1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে চাপে আছে মুক্ত সাংবাদিকতা

৩ মে ২০১৭

বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা কর্তৃপক্ষের চাপ, প্রশাসনের ভয়ভীতি এবং নানা আইনি নিগড়ে হুমকির মুখে৷ সর্বশেষ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সংবাদ মাধ্যমকে আতঙ্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে৷

Symbolbild investigativer Journalismus
ছবি: Hoang Dinh Nam/AFP/Getty Images

আইনমন্ত্রী ওই ধারা বাতিলের কথা বললেও আতঙ্ক কাটছে না৷

ঢাকার একটি অনলাইন পোর্টাল ‘নতুন সময় ডটকম’-এর নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজুকে দু’দিন আগে তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়৷ একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলাও করা হয়৷ এই দু’টি মামলা করে ওয়ালটন নামে একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান৷ দুই মামলায় তাকে রিমান্ডও দেয়া হয়৷ ওয়ালটনের অভিযোগ, ওই নিউজ পোর্টালে তাদের পণ্যের বিরুদ্ধে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছে, যদিও বুধবার রাজু দু’টি মামলায়ই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷ এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেসরকারি পর্যায়ে আইসিটি আইনের অপব্যবহারের একটি উদাহরণ৷

সরকারিভাবেও এই আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ একুশে টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেছিল আশুলিয়া থানা পুলিশ৷ পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নাজমুলকে পুলিশ ২৩ ডিসেম্বর আটক করে আইসিটি আইনে মামলা দেয়৷ নাজমুল প্রায় দুই মাস কারাগারে আটক থাকার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিনে ছাড়া পান৷ এর আগে সাংবাদিক প্রবীর শিকদার এক মন্ত্রীর জমি দখল নিয়ে প্রতিবদেন করায় আইসিটি আইনের শিকার হয়ে কারাগারে গিয়েছেন৷ তাঁকে আটক করা হয়েছিল তা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ধরে৷ পরে তিনিও জামিন পান৷

ফরিদা ইয়াসমিন

This browser does not support the audio element.

গত কয়েক বছর ধরে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়৷ এই আইনের শিকার সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের জন্য এই আইনটি এখন এক মুর্তিমান আতঙ্ক৷ কারণ, এই আইনে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারে৷ আর জামিন পাওয়া সহজ নয়৷ তাই সাংবাদিকদের হয়রানি করতে সরকারের নানা কর্তৃপক্ষ এবং প্রভাবশালীরা এই আইনটি ব্যবহার করছেন৷’’

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সচিবালয়ে বলেছেন, ‘‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে৷ আইনচি সংশোধন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে আরেকটি আইন হচ্ছে৷’’ আইনে কী থাকছে তা না জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নতুন এ আইনে মুক্তভাবে কথা বলার সুযোগ অব্যাহত থাকবে৷’’

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলে, ‘‘গণমাধ্যমে যেসব কর্মীর বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় মামলা আছে, তারা ন্যায়বিচার পাবেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন৷’’

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০১৬ সালে সাংবাদিক হয়রানির ১১৭ টি ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে সরকারি বাহিনীর হাতে ৯ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৯ জন সাংবাদিক৷ ২০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ ৫৭ জন সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসীদের  হামলার শিকার হয়েছেন৷ আর চলতি বছরে হামলা-হুমকির পাশাপাশি একজন সাংবাদিক নিহতও হয়েছেন৷

নাজমুল হুদা

This browser does not support the audio element.

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রচলিত হামলা, হুমকির ও নির্যাতনের সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা এখন সাংবাদিকদের জন্য নতুন আতঙ্ক৷ দু'দিন আগেও একজন সাংবাদিককে এই আইনে আটক করা হয়৷ আমরা চাই এই আইনটি বাতিল হোক৷ কিন্তু নতুন আইনটি যেন ভালো হয়৷ নতুন আইনটি একই রকম বা এর চেয়েও খারাপ হলে তো আমাদের কোনো লাভ হবে না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ তৈরি হয়েছে৷ অদৃশ্য চাপ বা প্রভাবশালীদের হুমকির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ এটা হয়তো সামরিক সরকারের সময়ের মতো সরাসরি হস্তক্ষেপ নয়, তবে এটা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়৷’’

মঙ্গলাবার প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘গত বছর বাংলাদেশ সরকার বিতর্ক ও সমালোচনা ঠেকাতে দমনপীড়ন চালিয়েছে৷ মিডিয়াকর্মীদের হয়রানি ও কর্মক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি দমনমূলক আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ