বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও আরো অন্তত ৩৭টি ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠন সক্রিয়৷ এছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কৌশলে পরিবর্তন আসলেও তত্পরতা থেমে নেই৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই জঙ্গিবাদের পেছনে রাজনৈতিক মদদ আছে৷
বিজ্ঞাপন
২০০৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশে মোট পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়৷ এগুলো হলো: জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ, শাহদাতই আল হিকমা এবং হিযবুত তাহরীর৷ কিন্তু এরপরও তাদের তত্পরতা বন্ধ হয়নি৷ এ পর্যন্ত পুলিশ ও ব়্যাব বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার সদস্য আটক করলেও, তাদের একটা বড় অংশ জামিনে ছাড়া পেয়ে নতুনভাবে তত্পর৷ বিশেষ করে, হিযবুত তাহরীর প্রায়ই ঢাকায় ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করে তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়৷ প্রায়ই তাদের পোস্টার এবং প্রচার-পত্র চোখে পড়ে৷ নিজস্ব ওয়েবসাইটে তাদের বাংলাদেশে তত্পরতার খবর পাওয়া যায় নিয়মিত৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাদের সদস্যদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়৷ প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক এই জঙ্গি সংগঠনটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০টি দেশে নিষিদ্ধ৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এদিকে জেএমবির শীর্ষ ছয়জন নেতার ফাঁসির পরও সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব এবং কৌশলে কাজ করছে৷ তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে তারা তার প্রমাণ রেখেছে৷ হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান কারাগারে থাকলেও তাদের সদস্যরা সক্রিয়৷ আগে তারা একবার নির্বাচন কমিশনে ভিন্ন নমে নিবন্ধন নিয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টাকরে ব্যর্থ হয়৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো এখন ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে৷ আবার সুযোগ বুঝে তারা একই ছাতার নীচে চলে আসবে৷ তিনি মনে করেন , আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির হুমকির পর বাংলাদেশের জঙ্গিরা উজ্জীবিত হবে এটাই স্বাভাবিক৷ জেএমবির রবিবারের হামলা তারই ফল হতে পারে৷
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের বাইরেও বাংলাদেশে ৩৭টি ছোট-বড় জঙ্গি সংগঠন কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে৷ তিনি মনে করেন, এমনও হতে পারে নিষিদ্ধ হওয়ার পর জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নানা নামে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে৷
ব্রিগেডিয়ার রশীদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক হাজার জঙ্গিকে বিভিন্ন সময় আটক করলেও নিয়মিত মনিটরিং নেই৷ ফলে তারা আটকের পর আবারো ছাড়া পেল কিনা – তার খোঁজ রাখেন না তাঁরা৷ ফলে জঙ্গিরা থেকেই যান৷ অন্যদিকে জঙ্গিদের ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মদদ আছে৷ তাই তারা সক্রিয় থাকতে পারে৷ তাঁর কথায়, রাজনৈতিক ঐক্যমত ছাড়া জঙ্গি নির্মূল সম্ভব নয়৷