ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ভবন ধসে নিহত কিংবা আগুনে পুড়ে যাওয়া মরদেহের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশেই৷ এমন কি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শনাক্তেও কাজ করছে এই প্রযুক্তি৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে৷ প্রতিষ্ঠার পর এই ল্যাবরেটরিতে কয়েক হাজার মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে৷ বাংলাদেশে ডিএনএ পরীক্ষার মূল কেন্দ্র এই ল্যাবরেটরি৷
ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান জানান, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৪ সেনা কর্মকর্তাসহ অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে তাঁর ল্যাবরেটরিতে৷ তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের সুযোগ পায়নি এই ল্যাব৷
বাংলাদেশে ডিএনএ পরীক্ষা: সাফল্য, হতাশা
বাংলাদেশে এখন ডিএনএ পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে৷ সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসে নিহত অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি এখনও৷ এই নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Fotolia/Vasiliy Koval
আগুনে পোড়া মরদেহ শনাক্ত
২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১১২ কর্মী৷ নিহতদের অনেকের মরদেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে স্বাভাবিকভাবে তাদের শনাক্ত সম্ভব ছিল না৷ পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP
ভবন ধসে নিহতদের শনাক্ত
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে৷ ২০১৩ সালের এপ্রিলে ভবন ধসে প্রাণ হারায় এক হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক৷
ছবি: Reuters
২০০ জনকে শনাক্ত
ভবন ধসে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি, তাদের মধ্য থেকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২০০ জনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়েছে৷ তবে এখনও ১১২টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
শুধু ভবন ধস বা আগুনে পুড়ে নিহতদের শনাক্ত নয়, হত্যাকাণ্ডেদর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তেও এখন বাংলাদেশে ব্যবহার হচ্ছে ডিএনএ প্রযুক্তি৷ গত বছর এক কিশোরীর বিরুদ্ধে তার বাবামাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়৷ এক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কিশোরীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/GrafiStart
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে৷ প্রতিষ্ঠার পর এই ল্যাবরেটরিতে কয়েক হাজার মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে৷ বাংলাদেশে ডিএনএ পরীক্ষার মূল কেন্দ্র এই ল্যাবরেটরি৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
চাঞ্চল্যকর মামলার ডিএনএ টেস্ট
ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান জানান, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৪ সেনা কর্মকর্তাসহ অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে তাঁর ল্যাবরেটরিতে৷ তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের সুযোগ পায়নি এই ল্যাব৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
টেস্টের নামেই কেটে গেছে ২ বছর
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার নামে দু’বছর সময় কাটিয়ে দিয়েছে ব়্যাব৷ তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর ব়্যাব হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু নমুনা পাঠায়৷ কিন্তু দু’বছর পরও সেসব নমুনার ভিত্তিতে হত্যাকারী শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
‘বাংলাদেশেই সম্ভব’
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা বাংলাদেশেই সম্ভব৷ ব়্যাব অবশ্য তখন বাংলাদেশে পরীক্ষা সম্ভব নয় দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠায়৷
ছবি: dapd
ডিএনএ নমুনা নষ্ট করলে শাস্তি
আগুনের পোড়া কিংবা পচে যাওয়া মরদেহ শনাক্ত থেকে শুরু করে অপরাধী শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় গত বছর একটি নতুন আইন অনুমোদন হয়েছে বাংলাদেশে৷ ‘ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৩ সালের আওতায় ডিএনএ নমুনা নষ্ট করলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Vasiliy Koval
10 ছবি1 | 10
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার নামে ইতোমধ্যে দু'বছর সময় কাটিয়ে দিয়েছে ব়্যাব৷ তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর ব়্যাব হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু নমুনা পাঠায়৷ কিন্তু দু'বছর পরও সেসব নমুনার ভিত্তিতে হত্যাকারী শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
এনএফডিপিএল-এর প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা বাংলাদেশেই সম্ভব৷ ব়্যাব অবশ্য তখন বাংলাদেশে পরীক্ষা সম্ভব নয় দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠায়৷
তবে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার সুযোগ না পেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে৷ সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসে নিহত অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ ভবন ধসে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি, তাদের মধ্য থেকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২০০ জনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়েছে৷ তবে এখনও ১১২টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
এছাড়া ২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুনে নিহতদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্তেও ডিএনএ টেস্টের সহায়তা নেয়া হয়৷
উল্লেখ্য, আগুনের পোড়া কিংবা পচে যাওয়া মরদেহ শনাক্ত থেকে শুরু করে অপরাধী শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় গত বছর একটি নতুন আইন অনুমোদন হয়েছে বাংলাদেশে৷ ডিএনএ নমুনা নষ্ট করলে ‘ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন - ২০১৩’ অনুযায়ী সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে ৷