বাংলাদেশে এখন মোট ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে৷ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুসন্ধান করে৷ তাতেই উঠে আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির নানা চিত্র৷
টিআইবি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষার সনদপত্র কেনা যায়৷ শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া এবং নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপহার ছাড়াও নগদ অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে৷
স্মৃতির ভেলায় চেপে মাঝেমধ্যে স্কুলবেঞ্চে ফিরে যেতে কে না ভালোবাসে! জার্মানির হিল্ডেসহাইম শহরের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা তাঁদের বিদেশি সহকর্মীদের স্কুলজীবনের স্মৃতি খুঁড়ে তুলে এনেছেন অমূল্য সব মনিমুক্তা৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimসেকালে অনেক স্কুল বালিকারই একটি করে ডায়েরি থাকত৷ পেন্সিলে আঁকা ছবি আর আত্মীয়-বন্ধুদের শুভেচ্ছা বার্তা সেই ডায়েরির পাতায় পেত অমরত্ব৷ ইউক্রেনের ছোট্ট মেয়ে লাদুষ্কার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনে তাঁর ডায়েরিতে বাবা-মা লিখে দিয়েছিলেন এই শুভেচ্ছা বার্তা৷ এ রকম সব স্মৃতিচিহ্ন নিয়েই হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল মিউজিয়ামে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী – ‘১০০১ স্কুলের গল্প’৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimশিক্ষার্থীদের মাঝে দাঁড়ানো শিক্ষিকাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্লাসে তিনি কতটা কঠোর৷ ১৯৭০ এর দশকে তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের স্কুলগুলোতে কড়া শাসনই চলত৷ অন্য দেশের পরিস্থিতিও খুব একটা আলাদা ছিল না৷ এখনো বহু দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে বড় হতে হয়৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimউজবেকিস্তানে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা প্রতি বছর ২২শে এপ্রিল সাবেক কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিনে স্কুলে হাজির হতো উৎসবের পোশাকে৷ বালিকারা কেউ কেউ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেত কনের সাজে৷ আর বালকদের কারো গলায় ঝুলত টাই, কারো গায়ে স্যুট৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimস্কুলবেঞ্চিতে বসে বন্ধুর কানে কানে কথা বলতে গিয়ে কানমলা খাওয়ার স্মৃতি কতোই না মধুর! ৭০ বছর আগে যাঁরা নেদারল্যান্ডসের কোনো স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁদেরও হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা৷ এইসব স্মৃতির ভিড়ে এখনো তাঁদের চোখে ভাসে বর্ণমালা শেখার সেই বই – ‘ওপা হাস’৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheim১৮৮৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা ছিল জার্মানির উপনিবেশ৷ সে সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের স্কুলে শিক্ষকরা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ ১৯১২ সালের এই পোস্টকার্ড সেই গল্পই বলছে৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheim১৯৫০-এর দশকের এই ছবি জার্মানির এক গাঁয়ের৷ সে সময় ফসল কাটার মৌসুমে কৃষক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ফেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগ দিত মাঠের কাজে৷ কাজের ফাঁকে মাঠে বসেই পুরো পরিবারের মধ্যাহ্নভোজ৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheim১৯৮৪ সালে কাজাখস্তান থেকে পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে আসা এক স্কুলছাত্রীর রিপোর্ট কার্ড এটি৷ সে কোন বিষয়ে কতটা ভালো, স্বভাব-চরিত্রে কতটা লক্ষ্মী, তার বিস্তারিত বিবরণ এতে রয়েছে৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheim১৯৬৯ সাল৷ কাজাখস্তানের এই ছাত্র-ছাত্রীরা সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেছে৷ সেখানে স্কুলের নিয়ম হলো- প্রতিটি শিশু প্রথম দিন ক্লাসে আসবে শিক্ষকের জন্য একগোছা ফুল হাতে৷ আর মাধ্যমিক শেষ হলে স্কুল থেকে তাঁরা ফুল হাতেই বিদায় নেবে৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimউজবেকিস্তানের এই ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে৷ স্ট্যালিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পত্রিকায় তাঁদের ছবি পেয়েছে অমরত্ব৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheimমাক্স এঙ্গেলকিং অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেই শিক্ষকতা শুরু করবেন৷ তাঁর হাতের এই গ্লোব দিয়ে এক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের দুনিয়া চেনাতেন শিক্ষকরা৷ ১০০১ স্কুলের গল্প নিয়ে এই প্রদর্শনী চলবে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত৷
ছবি: Schulmuseum Uni Hildesheim
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, বিষয় এবং শিক্ষক নিয়োগসহ নানা বিষয় অনুমোদন করাতে অর্থের লেনদেন হয়৷ টিআইবি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ অনুমোদনের জন্য ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিদর্শন বাবদ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, অনুষদ অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ৩০ হাজার, বিভাগ অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার, পাঠ্যক্রম অনুমোদন ও দ্রুত অনুমোদনের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লেনদেন হয় এবং নিরীক্ষা করানোর জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা লেনদেন করতে হয় বলে জানা যায়৷ তবে প্রতিবেদনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, টিআইবি-র তথ্য এবং অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয়৷ তারা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করেনি বা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ করেনি৷ তারা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
ড. চৌধুরী বলেন, মঞ্জুরি কশিনের উদ্যোগে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বাধীন কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসহ নানা দিক তদন্তের কাজ করছে৷ এ পর্যন্ত তারা ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত শেষ করেছে৷ টিআইবি চাইলে তাদের কাছেও তথ্য-প্রমাণ দিতে পারে৷
তিনি জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মঞ্জুরি কমিশনের ৫৫টি মামলা চলছে৷ তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বিক্রিসহ নানা অভিযোগ থাকায়, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তারা এখন আদালতের নির্দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানান তিনি৷