ডয়চে ভেলের আয়োজনে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে যোগ দিতে জার্মানির বনে এসেছিলেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী৷ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন কোন অবস্থানে, এ নিয়ে মতামত জানিয়েছেন তাঁদের কয়েকজন৷
বিজ্ঞাপন
ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে আছে৷ তাঁর মতে, অতীতে সরকারের নানারকম চাপ থাকলেও, এখন সে চাপ বহুমুখী৷
সৈয়দ আশফাকুল হক
02:46
তবে চাপের মুখে কাজ করায় গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হয়ে উঠছে বলেও মনে করে তিনি৷ তাঁর মতে এই সমস্যা শুধু একটি দেশের নয়, বরং পুরো পৃথিবীর সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রে একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে৷
মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন হুমকির মুখে বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দ আশফাকুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘শক্তিশালী সরকার ও স্বাধীন গণমাধ্যমের লড়াইয়ে সাময়িকভাবে সবসময়ই সরকার জয়ী হলেও, শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমেরই জয় হয়৷''
অজন্তা দেবরায়
01:34
This browser does not support the video element.
নানা ধরনের আইনের মারপ্যাঁচ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য মানবাধিকারকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অজন্তা দেব রায়ের৷ চাপের মুখে, অথবা বিশেষ সুবিধা পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সরকারের হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
অজন্তার অভিযোগ, মূলধারার গণমাধ্যমের বাইরে সামাজিক গণমাধ্যমে যাঁরা কথা বলতেন, তাঁদেরকেও পরোক্ষভাবে চুপ করিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়াটা বিরাট বাধা বলেও মত তাঁর৷
তবে বর্তমানে গণমাধ্যম আলাদা করে বেশি কোনো চাপের মধ্যে আছে বলে মনে করেন না ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন৷ তিনি বরং দায় বেশি দেখছেন সাংবাদিকদের৷ বিশেষ সুবিধা হাসিলের জন্য, বা অন্য কোনো কারণে সংবাদ সেল্ফ সেন্সর করে থাকেন বলেও মন্তব্য তাঁর৷
খালেদ মুহিউদ্দীন
02:09
This browser does not support the video element.
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সমস্যাকে প্রফেশনাল হ্যাজার্ড হিসেবে মেনে নিয়েই সাংবাদিকদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান তাঁর৷ এগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি৷
খালেদ মুহিউদ্দীন মনে করেন, নানা ধরনের চাপ অতীতে যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে, তবে সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরার মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই বলে মন্তব্য তাঁর৷
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি৷ না, এমনিতেই নয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত৷ এই কর্তৃপক্ষ চায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে, এক ভিন্ন উপায়ে৷
ছবি: DW
শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে দাবি করা হয়৷ এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক৷ অনলাইনেও পত্রিকাটি সমান পাঠক প্রিয়৷
ছবি: DW
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ
গত ১৬ই আগষ্টের পর থেকে পত্রিকাটিতে নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন কমে যায়৷ বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও কহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম আলোতে তাদের পণ্য এবং সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপনের তারতম্য
জুলাই মাসে প্রথম আলো গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভস থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য৷
ছবি: DW
নয় কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কমে গেছে
গ্রামীণ ফোনের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষে নির্দেশে বন্ধ হয়েছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভসের হিসেব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতির মুখে ডেইলি স্টারও
বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে প্রথম আলোর সহযোগী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারেও৷ পত্রিকাটিতে জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক৷
ছবি: DW
কাদের নির্দেশে বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন?
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ফোন ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাদের বুঝিয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানায়নি৷ তবে আল-জাজিরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে৷