তিন ব্যক্তি একটি মসজিদে প্রবেশ করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক ইমামকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে৷ তাঁর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ময়মনসিংহ জেলার খানপুর গ্রামে সোমবার বিকেলে আজানের কিছুক্ষণ পরই হামলার ঘটনা ঘটে৷ তিন ব্যক্তি আহমদিয়া মসজিদে প্রবেশ করে ইমাম মুস্তাফিজুর রহমানকে কোপায় বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ প্রধান সৈয়দ নুরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁকে অন্তত চারটি কোপ দেয়া হয়, যা তাঁর ঘাড়ের এবং পেটের পেছনে লেগেছে৷ হামলার কারণে তাঁর ঘাড়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে৷''
গুরুতর অবস্থায় ইমামকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা৷ এদিকে, স্থানীয় জনতা হামলাকারীদের একজনকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয় বলে জানা যাচ্ছে৷ তাকে স্থানীয়রা মারধরও করেছে৷ তবে পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের সঙ্গে সম্প্রতি ইসলামি উগ্রপন্থিদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিদেশিদের উপর হামলার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
বাংলাদেশে আবারো মুক্তমনাদের হত্যা শুরু
গতবছর চার ব্লগার এবং একজন সেক্যুলার প্রকাশককে হত্যার পর কিছু দিন বিরতি ছিল৷ কিন্তু চলতি বছর আবারো শুরু হয়েছে মুক্তমনাদের উপর আঘাত৷ চলতি মাসেই তাতে নিহত চারজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Ramany
নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ড
গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় খুন হন সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় সদস্য নাজিমুদ্দিন সামাদ৷ গতবছর ব্লগারদের যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঠিক সেভাবেই সামাদকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যাওয়া হয়৷ উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী ‘আনসার আল ইসলাম’৷
ছবি: Facebook/Nazimuddin Samad
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খুন
গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহীতে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী৷ বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকগজ দূরে বাসস্টান্ডে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায় দুই দুর্বৃত্ত৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
রূপবানের সম্পাদক খুন
বাংলাদেশে সমকামীদের একমাত্র পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহাস মান্নানকে হত্যা করা হয় তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে প্রবেশ করে৷ কমপক্ষে ছয় দুর্বৃত্ত কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে৷ আর তারপর হত্যাকাণ্ড ঘটায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Ramany
সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট মাহবুব তনয় খুন
সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট এবং মঞ্চকর্মী মাহবুব তনয় ছিলেন মান্নানের বন্ধু৷ তাঁকেও ঐ একইসময়ে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার আল-ইসলাম’ দু’টি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সমকামিতার প্রসারে ভূমিকা রাখায় তাঁদের খুন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Ramany
4 ছবি1 | 4
প্রসঙ্গত, গতবছর বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাঘমারা শহরে সন্দেহভাজন ইসলামী উগ্রপন্থির আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে তিনব্যক্তি আহত হন৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট' সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷ তবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে, স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জামিয়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সেই হামলা চালিয়েছে৷ জঙ্গিগোষ্ঠীটি সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিষ্টান, সুফি মুসলিম এবং শিয়াদের উপর হামলার জন্য দায়ী বলেও জানিয়েছে পুলিশ৷
বাঘমারায় সেই হামলার পর কানপুরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয় পুলিশ, কেননা, সেখানে বারোটি আহমদিয়া পরিবার অবস্থান করছেন৷ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মুখপাত্র আহমেদ তাবশির চৌধুরী জানিয়েছেন যে, স্থানীয় সুন্নি মুসলমানরা সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ' করেছে৷ সেখানে মসজিদ স্থাপনের সময়ও স্থানীয়রা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করেন তিনি৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এক লাখের মতো আহমদিয়া মুসলমান বসবাস করেন৷ অতীতে তাদের উপর একাধিক হামলা হয়েছে৷ সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে৷ খুলনায় একটি আহমদিয়া মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে সেই সময় কমপক্ষে আট ব্যক্তি নিহত হন৷
এআই/এসিবি (এএফপি)
‘‘আল্লাহ’র নামে আর কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর হামলা নিয়ে বার্লিনে মানববন্ধনে প্রদর্শন করা প্ল্যাকার্ডের ছিল বিশেষ কিছু বার্তা৷ চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতাকে ‘না’ বলুন’’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ তাই এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসকে আপনার মুখ বন্ধ করতে দেবেন না৷’’
ছবি: DW/A. Islam
‘‘আল্লাহ’র নামে কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
এই বার্তাটাও পরিষ্কার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলার শিকার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে তাঁকে কোপানো হয়েছিল৷ বার্লিনে মানববন্ধনে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আল্লাহ’র জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ কর’’
ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক প্রবাসী বাঙালি৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও বিপক্ষে অবস্থান তাঁর৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হোন’’
ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্দে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
বাংলা প্ল্যাকার্ড
বাংলা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়েছে মানববন্ধনে৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘নাস্তিকতার জন্য মৃত্যু নয়’’
নাস্তিকতা কারো মৃত্যু বা কারাভোগের কারণ হতে পারে না, এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷ মানবন্ধনে অংশ নেয়াদের সবাই নাস্তিক নন, তবে তাঁরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘শব্দ হত্যা করে না, মানুষ করে’’
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের ছবির সঙ্গে এই বাক্যটি লেখা প্ল্যাকার্ডও ছিল বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে৷ চলতি বছর বাংলাদেশে খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশক৷