বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি-র ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা৷
বিজ্ঞাপন
জেএমবি-র আটক সদস্যরা হলেন, ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল-তাসনিম ওরফে নাহিদ, মো. নাঈম আলী, মো. সিকান্দার আলী ওরফে নকি, মাহমুদ ইবনে বাশার, মো. মাসুম বিল্লাহ, ফুয়াদ হাসান এবং আলী আহমদ৷ তাদের বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার অদূরে তুরাগের আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্কিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাদের গোয়েন্দা সদরদপ্তরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷
গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জেএমবি-র সর্বশেষ আমির মাওলানা সাইদুর রহমান আটক হওয়ার পর আব্দুল্লাহ আল-তাসনিম ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে জঙ্গিদের সংগঠিত করার কাজ করছিল৷তারা ভিভিআইপি, ভিআইপিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷''
তিনি জানান, ‘‘হামলার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে তাদের শক্তি সম্পর্কে জানান দিতে চেয়েছিল৷ এরই মধ্যে আইএস বা আইসিস-এর সঙ্গে তারা যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে৷''
এছাড়া তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক তৈরির জন্য ব্যবহৃত ১০ কেজি জেলমিশ্রিত রাসায়নিক, চারটি পিতলের মূর্তি, জেএমবি-র প্রচারপত্র ও বই উদ্ধার করা হয় বলেও জানান মনিরুল ৷
তিনি জানান, ‘‘উদ্ধারকৃত জেল বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷ আর পিতলের মূর্তির গুড়া বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহার করে৷ উদ্ধারকৃত বইয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সংগঠন পরিচালনার জন্য নিয়ম-নীতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে৷ এছাড়া জব্দকৃত লিফলেট বিভিন্ন সময়ে দাওয়াতি কাজে ব্যবহার করে তারা৷''
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি৷ ১৭ই আগস্টের পর তারা সারাদেশে একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন জনকে হত্যা করে৷
২০০৫ সালের ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তখনকার জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি হয়৷
১৭ই আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়৷ এর মধ্যে ৯১টি মামলার বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, ১১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ পলাতক আছে ফাঁসির তিন আসামিসহ ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি৷