1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে নারীর ভূমিকা

৫ এপ্রিল ২০১২

গত এক দশকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেক কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন৷ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷

ছবি: DW

একজন আসমার সাফল্য গাথা. . .

যশোরের মেয়ে আসমা মাহমুদ৷ এসএসসি পরীক্ষা দেবার পর ঢাকা জেলার সাভার থানার তালবাগ গ্রামের ইকবাল মাহমুদের সাথে বিয়ে হয় তার৷ বিয়ের সময় কেমন ছিলো আসমার সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা?

উত্তরে আসমা বলেন, ‘‘আমার স্বামী একটা দোকান করতো৷ কিন্তু সেই দোকানের আয় দিয়া কোনো মতে খাইয়া পইড়া চলা গেলেও, পুঁজি বলতে কিছু ছিল না৷''

পুঁজি বলতেই কিছু ছিলো না৷ তাই, ছিলো না কোনো শখ-আহ্লাদও৷

নিজের সেই অবস্থার কথা বলতে গিয়ে আসমা আবার নিজেই যোগ করেন, ‘‘বলেন, এইভাবে কি দিন চলে?''

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশে তোলা ফাইল ছবিছবি: AP

হয়তো দিন চলে না বলেই, টানাটানির সেই সংসারটিকে নিজের হাতেই টেনে তুলেছেন আসমা৷

একটি মাত্র নার্সারিকে পুঁজি করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি৷ বার্ক নামের স্থানীয় একটি এনজিও থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আসমা শুরু করেন তার ব্যাবসা৷ ক্রমে ক্রমেই বেড়েছে সেই ব্যাবসার প্রসার৷

সেই নার্সারির আয় দিয়েই বাড়ির জায়গা কিনেছেন৷ কিনেছেন ফসলি জমিও৷ শুধু তাই নয়, আজ আসমার নার্সারিতেই কাজ করেন একজন সার্বক্ষণিক শ্রমিক৷ সেই শ্রমিকের বেতনও মাসে ছয় হাজার টাকা৷

দিনবদলের এই গল্পটাকে আসমা বললেন এভাবে, ‘‘আমাদের যখন এইরকম অর্থনৈতিক অবস্থা, পরে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে পরামর্শ করে ঠিক করলাম যে, আমি একটা নার্সারি দিবো৷ তার পর নার্সারি দেওনের জন্যে, এনজিও থেইকা ১০ হাজার টাকা ঋণ নিলাম৷ সেই যে ঋণ নিয়া আট বছর আগে নার্সারিটা শুরু করছিলাম, এখন এইখান থাইকা প্রতিমাসে খাওয়া-পড়ার খরচ বাদেও আরো ১০-১৫ হাজার টাকা আমার হাতে থাকে৷''

হাতে জমা সেই টাকা দিয়েই সাভারে বাড়ির জন্য একটা জায়গা কিনেছেন আসমা৷ যশোরে তার বাবার বাড়ির কাছে কিনেছে ফসলি জমি৷ আসমা আরো জানায়, সেই জমানো টাকা দিয়েই ‘‘এ বছরই বাড়ির কাজটাও ধরবো৷''

নারীর স্বাবলম্বিতা ও দেশের দারিদ্র্য বিমোচন. . .

আসমার মতো এমন লাখ লাখ মেয়ে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে৷ যাদের কেউ হয়তো স্থানীয় কোনো বেসরকারী সংস্থায় নিয়েছে কোনো কর্মের প্রশিক্ষণ৷ কেউ হয়তো পুঁজি বাড়াতে আসমার মতোই নিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ৷ আবার কেউ কেউ আছে, যারা ঋণ ও প্রশিক্ষণ দুটোই নিয়েছেন৷

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরে গত ২২শে মার্চ বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ এখানে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে দরিদ্রের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমেছে৷

দারিদ্র্য বিমোচনে এই অগ্রগতির ক্ষেত্রে নারীদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমাদ৷

‘‘বাংলাদেশের গ্রামের নারীরা এখন অনেক সচেতন৷ তারা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে৷ তারা পশুপালন থেকে শুরু করে ধানের চাতালেরও মালিক হচ্ছে এখন৷ আর এভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে তারা৷''

নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ভূমিকাই প্রধান বলেও মনে করছেন তিনি৷

ড. খলিকুজ্জামানের ভাষায়, ‘‘ নারীদের প্রশিক্ষণ দেবার পেছনে, তাদেরকে ক্ষুদ্রঋণ দেবার পেছনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটা বড় ভূমিকা আছে৷ পাশাপাশি, সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজও একটা ভূমিকা রাখছে৷''

গ্রামে সাধারণত ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রবল৷ নারীরা অর্থনৈতিক আয়-উপার্জনের কাজ করবে, এই বিষয়টিকে আগে গ্রহণযোগ্য মনে করা হতো না৷ কিন্তু সমাজের এই মানসিকতা পরিবর্তনের পেছনেও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷

২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ মাত্রায়৷ সে লক্ষ্য অর্জনেই একযোগে কাজ করছে জাতিসংঘভুক্ত ১৯৩টি দেশ৷

জাতিসংঘের সেই সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার৷ আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদান রেখেছে নারী৷ তাই, দেশকে আরো উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে, নারীদেরকে শিক্ষিত করে কাজের সুযোগ করে দেবার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ