গোসল করতে গিয়ে লাশ হয়ে গেল এক কিশোর৷ তাকে খুন করার অভিযোগে আটক ব্যক্তি পাসপোর্ট ছাড়া ১০ বছর মহানন্দে ছিলেন বাংলাদেশে৷ আফ্রিকা আর ইউরেপোর পর এ দেশেও ইবোলা এভাবেই আসবে না তো?
বিজ্ঞাপন
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে আঁতকে ওঠে৷ পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে মহামারি হয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশে আতঙ্ক ছড়ালেও বাংলাদেশে অবশ্য এ নিয়ে এখনো তেমন হেল-দোল নেই৷ সরকারের দাবি, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এ নিয়ে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে৷ আবার ইবোলার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ‘বজ্র আঁটুনি' যে ‘ফস্কা গেরো-'র মতো- এ ধারণাও হয়েছে কোনো কোনো প্রতিবেদন পড়ে৷
দেশের শীর্ষ স্থানীয় এক দৈনিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দায়িত্বশীল সূত্র' জানিয়েছে,‘‘ ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার এমন তিনটি দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের জন্য ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আলাদা অভিবাসন ডেস্ক খোলা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে সবাইকে পাঠানো হচ্ছে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি বিদেশফেরত মানুষকে যথেষ্ট তথ্যও দেওয়া যাচ্ছে না৷ একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে, সেটিও দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে৷ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে ভাবে বলছে, সে ভাবেই কাজ করতে হচ্ছে৷ এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশন আগেভাগে যাত্রীদের তালিকা পাঠাচ্ছে, কিন্তু তাঁরা তৃতীয় কোনো দেশ ঘুরে আসছেন কি না, সে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না৷''
সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
8 ছবি1 | 8
বাংলাদেশে কোন দেশ থেকে কখন কে কীভাবে ঢুকে পড়ছে – তা যদি সত্যিই বলা যেতো তাহলে হয়তো কয়েকদিন আগে ঢাকার উত্তরায় স্কুলছাত্র জুবায়ের আহমেদকে প্রাণ দিতে হতো না৷ বয়স মাত্র ১৭৷ গত ৪ অক্টোবর ছেলেটি উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের মাঠে ফুটবল খেলেছে৷ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলা শেষে ছেলেটি ইসমাইল নামের আরেক কিশোর এবং আবু ওবায়েদ নামের এক বিদেশির সঙ্গে মাঠের পাশের পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে৷ একটু বিশ্রামের পর জুবায়ের গায়ের জার্সি খুলে পুকুরে নামে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওবায়েদও নেমে পড়ে পানিতে৷ এক পর্যায়ে ওবায়েদ জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে এবং তার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে৷ শুরু হয় ধস্তাধস্তি৷ ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জুবায়ের মারা যায়৷ মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ওবায়েদ পুকুরের পানিতে জুবায়েরের লাশ ডুবিয়ে ফেলে৷
হত্যারহস্য পুরোপুরি উদঘাটিত হয়েছে এমন দাবি এখনই করা যাবেনা৷ তবে বাংলাদেশ যে এখনো আত্মগোপনের জন্য আদর্শ জায়গা তা কিন্তু এ ঘটনা থেকেও বোঝা গেছে৷ সংবাদ মাধ্যমকে ডিবির (পশ্চিম) উপকমিশনারই বলেছেন, আবু ওবায়েদ ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে থাকলেও তাঁর কোনো পাসপোর্ট নেই৷আলজেরিয়া থেকে একজন যদি টুক করে ঢুকে পড়ে দশটি বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, তাহলে আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে দু-একজন পাসপোর্ট নিয়ে আসতে পারবেনা – এমন দাবি করলেই হবে?
দাবি করা সহজ৷ সহজ কাজটি সরকার কৃতিত্বের সঙ্গেই করেছে৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যদি সত্যিই ভালো হতো, তাহলে কি ইবোলা-আক্রান্ত দেশ লাইবেরিয়া থেকে আসা ৬ জন বাংলাদেশি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া দেশে ফিরতে পারতেন?
ইবোলা যে ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ নয় এটাও কি সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে বলতে হবে? একজন আবু ওবায়েদের চেয়ে একজন ইবোলায় সংক্রমিত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি বিপজ্জনক৷ অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত হতে না পেরে আবু ওবায়েদ নৃশংস খুনীর মতোই হত্যা করেছে এক কিশোরকে৷ তবে ইবোলার রোগী না জেনে, না বুঝেই নীরবে কেড়ে নিতে পারে অসংখ্য মানুষের প্রাণ৷ বাংলাদেশ তা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল৷