ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম, ‘‘ফতোয়া হেলায় উড়িয়ে ঘর বাঁধল দুই মেয়ে৷'' বাংলাদেশে দুই তরুণীর মধ্যকার ভালোবাসার সম্পর্ককে এভাবেই শিরোনামে তুলে এনেছে পত্রিকাটি৷ ২১ বছর বয়সি শিক্ষিকা সানজিদা আর তাঁর ছাত্রী, ১৬ বছর বয়সি শ্রাবন্তী রায়ের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ বাংলা ব্লগ এবং ফেসবুকে এ নিয়ে লিখেছেন অনেকে৷
সমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের৷ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিস্তারিত দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিতে সরকারি পরিকল্পনার সমর্থনে গত রবিবার প্যারিসে হাজির হন লাখো মানুষ৷ কিছুদিন আগে অবশ্য সেখানে সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে লাখো মানুষ সমবেত হয়৷ এই ইস্যু নিয়ে বেশ উত্তপ্ত সেদেশ৷ বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ এবং ডানপন্থি বিরোধী দল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকে এই আইন করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে৷
ছবি: Reutersইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি মিশ্র৷ নেদারল্যান্ডস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ২০০১ সালের এপ্রিল থেকে সেদেশে এই আইন কার্যকর আছে৷
ছবি: AP২০০৩ সালের জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ বৈধ করা হয়৷ প্রথম দিকে সেদেশে বিদেশিদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহে খানিকটা জটিলতা ছিল৷ কিন্তু ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে সকল দেশের নাগরিকদের এই সুবিধা দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে যে কোনো একজনকে কমপক্ষে তিন মাস বেলজিয়ামে থাকতে হবে৷ ২০০৬ সাল থেকে সমকামী পুরুষ এবং নারীকে সন্তান দত্তক নেওয়ার সুবিধাও প্রদান করা হয় বেলজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/dpaখোসে লুইস রোদ্রিগেজ সাপাতেরো-র সমাজতন্ত্রী সরকারের মেয়াদকালে পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে স্পেন সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ করে৷ ফ্রান্সের মতো সেদেশেও ক্যাথলিকদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের জুলাই মাসে স্পেনে এ ধরনের বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ২০১০ সাল থেকে পর্তুগালও একই পথের পথিক হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaআইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইওয়াহানা সিগুরডোটির এবং তাঁর সঙ্গিনী ইওহিনা লিওসডোটির সমকামীদের বিয়ে বৈধ ঘোষণার পর প্রথমেই সেই সুযোগ নিয়েছেন৷ সিগুরডোটির হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম মেয়ে সমকামী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর ২০১০ সালে সেদেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হলে সঙ্গিনী লিওসডোটিরকে বিয়ে করেন সিগুরডোটির৷
ছবি: Getty Imagesসমকামীদের অধিকারের বিষয়ে আইনিভাবেই সচেতন স্ক্যান্ডিনেভিয়া৷ সুইডেনে ২০০৯ সালে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ করা হয়৷ পুরুষ এবং নারী সমকামী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে সেদেশে কোনো বাধা নেই৷ নরওয়ে ২০০৮ সালে এ সংক্রান্ত এক বিল অনুমোদন করেছে৷ ২০১২ সালের গ্রীষ্ম থেকে ডেনমার্কেও সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ ফিনল্যান্ডও এ ধরনের বিয়েকে বৈধতা প্রদানের পথে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaএই ছবিটি গত শতকের ৮০-র দশকের৷ এতে দেখা যাচ্ছে, সমকামীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল মানুষ৷ এরপর অনেকদিন পেরিয়েছে৷ যুক্তরাজ্যে সমলিঙ্গের পুরুষ বা নারী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে রয়েছে এই প্রথা৷ তবে চার্চে সমলিঙ্গের নারী বা পুরুষ বিয়ে করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP২০০১ সাল থেকে সমলিঙ্গের যুগলের রেজিস্ট্রেশন বৈধ করেছে জার্মানি৷ এই প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে বিয়ের সুযোগ সুবিধার অনেকটাই পান সমকামীরা৷ কিন্তু যৌথভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া কিংবা পূর্ণ আয়কর সুবিধা এখনো পায়না সমকামী দম্পতিরা৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৬৬ শতাংশ জনসাধারণই সমকামীদের বিয়ের পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpaতবে ইউরোপের পর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেখানকার সমাজে সমকামী নারী বা পুরুষকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়না৷ লিথুনিয়া, পোল্যান্ডের মতো লাটভিয়াতেও বিষমকামী দম্পতির মতো সমান অধিকার পায় না সমকামী দম্পতি৷ পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ জনগণই সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে৷
ছবি: Reutersরাশিয়ার সংসদ সম্প্রতি শিশুদের মাঝে ‘সমকামীদের প্রচারণা’ নিষিদ্ধ করেছে৷ আর আগেই অবশ্য সেন্ট পিটার্সবুর্গের (ছবিতে) মতো বিভিন্ন শহরে সমকামিতাকে উৎসাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নতুন এই আইনের ফলে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক প্রচারণা রাশিয়ায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আয়োজকদের জরিমানা হবে৷ বলাবাহুল্য, রাশিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ নয়৷
ছবি: Dmitry Lovetsky/AP/dapd
কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে পারভেজ আলম লিখেছেন, ‘‘অপরাধী সাংবাদিক ও পুলিশের ছবি চাই৷'' এই ব্লগার মনে করেন, গণমাধ্যমে আলোচিত দুই তরুণীর ছবি প্রকাশ করা উচিত হয়নি৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ভুল করুক, ঠিক করুক, এমন কোনো অপরাধ তারা করে নাই, যার জন্যে এইভাবে এইরকম একটা ছবি সাংবাদিকরা পত্রিকার পাতায় ছাপাতে পারে৷''
একই ব্লগ সাইটে আশাফ আনিসের লেখার শিরোনাম, ‘‘আসেন৷ সমকামিতা কার কাছে কেমন, যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করেন৷ একটি উন্মুক্ত আলোচনাধর্মী পোস্ট৷'' এই ব্লগারের আলোচনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাইফুল বাতেন টিটো লিখেছেন, ‘‘আমি সমকামিতা যেমন পছন্দ করিনা, আবার তাদের ঘৃণাও করিনা৷ কিন্তু এখানে সানজিদা মেয়েটা তো অনার্স পড়ুয়া একটা মেয়ে৷ সে এক কিশোরীর সাথে এমনটা না করলেও পারতো৷''
আমার ব্লগ ডটকমে ব্লগার রিনভী তুষার এ বিষয়ে একটি প্রশ্ন রেখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সমকাম কি আইনত দন্ডনীয় এই দেশে?'' তুষার লিখেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রী আবাসিক হল, ক্যাডেট কলেজ, মাদ্রাসা, এমনকি মিডিয়ার অনেক সেলিব্রেটির (এখানে বাংলাদেশকে বোঝানো হচ্ছে) মধ্যেও সমকাম বহু আগে থেকে বেশ ভালোভাবেই শিকড় গেড়ে ছিলো৷ এখনো আছে৷''
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ডজয়ী সদ্য কারামুক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন৷ শিরোনাম, ‘‘সমকামিতা প্রসঙ্গে : সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারে আবদ্ধ মানবাধিকার৷'' এই ব্লগার সমকামিতা নিয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ তাঁর এই নিবন্ধের মন্তব্যের ঘরে মোহাম্মদ মুশফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘আমার মনে হয় প্রত্যেক সমকামীকে (নিশ্চিত হওয়ার পর সে সমকামী) কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত৷''
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী