1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে মুক্ত সাংবাদিকতা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ মে ২০১৫

ক্রমেই ঝুঁকির মুখে পড়ছে মুক্ত সাংবাদিকতা৷ আরো একবার তার প্রমাণ পাওয়া গেছে মঙ্গলবার সিটি নির্বাচনের সময়৷ মোট ২১ জন সাংবাদিক ঐ দিন হয় পুলিশ অথবা শাসক দলের ক্যাডারদের হাতে হামলার শিকার হন৷ এখনও এর কোনো প্রতিকার হয়নি৷

Bangladesch Protest gegen Ermordung von US-Blogger (Bildergalerie)
ছবি: DW

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা প্রধানত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন৷ বলা বাহুল্য, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাঁদের সুরক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কোনো আইন বা ব্যবস্থা নেই৷

গত মার্চে প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি মিজানুর রহমানকে আটক করে পুলিশ৷ আর আটকের পর পুলিশ হেফাজতে ব্যাপক মারধোর করা হয় তাঁকে৷ তাঁর ওপর নির্যাতন হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডও৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে আটকের পর একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে চলেছে৷ তাই এখনো তিনি কারাগারে আছেন৷ উল্লেখ্য, মিজানুরের সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যের কথা কাটাকাটির জের ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন করা হয়৷

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে দু'জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন৷ এছাড়া পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয়ছে একজনের এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরো একজন সাংবাদিক৷ একই বছরে ২৩৯ জন সংবাদকর্মী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে৷ এর মধ্যে ২১ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে, ৫৬ জন সন্ত্রাসী এবং ৭৮ জন সাংবাদিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷

ওদিকে, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তিনটি দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ এবং ডেইলি সান-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সরকারদলীয় সাংসদ সদস্যরা৷

অন্যদিকে, চলতি বছর সাংবাদিক নির্যাতনের পাশাপাশি ব্লগারদের ওপরও হামলা বেড়েছে৷ এ বছর এখনও পর্যন্ত দু'জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ তার পাশাপাশি আরো অন্তত পাঁচজন ব্লগারকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই আতঙ্কে আছেন শতাধিক ব্লগার৷ উল্লেখ্য, গত এক দশকে বাংলাদেশে ২৩ জন সাংবাদিকককে হত্যা করা হয়৷ আর এ সময় নির্যাতনের শিকার হন প্রায় ৩,২৬৬ জন সাংবাদিক৷

একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামছবি: ETV

তবে শুধু সাংবাদিক নয়, সংবাদমাধ্যমও রয়েছে চাপের মুখে৷ জানুযারি মাসে একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ও এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলি ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ গ্রেপ্তার করা হয় একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ড. কনক সরওয়ারকেও৷ অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের ওপর এক ধরণের ‘সেন্সরশিপ' চলছে বাংলাদেশে৷ একুশে টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার মঞ্জুরুল আলম পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ এই ঝুঁকি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে যেমন আছে, আছে বাইরেও৷''

তাঁর কথায়, ‘‘সাংবাদিকরা পেশাগতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপের মুখে থাকেন, হুমকি এবং নির্যাতনের শিকার হন৷ এটা এই সরকারের আমলে যেমন হচ্ছে, অতীতেও হয়েছে৷'' তিনি অবশ্য এও বলেন, ‘‘কোনো কোনো সাংবাদিক বা সাংবাদিক নেতা নিজেরাই নিজেদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেন৷ বিশেষ করে সাংবাদিকদের রাজনৈতিক লেজুড় বৃত্তি তাঁদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যার চিত্রই বলে দেয় যে বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ৷'' তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷ সরকার এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ যেমন, পুলিশ-প্রশাসন সাংবাদিকদের প্রতি এক ধরণের নেকিবাচক আচরণ করে৷ আর তার প্রতিফলন অন্যান্য পেশি শক্তি ও সন্ত্রাসীদের মধ্যেও পড়ে৷ ফলে সাংবাদিকরা নানা ধরণের হুমকি এবং নির্যাতনের শিকার হন৷ এই সব নির্যাতন এবং হত্যায় বিচার না হওয়ায় পরিস্থতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷'' তবু তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমে পেশাদারিত্বের অভাবও আছে৷ এটাও ঝুঁকির আরেকটি কারণ৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ