1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন জার্মান বিনিয়োগ হালচাল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ মে ২০১৯

বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ বাড়ছে৷ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ৪০০ কোটি ডলার বা ৩৩ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে জার্মানি৷ বিদ্যুৎ, টেক্সটাইলসহ নানা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে সে দেশ৷

ছবি: Reuters/A. Biraj

গত বছর জার্মানভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি যেসব প্রকল্পে বড় অংকের কাজ পেয়েছে, তার মধ্যে আছে ই-পাসপোর্ট, ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৫টি তেল ও গ্যাসভিত্তিক ইঞ্জিন সরবরাহ৷ ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক প্রকল্পের সোয়া তিন হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস৷

পটুয়াখালীর পায়রায় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বড় ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে জার্মানির সিমেন্স এজি৷ 

‘‘জার্মানির সাথে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে’’

This browser does not support the audio element.

জার্মান প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ খাতে কম্বাইন সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য টারবাইন যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে৷ বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ স্টেশনও তারা নির্মাণ করেছে৷

বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোলৎজ গত নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন৷ সেই বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে জার্মানির বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন৷ তিনি জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে জার্মানি ইতিমধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে৷ আরো বিনিয়োগ করতে চায়৷ জার্মানি বাংলাদেশের বিদুৎ ও জ্বালানি খাতে আরো বিনিয়োগে আগ্রহী৷ আর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জানান, ‘‘সরকার দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে৷ বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির সুবিধা নিয়ে জার্মান ব্যবসায়ীরা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপন করতে পারে৷''

এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যানেন নিয়েলস৷ তিনি বাংলাদেশের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে জার্মান বিনিয়োগ নিয়ে বৈঠক করেন৷ বাংলাদেশে জার্মান কোম্পানিগুলোকে আরো বেশি সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷ 

গত অক্টোবরে জার্মানি সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে জার্মান উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান৷ সেখানে জার্মান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ দেশেই কেবল সবচেয়ে উদার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতি রয়েছে৷ বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের শতভাগ মুনাফা ও ইকুইটি স্বদেশে পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে৷ আমরা পারস্পরিক স্বার্থে আপনাদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী৷'' তিনি ঔষধ, পর্যটন, উৎপাদন, আইসিটি, সিরামিকস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে জার্মানির একক বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷''

বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ জার্মানির

পটুয়াখালির পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব করছে বাংলাদেশ সরকার৷ সেখানে পৃথক পৃথক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে৷ এর মধ্যে জার্মানির সিমেন্সের সহায়তায় তৈরি হবে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র৷

এখন পর্যন্ত দেশে নির্মিতব্য বা নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সবগুলোই ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার৷ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট৷ পায়রায় ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি নির্মিত হলে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মর্যাদা পাবে৷ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে৷

ই-পাসপোর্ট

জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানি ৩ কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে৷ ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি অ্যাসেম্বল কারখানা স্থাপন করা হবে৷ এতে বুকলেটের খরচ অর্ধেকেরও কম হবে৷ ৫০ টি ই-গেট দেওয়া হবে৷ সকল সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক ১০ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ সেবা প্রদান করবে৷ একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পার্সোনালাইজেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে৷ পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে ৮টি প্রিন্টিং মেশিন থাকবে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রতি শিফটে ৩০ হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে৷ ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে৷ পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছর৷

বাংলাদেশে ৭২টি পাসপোর্ট অফিস, বিদেশে ৮০টি মিশন, ৭২টি এসবি-ডিএসবি অফিস, ২২টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ সকল অফিসে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রদান করবে৷ এই প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জার্মানিতে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷

পোশাক খাতের বড় বাজার জার্মানি

বাংলাদেশের সঙ্গে এখন জার্মানির ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য৷ এরমধ্যে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে৷ আর জার্মানি বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে৷ জার্মানিতে বাংলাশে থেকে রপ্তানি পণ্যের ৯০ ভাগেরও বেশি তৈরি পোশাক৷ যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক নেয় জার্মানি৷ ‘এভরিথিং বাট আর্মস' এই নীতির আওতায় বাংলাদেশ জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমূক্ত সুবিধা পায়৷ 

‘বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে’

02:49

This browser does not support the video element.

আর জার্মানি বাংলাদেশে প্রধানত যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক পণ্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী রপ্তানি করে৷ বাংলাদেশ থেকে এখন সমূদ্রগামী জাহাজও যায় জার্মানিতে৷ বাংলাদেশে এই জাহাজ নির্মানে জার্মানি কারিগরি সহায়তা দেয়৷ বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি পাটের চা রপ্তানি শুরু হয়েছে দেশটিতে৷ এই চা তৈরিতেও আছে জার্মান সহায়তা৷ জামড়াজাত পণ্যও যাচ্ছে৷

জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, উদার নীতি ও নানা বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধার কারণে বাংলাদেশে এখন জার্মান বিনিয়োগ বাড়ছে৷ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘‘গত দুই বছরে বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাস ৩ হাজার বিজনেস ভিসা দিয়েছে৷''

জার্মানি মান বজায় রাখে

বাংলাদেশে জার্মানির সঙ্গে যাঁরা ব্যবসা বণিজ্য করেন এবং জার্মানির যাঁরা বাংলাদেশে ব্যবসা-বণিজ্য ও বিনিয়োগ করেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ৷ এর সদস্য সংখ্যা এখন চারশ'ও বেশি৷ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জার্মানির সাথে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় তাঁর কন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানিতে ছিলেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘জার্মানি আমাদের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার৷ বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যের দ্বিতীয় বড় বাজার জার্মানি৷ তারা আমাদের এখানকার টেক্সটাইল খাতে অনেক বড় বিনিয়োগ করেছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে এখন বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্য এবং সিরামিক পণ্যও যাচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পাওয়ার সেক্টরে তাদের বিনিয়োগ আমাদের উপকৃত করবে৷ জার্মানির বৈশিষ্ট্য হলো, তারা মান বজায় রাখে এবং বন্ধুত্বের মর্যাদা দেয়৷ তারা বন্দরেও বিনিয়েগ করতে চায়৷ এটা আমাদের স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল দেবে৷ তারা চীনের মতো বন্দর নিয়ে যাবে না৷'' 

‘‘আমাদেরও উচিত হবে তাদের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশ পুরোপুরি নিশ্চিত করা’’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘জার্মানি বাংলাদেশের উন্নয়নেরও বড় অংশীদার৷ তারা বাংলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে জিআইজেড-এর মাধ্যমে অনেক উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করছে৷'' বাংলাদেশের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সুশাসন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও সহায়তা করছে জার্মানি৷৷

দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে জার্মানি

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র রিচার্স ফোলো ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, যে-কোনো দেশের বিনিয়োগকেই স্বাগত জানানো উচিত৷ কারণ, ‘‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে৷'' তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বাণিজ্যের পুরনো বন্ধু জার্মানির বিনিয়োগের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে৷ জার্মানি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে৷ তারা বিদ্যুত , যোগাযোগ, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে, যা আমাদের অনেক উপকারে আসবে৷ তারা ভালো কাজ করে৷ আর জার্মানি নিজেও একটি উন্নত রাষ্ট্র, তাই তারা বিনিয়োগ করলে আরো অনেক উন্নত দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে৷ পুরনো বাণিজ্য বন্ধু এখন যদি আমাদের বিনিয়োগ বন্ধু হয়, তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো পরিপূর্ণূ হবে৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরও উচিত হবে তাদের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশ পুরোপুরি নিশ্চিত করা৷ তারা তাদের প্রাপ্য বিনিয়োগ সুবিধা যাতে পায়, সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ