নিউজ’ ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রতিবেদন করেছিল৷ এছাড়া পোস্টের একটি প্রতিবেদনের তথ্য না ছাপিয়ে হোয়াইট হাউসের ঐ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের সংবাদ ছেপেছিল ‘শিকাগো ট্রিবিউন’ ও ‘ফিলাডেলফিয়া ইনক্যোয়ারার’৷
ছবি: AP
তথ্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
ওয়াটারগেটে অবৈধ প্রবেশের পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্ভবত জানতেন না নিক্সন৷ তবে এফবিআই এক চোরের খাতায় হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার নাম পেলে চিন্তিত হয়ে ওঠেন নিক্সন৷ তিনি এফবিআই-এর তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন বলে ‘স্মোকিং গান’ শীর্ষক অডিও টেপগুলো থেকে জানা যায়৷ এসব টেপে নিক্সন ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা রেকর্ড করা ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/Everett Collection
নিক্সনের পদত্যাগ
ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, এফবিআই-এর তদন্ত ইত্যাদি কারণে নিক্সন প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছিল৷ এই ঘটনা তদন্তে সেনেটে একটি কমিটিও গঠন করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নিক্সন ইম্পিচমেন্টের শিকার হতেন৷ সেটা আঁচ করতে পেরেই ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি৷ ফলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র দেড় বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷
ছবি: Everett Collection/imago images
‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’
ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বিস্তারিত ১৯৭৪ সালে ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ নামে প্রকাশিত এক বইয়ে তুলে ধরেছিলেন বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন৷ বইয়ে ওয়াটারগেট কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত নিক্সন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নিক্সনের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ‘প্রেসিডেন্ট’স মেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ ঐ ঘটনায় নিক্সন ক্ষমা পেলেও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
13 ছবি1 | 13
এর বাইরে আর কোনো ঝুঁকি এখানে আছে কিনা...
আমি আইনের বিষয়টি আবারও বলতে চাই৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিন্তু আমরা বিরোধী নই, আইনটির প্রয়োজন আছে৷ কিন্তু সম্পাদক পরিষদের যে স্ট্যান্ড, এই আইনের কিছু নিবর্তনমূলক ধারা আছে৷ সেগুলোতে স্বাধীন সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করেছি৷ সেই মনে করাকে এখনো আমি মনে করি সঠিক৷ ওই ধারাগুলোকে বাতিল ও সংশোধন করে সাংবাদিকতা সহায়ক করা উচিত৷ আরেকটি ঝুঁকি আছে৷ বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পে এখন বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বিনিয়োগ করেছে৷ তাদের পত্রিকায় সাংবাদিকদের বিছুটা হলেও সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়৷
প্রতিষ্ঠানগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আগ্রহী? তারা কি বিনিয়োগ করে?
আগ্রহ নাই সেটা নয়৷ কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের তো সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ এটা শুধু আমার পত্রিকার কথা বলছি না ৷ আমি এখনকার পরিবেশের কথা বলছি৷ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও এখন পত্রিকার মালিক৷ অনেক এমপি আছেন পত্রিকার মালিক৷ ফলে তার দলের সুবিধা-অসুবিধা তাকে দেখতে হয়৷ তার দলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হলে তিনি তার পত্রিকার সাংবাদিকদের সেটা দিতে নিরুৎসাহিত করেন৷
সংবাদমাধ্যমের ভেতরেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শক্তি রয়েছে বলে মনে হয়?
সেটা আমার পত্রিকায় নেই৷ অন্য কারো আছে কিনা আমি বলতে পারবো না৷ কিন্তু আমি যখন চিন্তা করি, তখন আমার পত্রিকায় যারা বিনিয়োগ করছেন, তাদের স্বার্থটাকে আমার মাথার মধ্যে নিই৷ কিন্তু এখানে একটি উদাহরণ দিতে চাই, ওয়ান ইলেভেনের সময়, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও কিন্তু ‘সমকাল' রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলেছে৷
এমন কী ঘটেছে যে রাষ্ট্রীয় শক্তি কখনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপতে বাধা দিয়েছে বা ছাপতে দেয়নি বা অনুসন্ধান শুরুই করা যায়নি? আপনার অভিজ্ঞতা কী?
আমরা অনেক সময় পার করে এসেছি৷ আমরা স্বৈরশাসনের সময়ে ছিলাম৷ আমি ৯০-এর আগের কথা বলছি৷ সেই সময়ে সাংবাদিকতা কেমন ছিল তা আমরা সিনিয়রদের কাছ থেকে জানি৷ তার পরবর্তী যে সময়টি, তার অবস্থা আমি বলবো, ওই সময়ের চেয়ে ভালো৷ তারপরে সেনা সমর্থিত সরকার পার হয়ে আমরা এখন গণতান্ত্রিক সরকারে বাস করছি৷ আমি জোর দিয়ে বলছি, যারা পত্রিকার মালিক তারা ব্যবসা করবেন, কিন্তু তারা যদি রাজনীতি করেন, তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিঘ্নিত হয়৷
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন
চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭৩ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী মারা গেছেন৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: Getty Images/C. McGrath
ভিক্টোরিয়া মারিনোভা, বুলগেরিয়া
৩০ বছর বয়সি এই টিভি উপস্থাপক সম্প্রতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিয়ে টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন ঐ সাংবাদিকরা৷ সম্প্রতি মারিনোভাকে হত্যা করা হয়েছে৷
ছবি: BGNES
জামাল খাশগজি, সৌদি আরব
আল-আরব নিউজ চ্যানেলের সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট খাশগজি তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ৷ নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেরে ফেলতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/Middle East Monitor
ইয়ান কুচিয়াক, স্লোভাকিয়া
সরকারের সঙ্গে ইটালির মাফিয়াদের সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত করছিলেন স্লোভাকিয়ার এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক৷ গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে তাঁর বান্ধবীসহ হত্যা করা হয়৷ সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাঁকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে৷ কুচিয়াক হত্যার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পদত্যাগে বাধ্য হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Voijnovic
মারিয়ো গোমেজ, মেক্সিকো
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কাজ শুরুর পর থেকেই হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন গোমেজ৷ সেপ্টেম্বরে নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার পর সশস্ত্রদের গুলিতে প্রাণ হারান ৩৫ বছর বয়সি এই সাংবাদিক৷ চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোয় ১০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Cortez
সামিম ফারামারাজ ও রমিজ আহমাদি, আফগানিস্তান
সেপ্টেম্বরে কাবুলে একটি বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে লাইভ করছিলেন সামিম ফারামারাজ৷ ক্যামেরায় ছিলেন রমিজ আহমাদি৷ লাইভ শেষ করছিলেন এমন সময় কয়েক মিটার দূরে আরেকটি বিস্ফোরণ হলে প্রাণ হারান এই দুই গণমাধ্যমকর্মী৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
মার্লোন ডি কারভালু আরায়ুজু, ব্রাজিল
দেশটির বাহিয়া আঞ্চলিক প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি প্রকাশ করেছিলেন এই সাংবাদিক৷ গত আগস্টের এক ভোরে তাঁর বাড়িতে সশস্ত্র কয়েকজন ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Sa
সুজাত বুখারি, কাশ্মীর
জুনে শ্রীনগরে তাঁর সংবাদপত্র অফিসের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইতেন ডয়চে ভেলের এই কন্ট্রিবিউটর৷
ছবি: twitter.com/bukharishujaat
দ্য ক্যাপিটাল, যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে এই সংবাদপত্র অফিসে গুলি করে সম্পাদক ওয়েন্ডি উইন্টার্স, তাঁর সহকারী রবার্ট হিয়াসেন, লেখক জেরাল্ড ফিশম্যান, সাংবাদিক জন ম্যাকনামারা ও বিক্রয় সহকারী রেবেকা স্মিথকে হত্যা করা হয়৷ হত্যার দায়ে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই ব্যক্তি ঐ পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
8 ছবি1 | 8
কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার মতো প্রতিবেদন করে না বা করতে সাহস করে না...
আমি ওইভাবে তুলনা করতে চাই না৷ আল-জাজিরার যে বিষয়টি বলছে ওটা তো বিতির্কিত একটি বিষয়৷ প্রতিবেদনটির গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও কিন্তু অনেক বিতর্ক আছে৷ বলা হচ্ছে, দুই বছর ধরে অনুসন্ধান করা হয়েছে৷ কিন্তু দেখবেন অনেক গ্যাপ৷ দুই বছর অনুসন্ধানে, একটি প্রোপাগান্ডা তো দুই বছরের অনুসন্ধানী রিপোর্ট হিসেবে প্রচার হতে পারে না৷
সাংবাদিক, বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য কোনো সুরক্ষা আইন বা রাষ্ট্রের কোনো সহায়তার দরকার আছে কি না?
আমাকে কেউ আলাদাভাবে সুরক্ষা দেবে এটা আমি মনে করি না৷ আমি মনে করি, আমার বিরুদ্ধে যে আইনগুলো আছে, যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে নিবর্তনমূলক ধারাগুলো আছে, সেগুলো যদি বাতিল হয়, তাহলে আমার সুরক্ষা আমি নিতে পারবো৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের অনেক আইন আছে৷ প্রেস কাউন্সিল আইন আছে, ফৌজদারি আইন আছে৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিককে কেন অন্তর্ভূক্ত করতে হবে? সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো নিবর্তনমূলক আইন থাকবে না, সেটাই আমার সুরক্ষা৷ এই সুরক্ষা আমি চাই রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে৷
বর্তমান সরকার কি সাংবাদিকতার কোনোভাবে গলা চেপে ধরছে বা অনুসন্ধানী সাংদিকতাকে নানা কৌশলে আটকে দিচ্ছে?
আমি ঠিক এটাকে এইভাবে দেখতে চাই না৷ সবসময়ই ক্ষমতাসীনরা কিন্তু সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমে শত্রু মনে করেছে৷ সেটা জাতীয় পার্টি বলেন, স্বৈরশাসন যখন ছিল তখন বলেন বা পরবর্তীতে বিএনপি সরকার এসেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার এসেছিল, আবার বিএনপি, এখন আবার আওয়ামী লীগ সরকার৷ সবার এই জায়গায় মানসিকতা কিন্তু প্রায় কাছাকাছি৷ তারা মনে করেন যে, তাদের কোনো মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে রিপোর্ট গেলে বোধহয় তাদের পুরো দলের বিরুদ্ধে রিপোর্টটি চলে গেছে, পুরো সরকারের বিরুদ্ধে রিপোর্টটি চলে গেছে৷ এটা আমাদের রাজনীতির একটি প্রবণতা৷ এটা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, শুধু বিএনপির নয়, সবার৷
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেন প্রয়োজন? দেশের মানুষ, রাষ্ট্র, সরকারকে কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কোনো সহায়তা করতে পারে?
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়৷ কেন বলা হয়? আসলে এই গণমাধ্যমই চোখ খুলে দিতে পারে সব কিছুর৷ সেই জায়গায় কেউ যখন সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হন, তখন মনে করেন, এটা বোধ হয় তার সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তার দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে৷ কিন্তু ভুল সংশোধন করার জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দরকার৷ আপনি হয়ত বুঝতে পারছেন না যে কী হচ্ছে, সেই জায়গাটিতে সংবাদপত্র ধরিয়ে দেবে আপনাকে৷ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে স্বাধীন সাংবাদিকতা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা খুবই জরুরি বিষয়৷ এটা যদি কেউ ব্যাহত করার চেষ্টা করেন, তিনি বুঝে হোক আর না বুঝে হোক তিনি গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করছেন৷
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
সেরা ১১ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পুলিৎজার পুরস্কারকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে ধারণা করা হয়৷ গত ১১ বছরে কারা পেয়েছেন এ পুরস্কার জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Heidi Levine
২০০৬ সাল
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’-র সাংবাদিক সুজান স্মিড, জেমস ভি গ্রিমাল্ডি এবং আর. জেফরি স্মিথ সে বছর পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ সংস্কারের নামে মার্কিন কংগ্রেসে ওয়াশিংটন লবিস্ট জ্যাক আব্রামোফের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০০৭ সাল
‘দ্য বার্মিংহ্যাম নিউজ’-এর ব্রেট ব্ল্যাকলেজ পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেন তিনি৷ যার ফলে ঐ চ্যান্সেলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০০৮ সাল
এ বছর দু’টি পত্রিকা এ পুরস্কার পায়৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ওয়াল্ট বোগদানিচ এবং জেক হুকার পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ চীন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷ এছাড়া ‘শিকাগো ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিনিধি জিতেছিলেন এই পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৯ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর ডেভিড বার্সতো পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পেন্টাগনের সমর্থনে ইরাক যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে কত কোম্পানি সুবিধাভোগ করছে তাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
২০১০ সাল
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলি নিউজ’-এর বারবারা ল্যাকার ও ওয়েনডি রুডারম্যান এবং ‘নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্র-পাবলিকার শেরি ফিঙ্ক যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেছিলেন৷ একটি অসৎ পুলিশ দলের মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি উদঘাটন করেন ল্যাকার ও রুডারম্যান৷ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছিল৷ ফিঙ্ক ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
২০১১ সাল
‘সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর পেইজি সেন্ট জন সে বছর পুলিৎজার পেয়েছিলেন৷ ফ্লোরিডার বাড়ি মালিকদের সম্পদের ইনস্যুরেন্সে দুর্বলতা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁকে এ পুরস্কার এনে দিয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১২ সাল
‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ম্যাট অ্যাপুৎসো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এইলিন সুলিভান এবং ক্রিস হাওলি সে বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ‘ক্ল্যানডেস্টাইন গুপ্তচর কর্মসূচি’র আওতায় শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায় এপি-র ঐ প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করা হয়৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৩ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর ডেভিড বার্সতো এবং আলেহান্দ্রা ইয়ানিক ফন বেরত্রাব এই বছর পুরস্কারটি পান৷ মেক্সিকোতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কীভাবে ওয়াল-মার্ট ঘুষ দেয়, সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০১৪ সাল
ওয়াশিংটর ডিসির ‘দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ইনটিগ্রিটি’-র ক্রিস হামবি জেতেন এই পুরস্কার৷ কয়লা খনির শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ নিয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও চিকিৎসকের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেছিলেন তার প্রতিবেদনে৷ যার ফলে ঐ আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৫ সাল
এ বছর দুইজন জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এরিক লিপটন কংগ্রেস নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের লবিস্টরা তাদের কতটা প্রভাবিত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক প্রতিনিধির স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের জন্য৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
২০১৬ সাল
চলতি বছরে ‘ট্যাম্পা বে টাইমস’-এর লিওনোরা লাপিটার ও অ্যান্থনি কর্মিয়ার এবং ‘দ্য সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর মাইকেল ব্রাগা জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ফ্লোরিডা মানসিক হাসপাতালের অবহেলার অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তাদের প্রতিবেদনে৷