বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৩তম৷ আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম৷ দৃশ্যতই দুর্নীতিতে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়েছে৷ বিশ্লেষকদের কথায়, দুর্নীতি না কমার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বুধবার সারা বিশ্বে একযোগে দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৫ প্রকাশ করে৷ বাংলাদেশে তা প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)৷ তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এক নম্বরে আছে যৌথভাবে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে আফগানিস্তান ও সুদান৷ অন্যদিকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক৷
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান৷ আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের সব দেশই বাংলাদেশের তুলনায় কম দুর্নীতিগ্রস্ত৷
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবি-র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের সঙ্গে দেখতে হবে যে দুর্নীতি কমছে কিনা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা৷ গণতন্ত্রের বিনিময়ে উন্নয়ন কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে৷''
টিআইবি-র ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘‘যদি সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হয়, প্রশাসনযন্ত্র সংসদের জবাবদিহির মধ্যে থাকে, বিরোধী দল কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে অবস্থার আরও উন্নতি হতে পারে৷''
টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কোরে বাংলাদেশ আগেরবারের মত ১০০-এর মধ্যে ২৫ পেয়েছে৷ আর স্কোর অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের স্কোর৷ অবস্থানের দিক থেকেও অবনতি ঘটেছে৷ তাই সহজেই বলা চলে দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে৷''
তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমত কাজ করছে না৷ দুর্নীতিদমন কমিশন বড় দুর্নীতিবাজদের থরতে পারছে না৷ ফলে দুর্নীতি কমছে না৷ তাছাড়া সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধে অঙ্গীকার থাকলেও তা কার্যকর করতে দৃশ্যমান কোনো ‘ম্যাকানিজম' বা তৎপরতা নেই৷ সংসদীয় কমিটিগুলোও কার্যকরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে না৷ তাই দুর্নীতি কমানোর সুযোগ থাকলেও তা হচ্ছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি যদি অর্ধেকে নামনো যেত, তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার আরো দুই থেকে আড়াই শতাংশ বেশি হতো৷ দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণভাবে যার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর৷''
প্রসঙ্গত, টিআই বাংলাদেশের দুর্নীতি জরিপে সাতটি জরিপ সূত্র ব্যবহার করেছে৷ জরিপগুলো হলো – বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট ২০১৪, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে ২০১৫, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সপরমেশন ইনডেক্স ২০১৬, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ‘রুল অব ল' ইনডেক্স ২০১৫, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড ২০১৫, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস ২০১৫ এবং গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস ২০১৪-এর রিপোর্ট৷
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷